মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়াই কাল হলো বাবুলের

ba-md2016ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী থানা এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পারুলের মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাবুল মাতুব্বর। দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকাকালীন বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। গত ৬ মাস আগে মিরপুরের ডিসিকে লিখিত মুচলেকা দিয়ে মাদক ছেড়ে চায়ের দোকান দেন বাবুল। কিন্তু কপালে সইলো না। মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ায় শেষ পর্যন্ত বাবুলকে প্রাণ দিতে হলো।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবুল ছিল পারুলের মাদক স্পটের ডান হাত। মাদক ব্যবসা বাবদ পারুলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতো শাহ আলী থানা পুলিশ। কিন্তু বাবুল মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ায় পারুলের ব্যবসায় মন্দা আসে। একই সঙ্গে মাসোহারা থেকে বঞ্চিত হয় পুলিশ। আর সে কারণেই পারুল ও পুলিশের যোগ সাজশে প্রাণ হারাতে হয় বাবুলকে। প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের পরিবারের বক্তব্যে উঠে এসেছে বাবুল হত্যায় পুলিশ সদস্য ও সোর্সের জড়িত থাকার কথা। অন্তরালে মদদে ছিল মাদক ব্যবসায়ী পারুল।

তবে শাহ আলী থানা পুলিশ বলছে, পুলিশ নয়, এ ঘটনার কারণ সোর্সের বাড়াবাড়ি। সোর্সের কারণেই বাবুল আগুনে দগ্ধ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও ভুক্তভোগী স্থানীয়দের বক্তব্যে এসআই রবিনের নাম আসলেও পুলিশ তাকে প্রত্যাহার করেনি।

প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন- শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান, শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার, নিয়াজউদ্দিন মোল্লা, সহকারী এসআই জোগেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসীমউদ্দীন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হাসান সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকালের (বৃহস্পতিবার) অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় এই ৫ জন উক্ত এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে শাহ আলী থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত চা-দোকানি বাবুল মাতব্বর (৫০)-এর মেয়ে রোকসানা আক্তার (২৫)। মামলা নম্বর-৫।

মামলার আসামিরা হলেন- মাদক ব্যবসায়ী মোছা. পারুল (৪০), পুলিশের সোর্স দেলোয়ার হোসেন (৩২), মো. আইয়ুব আলী ও মো. রবিন (২৫), শঙ্কর (৩০), দুলাল হাওলাদার (৪০) এবং পারভীন।

মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন শাহ আলী থানার এসআই মোক্তারুজ্জামান। তিনি জানান, মাদক ব্যবসায়ী মোছা. পারুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা তদন্ত কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে ঘটনার পর বুধবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয় বাবুলকে। কিন্তু তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে মারা যান। বাবুলের মৃত্যুতে কাজীফুরি কিংশুক সিটি এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে আগুন লাগিয়ে স্লোগান দেয়।

মনিরুল ইসলাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার রাতে পুলিশের এসআই রবিন চন্দ্র মণ্ডল, এএসআই এমদাদুল হক ও কনস্টেবল জসীমসহ আরো ২ পুলিশ সদস্য গুদারাঘাট কাজীফুরি কিংশুক সিটির পাশেই বাবুলের চায়ের দোকানে আসে। এসে সোর্স দেলোয়ার ও আইয়ুব আলী বাবুলকে বলে, ‘শাহীন (ওসি) স্যার তোরে ডাকছে। চল থানায় যাইতে অইবো। আর তোর কাছে সারাদিনের কামাই যা হইছে দিয়া দে।’

এমন কথা শুনেই বাবুল বলেন, ‘আমার বোন শামসুন্নাহার আইবো। ওর লগে থানায় যামু। ও না আসা পর্যন্ত টাকা দিমু না, থানাতেও যামু না।’ এসময় এসআই রবিন মাইক্রোবাসে বসেই ছিলেন। দেলোয়ার কি যেন শুনে এসে উত্তেজিত হয়ে বলে তোকে যেতেই হবে এই বলে টানা হ্যাচরা শুরু। এ পর্যায়ে বাবুলকে ফেলে দেয়া হয় কেরোসিনের জ্বলন্ত চুলায়। কেরোসিন আগুনে দগ্ধ বাবুলকে রেখেই সোর্সদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এসআই রবিনসহ সবাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পুলিশের সোর্স দেলোয়ারকে হাতেনাতে ধরে সোপর্দ করা হলেও থানা পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ প্রতি মাসে পারুলের কাছ থেকে মাদক স্পট চালানো বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পায়। বাবুল মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কারণে পারুল তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। পারুলেই পুলিশ-সোর্স ব্যবহার করে বাবুলকে হত্যা করেছে।

নিহত বাবুলের মেয়ে রোকসানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা পারুলের মাদক স্পটে একসময় কাম করতো। ছ’মাস আগে ছাইড়া দিয়া এইহানে চায়ের দোকান দিছে। কিন্তু পারুল খ্যাপা ছিল। ওর স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর সন্দেহ ছিল আমার বাপের প্রতি। তাই পুলিশের সঙ্গে যোগ সাজশ কইরা মাইরা ফালাইলো। পুলিশ আইছিল চাঁদার জন্য। টাকা না পাইয়া আগুনে পুড়াইলো।’

বাবুলের স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘আমার স্বামী তো খারাপ কাম ছাইড়া দিয়া ভাল হইয়া গেছিল। তাও সইলো না। মাদক ছাইড়া দেওনের কারণে ওরা সবাই মিল্লা মাইরা ফালাইও। আমি এহন কই যামু?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল বলেন, ‘পুলিশ সোর্স এই কাজ করেছে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মিরপুর বিভাগে পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. কাইয়ুমুজ্জামানের বক্তব্য মেলে নি।