ফুটপাত সিন্ডিকটের মাসে কামাই অর্ধকোটি টাকা

Sylhet Footpathডেস্ক রিপোর্টঃ একটি সমন্বিত সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে সিলেট মহনগরীর ফুটপাত। তাদের সঙ্গে আছে মধ্যস্বত্বভোগী আরেক সিন্ডিকেট। এই দুই ক্যাটগরিতে চাঁদা তোলা হচ্ছে হকারদের কাছ থেকে। মালিকানায় নেয়া হচ্ছে পজিশন। কেউ সেই পজিশন দ্বিতীয় পক্ষের কাছে ভাড়াও দিচ্ছে। ভাড়া বাদে দৈনিক খাজনাও দিচ্ছেন প্রায় সবাই! সিলেট নগরীর ফুটপাত সিন্ডিকেট দুনিয়ায় এ চাঁদার নাম ‘লাইন’। সমন্বিত সিন্ডিকেটে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকটি গ্রুপের নেতা। আর প্রতিদিন ‘লাইন’ আদায় করে পুলিশ। কখনও পোশাকে কখনও সাদা পোশাকে। একেকটি এলাকায় একেকজন গিয়ে চাদা তুলে আনেন।
এভাবেই সিলেটের ফুটপাতকে অবৈধ ব্যবহার করে কাড়ি কাড়ি অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন কেউ কেউ। বিনাপূঁজিতে সিন্ডিকেটের একেকজন মাসে আয় করছেন লাখ টাকা। তবে সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা খুব বেশি নয়। অনুসন্ধানে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার মধ্যে থাকা দুই সিন্ডিকেটের মাসে আয় অন্তত অর্ধকোটি টাকা বলে জানা গেছে। এ প্রতিবেদকের কাছে স্থানীয় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, আগেও ফুটপাত থেকে পুলিশ চাদা নিত। পরে ক্ষমতাশীল দল এসে যোগ দেয়। এখন শক্তিশালী প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও পুলিশ সমন্বিত ভাবে চাদা তুলছে।

1এদেরই একটি অংশ হকারদের নামে সরকারি লালদিঘী লোপাট করে কোটি টাকার মালিক। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ফুটপাত ও নগরীর প্রশস্থ রাস্তা দখল করে নিয়েছেন। বিভিন্ন মার্কেটের দোকান কোটার মত তারা ফুটপাত ও সাবরেজিষ্ট্রি মাঠের জায়গা স্থায়ী লিজ দিয়েছেন ভাসমান দোকানীদের। দৈনিক চাঁদার শর্তে লীজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে গ্রহন করা হয়েছে এককালীন ১৫ হাজার থেকে নিয়ে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। জিন্দাবাজার ও বন্দর এলাকার কোন কোন পজিশন বিক্রি হয়েছে ১ লাখ টাকায়ও। স্থায়ী লীজ গ্রহীতারা আবার বেশ দামে অন্যদের কাছে দখল বিক্রিও করছেন। এক সময় সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তপক্ষের অঘোষিত অনুমোদনে লীজ দেয়া হয়েছিল নগরীর ফুটপাত ও রাস্তা। গত নির্বাচনে সিটি মেয়রের চেয়ার পাল্টে গেলে সবাই উচ্ছেদ হন। পরে নির্বাচিত মেয়র কারান্তরিণ হলে অভিভাবকহীন সিটির রাস্তা ও ফুটপাতে আবার দখলে নেয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কানাঘোষা আছে, পুলিশের পকেটে শক্ত লাথি মারায়ই খেসারত দিতে হয়েছে মেয়রকে! তবে এর কোন সত্যত নেই।
তবে অভিযোগ আছে, মেয়র কারাগারে যাবার কয়েকদিনের মাথায় আগের লীজগ্রহীতা ও তাদের স্থালাভিষিক্তরা পুরোদমে আবার রাজত্ব ফিরে পান। পুলিশও আর তাদের বাধা দেয়ানি। এমনকি সিটি করপোরেশনের কেউ এসে আর নাকও গলায়নি! বর্তমানে রাতদিন ২৪ঘন্টা দখলে রাখা হচ্ছে ফুটপাত। রাত ১টায় পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিযুক্ত পাহারাদারদের জিম্মায় রেখে যান দোকান ও পসরা। এভাবে নজিরবিহীন ভাবে চলছে ফুটপাত দখল করে অবৈধ ব্যবসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সুরমা পয়েন্ট ও রেজিষ্ট্রি মাঠ থেকে শুরু করে চৌহাট্টা, আম্বরখানা, ভিআইপি রোড রিকাবীবাজার পর্যন্ত এবং নগর ভবনের সামন থেকে শুরু করে হেড পোস্ট অফিস ও ধোপাদিঘী মোড় পর্যন্ত এলাকা জুড়ে ফুটপাতে প্রায় ৩ হাজার দোকান স্থায়ী লিজ দেয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এসব দোকান থেকে আবার দৈনিক ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হারে আদায় করা হয় ‘লাইন’-এর চাঁদা।
ফুটপাত ছাড়াও রাস্তার কিনারাও দখলে নিয়ে গেছে ওই সিন্ডিকেট। দুই পাশের রোজানা বসানো কয়েক হাজার ভাসমান দোকান। রাস্তার এসব খন্ডকালনি দোকানীদের কাছ থেকে প্রতিদিন দৈনিক ২০ থেকে ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এভাবে দৈনিক রাখ টাকা আদায় হয়ে থাকে ফুুটপাত ও রাস্তা থেকে। রাস্তায় দৈনিক চাঁদা আদায়ের জন্য পুলিশ ছাড়াও রয়েছে নির্দিষ্ট কালেক্টর। বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও রেজিষ্টি মাঠ প্রভৃতি এলাকার কালেক্টর হচ্ছেন শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয়ের জনৈক সফিক। চৌহাট্টা আম্বরখানা ও রিকাবীবাজার এলাকার কালেক্টর হচ্ছেন শ্রমিক নেতা নামধারী সত্তার ও তার সহযোগী কয়েকজন। এ সব টাকা তুলে ভাগ বাঠোয়ারা হয় সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে। যেসব এলাকায় পুলিশ টাকা তুলে না সেখানকার পুলিশ মাসিক হারে তাদের কাছ থেকে টাকা পেয়ে থাকে। বন্দরবাজার, লামাবাজার, ও আম্বরখানা পুলিশ ফাড়িকে দৈনিক ও মসিক হারে টাকা দিয়ে ফুটপাত ও রাস্তার নজরানা এবং দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয়। অভিযোগ আছে, ওই সিন্ডিকেট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে মাসিক দেড়লাখ টাকা দিয়ে ফুটপাত ও রাস্তার অবৈধ বানিজ্য করছে।
সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর ফুটপাত ও রাস্তা বাণিজ্য সিন্ডিকেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের আমল থেকে গড়ে ওঠে। সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে নাম রয়েছে সাবেক শ্রমিকদল নেতা ও বর্তমান সিলেট জেলা শ্রমিক লীগের এক শীর্ষ নেতার। আর সাবেক যুবদল নেতা ও বর্তমান হকার দল নেতা রকিব হচ্ছেন কালেক্টর সমন্বয়ক। তবে রকিব চাঁদার কথা অস্বীকার করেন। বলেন, আমি হকারদের নেতা, আমার দোকান আছে। তাই হকারদের শেল্টার ও স্বার্থ রক্ষাই আমার কর্তব্য। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নজরুল ইসলামও ফুটপাত ও রাস্তার নামে টাকা গ্রহণের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন।