আজকের সংকট এবং যন্ত্রণা থেকে নতুন সূর্য আসবে

নিউইয়র্কে এক সেমিনারে ওসমান ফারুক

সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন ওসমান ফারুক। ছবি- এনা।
সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন ওসমান ফারুক। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: পাকিস্তানী জান্তা আইয়ুব- এয়াহিয়া এবং বাংলাদেশের স্বৈরশাসক এরশাদ জোর করে, গুলি চালিয়ে, নির্যাতন, গ্রেফতার এবং গুম, অপহরণ করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, বর্তমান জুলুমবাদ এবং অবৈধ ও ভুয়া সরকার শেখ হাসিনাও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার যে ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। মানুুষের আন্দোলনের মুখেই আইয়ুব- এয়াহিয়া এবং এরশাদের মত শেখ হাসিনাও জনগণের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন। গত ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্ট রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ওসমান ফারুক এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এন্ড রাইটার্স এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা আয়োজিত বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের দিক নির্দেশনা বিষয়ক এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক। সংগঠনের সভাপতি লংআইল্যান্ড ইউনির্ভার্সিটির প্রফেসর ড. শওকত আলীর সভাপতিত্বে ও পরিচালনায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লংআইল্যান্ড ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর মাহফুজ আর চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা মিনা ফারহা ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন।
সেমিনারে ওসমান ফারুক বলেন, রাজনীতি করার আগে আমিও শিক্ষকতা করেছি, বিশ্বব্যাংকে চাকরি করেছি। রাজনীতি করতে এসে দেখেছি শিক্ষকতা জীবনে আমরা যা বলেছি বাস্তবে তার মিল নেই। তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশ কোন সংকটে পড়েছে তখন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদদের দোষারূপ করেন। আবার অনেকে জাতিকে বিভ্রান্ত করেন। তিনি বলেন, এই সব বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষকরা কখনোই জাতির সংকটের সমাধান করতে পারেন না। সমাধান শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদেরই করতে হয়। বাংলাদেশের এখন ক্রান্তিকাল চলছে। নব্য স্বৈরচার এবং বাকশালী সরকার জাতিকে মহাসংকটে ফেলে দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম- নির্যাতন এবং গ্রেফতার করছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়ার কারণেই বুঝতে পারছেন না, গ্রেফতার, নির্যাতন এবং মানুষ হত্যা করে আইয়ুব- এয়াহিয়া এবং এরশাদও বাংলাদেশে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, শেখ হাসিনাও পারবেন না। বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলনে রাজপথ জ্বলছে। এই আন্দোলনে শেখ হাসিনাও জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন একজন মা যখন গর্ভবতী হয় তখন তার খুব কষ্ট হয়, নানা সংকট দেখা দেয়। এই সংকট এবং কষ্টের পরই পৃথিবী আলোকিত করে আনন্দের বার্তা নিয়ে সন্তান আসে। আমি আজকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আমাদের আন্দোলনে মানুষ যে কষ্ট করছে, এই কষ্টের অবসান হবে এবং নতুন এই কষ্ট এবং সংকট থেকে নতুন সূর্য আসবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করছেন না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছেন। দেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন করছেন, মানুষের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন, মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন। বেগম খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় যেতে চাইতেন তাহলে মঈন- ফখরুদ্দিন এবং এরশাদের সাথে সমঝোতা করে ক্ষমতায় যেতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। করেছেন শেখ হাসিনা কারণ তার ক্ষমতায় লোভ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারি সরকার এবং তার লোকজন বলছে বিএনপি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করছে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই বিএনপি সন্ত্রাস করছে না বিএনপি আদর্শিক আন্দোলন করছে। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত এবং দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
লেখিকা মিনা ফারহা বলেন, আমরা যারা প্রবাসে আছি আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। এ পর্যন্ত যত আন্দোলন শুরু হয়েছে সবই প্রবাস থেকে শুরু হয়েছিলো। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে আমি কষ্টে ছিলাম, এখন আওয়ামী লীগের শাসনামলেও আমার সম্পত্তি ক্রোক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের গণতন্ত্র বোঝাই ট্রাক থেকে বের হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বঙ্গোপসাগরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদের প্রতি চোখ পড়েছে জাপান, চীন, রাশিয়া এবং ভারতের। সেই জন্যই তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে, সরকারকে ঋণ দিচ্ছে। তাদের স্বার্থ এবং সেই ঋণ সুদ আসলসহ আদায় করতে হলে শেখ হাসিনাকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখতে হবে। ক্ষমতায় রাখতে গেলেই আমাদের ৫ জানুয়ারির মত আরো নির্বাচন দেখতে হবে। আমেরিকার চাপে জাতিসংঘ কিছু করতে গেলে রাশিয়া এবং চীন ভেটো দেবে। সেই শক্তির জোরেই আওয়ামী বলে তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। অবৈধ সরকারকে সরাতে না পারলে বাংলাদেশও চীন এবং রাশিয়ার মত বিরোধী দলহীন দেশে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিলো প্রশ্ন উত্তর পর্ব। সেমিনারের সহযোগিতায় ছিলেন বিএনপি নেতা আকতার হোসেন বাদল ও টেক্সাট বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ বশির। স্বাগক বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আবু তাহের। সেমিনারের ১৩ প্রস্তাব পাশ করা হয়। যা সরকার বরাবরে প্রেরণ করা হবে।