খালেদা-বার্নিকাটের দুই ঘণ্টা বৈঠক

khaleda-barnikatডেস্ক রিপোর্টঃ দেশের সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পক্ষে সাংবাদিকদের দেয়া একটি নোটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই মূলত কথা হয়। বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পক্ষে দেয়া এক লিখিত নোটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়ার মতামত ও ভাবনা জানতে পারার সুযোগকে সাধুবাদ জানানো হয়। বলা হয়, গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার দেশটির উন্নয়নে একটি প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছে। সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত তুলে ধরতে আহ্বান জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে বিএনপি’র তরফে ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা হয়েছে। দেশে যে গণতন্ত্রবিহীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেই বিষয়টি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করা হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার ভেতরে ওঠে এসেছে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও সর্বাগ্রে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি। আপনারা জানেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর দুই বছর গত হয়েছে। ওই নির্বাচনে কিভাবে ভোটবিহীন নির্বাচনের পর একটি সংসদ গঠিত হয়েছে। একটি সরকারও গঠিত হয়েছে। সেখানে কোন জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ড. মঈন খান বলেন, আজকের দিনে অর্থনীতির মতো, রাজনীতিরও বিশ্বায়ন হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ হলেও ভূরাজনৈতিক বিষয়টি ছোট নয়। যে কারণে বাংলাদেশে কি ঘটছে না ঘটছে সেটা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর কাছেও চিন্তার বিষয়। দেশ আজ গণতন্ত্রবিহীন পরিস্থিতিতে রয়েছে। তাই বৈঠকে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত বৈঠক করি। তারই অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলো কি জানতে চাইলে ড. মঈন খান বলেন, অতীতের শিক্ষা নেয়ার বিষয়টি অবশ্যই গণতন্ত্রের শিক্ষা। পৃথিবীতে কোন দেশই উন্নতি করতে পারে না সেখানে যদি গণতন্ত্র না থাকে। কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, উন্নয়ন কখনই টেকসই হবে না যদি গণতন্ত্র না থাকে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও তাই। দেশে একদলীয় শাসন চলছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবে কি দেবে না সেটা সরকারের বিষয়। আমরা বলেছি, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। সে নির্বাচনে ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। সেখানে ১৫৪ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। ওই নির্বাচন যত দ্রুত হবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ অংশ নেন। এদিকে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কৃষক দলের নেতারা।