কোরিয়াতে বাংলাদেশী রিফিউজি কাম্য নয় : রাষ্ট্রদূত

Ambassador talks on Bangladeshi Refugies in KOREA - 02

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : দক্ষিণ কোরিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের একটি বড় অংশ কর্তৃক মিথ্যা অজুহাতে ‘রিফিউজি স্টেটাস’ নেবার আবেদনের হিড়িক দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। রাজধানী সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে দায়িত্বে আছেন তিনি। বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় কোরিয়াতে বাংলাদেশী নাগরিকদের ঢালাওভাবে ‘ভূয়া রাজনৈতিক আশ্রয়’ প্রার্থনা কোনভাবেই কাম্য নয় বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
দক্ষিণ কোরিয়াতে যোগ দেয়ার আগে তুরষ্কের রাজধানী আংকারাতে বাংলাদেশ দূতাবাসে টানা সাড়ে ৪ বছর দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন পেশাদার এই কূটনীতিক। কোরিয়াতে বসবাসরত প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশীর মধ্যে হাজার খানেক বাংলাদেশী যথাসময়ে দেশে ফিরে না গিয়ে দেশটির অভ্যন্তরেই ‘উদ্বাস্তু’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় সৃষ্ট সংকট নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নেয়ার পর লক্ষ্য করেছি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী ইতিমধ্যে এখানে মিথ্যা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন এবং এখনও করছেন”।
রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান স্পষ্ট করেই বলেন, “কোরিয়াতে রিফিউজি স্টেটাস নেয়ার আইন আছে বলেই আমাদের দেশের লোকজন অনৈতিকভাবে সেই সুযোগ নেবে, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি কোরিয়ান অথরিটি মোটেও পজিটিভলি দেখছে না। কারণ তাঁরা খুব ভালো করে জানে যে, বাংলাদেশীরা ঢালাওভাবে এদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার মতো কোন পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে না। বাংলাদেশীদের এই টেন্ডেন্সিকে কোরিয়ানরা শুধু সন্দেহের চোখেই দেখছে না, একই সাথে এটা বড় ধরণের নেগেটিভ ইমেজ সৃষ্টি করেছে আমাদের দেশের জন্য তথা আমাদের শ্রমবাজারের জন্য”।
উল্লেখ করা যেতে পারে, কোরিয়ান সরকারের এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) স্কিমের আওতায় ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশী কর্মীরা ৪ বছর ১০ মাসের কাজের কন্ট্রাক্টে কোরিয়াতে আসছে। ইপিএস-এর বিধি মোতাবেক একই মালিকের অধীনে টানা কাজ করে বাংলাদেশে ফেরত গেলে নতুন করে ‘স্কিল টেস্ট’ ছাড়াই মাত্র ৩ মাসের কম সময়ের ব্যবধানে পুনরায় কোরিয়াতে ব্যাক করা যায়। অন্যদিকে বারে বারে কোম্পানি পরিবর্তন করলে বাংলাদেশে ফেরার পর নতুন করে পরীক্ষায় পাশ করার পাশাপাশি বছরখানেক বা আরো বেশি অপেক্ষা করতে হয় কোরিয়াতে ফিরতে।
থাকা-খাওয়া ফ্রি’র পাশাপাশি মাসে গড়পড়তায় ১৫শ’ থেকে ১৭/১৮শ’ ইউএস ডলার বেতন পাবার পরও গত ৭ বছরে আসা প্রায় ১৩ হাজার ইপিএস কর্মীর মাঝে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশী যথাসময়ে দেশে ফিরে না গিয়ে নিজেদেরকে ‘বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার’ মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কোরিয়াতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে, এখনও করছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজকের এই ‘ভূয়া রিফিউজি’ উক্ত ক্যাটাগরির বাংলাদেশীরা বিগত বছরগুলোতে মাসে গড়ে ১৫শ’ ইউএস ডলার সেভ করার পরও ১ থেকে দেড়শ’ ইউএস ডলার বেশি বেতনের লোভে একাধিকবার মালিক পরিবর্তন করেছিল। দেশে গেলে ফিরতে না পারার আশংকা থেকে তারা এখন ‘ভূয়া রিফিউজি’ হবার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে বারে বারে কোম্পানি পরিবর্তনের ফলে মালিকপক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর বেশ আগে থেকেই ‘যার পর নাই’ অসন্তুষ্ট এবং ইতিমধ্যে তারা বাংলাদেশের চাইতে অন্যান্য দেশকে ‘প্রায়োরিটি’ দিচ্ছে কর্মী নিয়োগ দেবার ক্ষেত্রে। শ্রমবাজারের দুয়ার কোরিয়াতে বাংলাদেশের জন্য ‘তালাবদ্ধ’ হবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে মূলত এভাবেই। চলমান এই সংকট উত্তরণে দূতাবাস আন্তরিক রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। বিভিন্ন দেশের কর্মীদের নিয়োগ দেবার বিষয়টি যেহেতু শতভাগ নির্ভর করে কোরিয়ান মালিকদের উপর এবং এক্ষেত্রে কোরিয়ান সরকারের তেমন কিছু করার থাকে না, তাই দেশটিতে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন শ্রমবাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশীদের ‘ভূয়া রিফিউজি’ হবার প্রবণতা বন্ধ করতে চায় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।