কাজির বাজার সেতু : বিনোদনপ্রেমীদের নতুন ঠিকানা

Kazirbazar Bridgeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নবনির্মিত কাজির বাজার সেতুটি এখন বিনোদনপ্রেমীদের নতুন এক ঠিকানা হয়ে গেছে। পরন্ত বিকেলে প্রকৃতি প্রেমীদের সমারোহ ঘটে এখন সেখানে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা সেতুটি নগরবাসীর বিনোদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাথে চলছে বাণিজ্যও। প্রায় অর্ধশত ফুচকা-চটপটির দোকান বসে এই সেতুতে। তাদের ঘিরেই কাজির বাজার সেতুতে জমে ওঠে বিনোদনপ্রেমীদের বিকেল-সন্ধ্যা। ঈদুল আজহার ছুটিতেও সেতুত ছিল বিনোদনপ্রেমীদের বাড়তি ভিড়।
ইট পাথরের এই ব্যস্ত শহরে ক্লান্তির অবসানে কাজির বাজার সেতু হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কোন সময়েই ঘুরে আসতে পারেন কাজির বাজার সেতু। সৌন্দর্য বর্ধনের অনেক কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবুও তা বাধা হতে পারেনি নগরীর বিনোদন প্রেমীদের কাছে। নগরীর নতুন এই বিনোদন কেন্দ্রে গত শুক্রবার ছুটির দিনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। শেষ বিকেলে দেখা যায় সেতুর উপর দাড়িয়ে শত শত মানুষ সুরমা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। নির্মল বাতাস আর অপরুপ সৌন্দর্য যেন সারা সপ্তাহের ব্যস্তার ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে নিচ্ছে। সন্ধ্যার পরের চিত্রটা যেন এক অন্যরকম। ছোট ছোট ফুচকার দোকান, টি স্টল আর নয়নাভিরাম আলো দর্শনার্থীদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেয়। সেতুর এক পাড় থেকে অন্য পাড় দেখলে মনে হয় যেন ঐ এলাকায় আলোর মিছিল চলছে। এছাড়া দীর্ঘ দশ বছর পর এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দু পারের মানুষের যেন ষ¦স্তির ছায়া নেমে এসেছে।
কাজির বাজার এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, এ এলাকায় তিনি প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ আছেন তার এলাকার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হচ্ছে এই সেতু। নগরীর তীব্র যানজট নিরসনে এই সেতুর তুলনা হয়না। এছাড়া প্রতি শুক্রবারে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা তরুন তরুনীদের দলবদ্ধ আড্ডা জমান অনেকে। এযেন বিনোদনের কোলাহল এক স্থান। ছেলে,বুড়ো, যুবক-যুবতী সহ নানা বয়সের তরুন তরুনীরা আনন্দকে ভাগাভাগী করে নেয়ার জন্য ব্যস্ত। এমন কয়েকজন বিনোদন প্রেমী বন্ধু গোলাপগঞ্জের হোসাইন আহমদ সুমন, ছড়ার পাড় এলাকার শারমিনা মঞ্জুর ও গোবিন্দগঞ্জের রাজিব আহমদ জানান, ইট পাথরের ব্যস্ত শহরে পড়ালেখার ব্যস্তার ফাকে নির্মল স্বচ্ছ বাতাসে আড্ডা জমাতে তারা এখানে এসেছেন। এছাড়া কাজির বাজার সেতু তাদের জন্য বিনোদনের অন্যতম উল্লেখযেগ্য একটি স্থান। এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর ওপর কাজির বাজার সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
১৮ মাসে (২০০৭-০৮ অর্থবছরে) তা সম্পন্নের কথা থাকলেও সময় লেগেছে ১০ বছর। সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্যে স্টিল আর্চসহ (খুঁটি) বোরড পাইল ফাউন্ডেশনের ওপর প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সেতুর দৈর্ঘ ৩৬৬ মিটার প্রস্ত ১৯ মিটার। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় কাজ বন্ধ রাখা হয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর প্রকল্প সংশোধন করে। ২০১২ সালে পুনরায় সেতুর কাজ শুরু হয়। স্টিলের আর্চ ছাড়াই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮৯ কোটি টাকা।
ঢাকার মেসার্স কামাল অ্যাসোসিয়েটস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নকশা সংশোধন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজিরবাজার সেতুতে ১০০ ফুট করে চারটি স্টিলের আর্চ নির্মাণের কথা ছিল। এ কাজের অংশ হিসেবে সেতুর পাইলিংয়ে অতিরিক্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু বিপুল এ অর্থ ব্যয়ের পরও আর্চ সংযুক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে সওজের কর্মকর্তারা জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ৭০০ টনের আর্চ লাগানোর কথা। কিন্তু এখন ৯০০ টন ওজনের আর্চ লাগাতে হবে। সেতুর ওজন বেড়ে যাবে বলে তা লাগানো হয়নি।