ক্লাস-পরীক্ষাহীন শাবির ৩৪দিন

sustমোজাহিদুল ইসলাম টিটু, শাবি : ক্যাম্পাস খোলার ৩৪দিন পার হয়ে গেল। নেই ক্লাস পরীক্ষা। ভাইভা নামক ভয়ের চাপও নেই শিক্ষার্থীদের। এই অচলাবস্থা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি বিভাগের অধিকাংশেই। কয়েকটি ব্যাচে ১/২টি ক্লাস চালু রেখে ঢিমেতালে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি বিভাগ। সারাদেশে হরতাল-অবরোধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখতে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হয়ে চরম সেশনজটে পড়ছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ নভেম্বর শাবি শাখা ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ক্যাম্পাস টানা ৫৮দিন বন্ধ থাকে। পরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও সচল হয়নি অচল হয়ে থাকা ক্যাম্পাস। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের টানা হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১/২টি করে কয়েকটি ব্যাচে ক্লাস চালু রাখলেও শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে চলমান হরতাল ও অবরোধের মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৮টি বিভাগ এবং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদের ১টি বিভাগ তাদের একাডেমিক কার্যক্রম সচল করতে সক্ষম হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি বিভাগগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে সহিংসতার আশংকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো ক্যাম্পাস থেকে সিলেট নগরীতে যেতে পারছেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাহিরে বিভিন্ন মেস ও বাসায় থাকায় তারা পিকেটারদের হামলার আশঙ্কায় অন্য যানবাহনে উঠে ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছেন। ধারাবাহিকভাবে হরতাল অবরোধে ক্যাম্পাস অচল থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে হল ও মেস ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এতে করে জাতীয় দিবসগুলোতে ক্যাম্পাসে স্বাড়ম্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করাও সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানিয়েছেন, শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী তাদের দ্বিতীয় বর্ষে থাকার কথা কিন্তু এখনো তারা প্রথম বর্ষেই আটকে আছেন। একই কথা ব্যক্ত করলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ হুসাইন।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ নবিউল আলম দিপু জানান, সারাদেশে চলমান সহিংসতায় মারাত্মকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের হতাশা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সহিংস কর্মসূচি থেকে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোভন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এই চলমান হরতাল অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা সচল করার জন্য উদ্যোগ নেয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল আওয়াল বিশ্বাস জানান, চলমান হরতাল অবরোধ শুধু দেশের অর্থনীতিই নয়, শিক্ষাব্যবস্থাকেও ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অতি শীঘ্রই রাজনৈতিক দলগুলোর বোধোদয় হওয়া উচিত।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভুইয়া জানান, ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৎপর রয়েছেন। কিন্তু সহিংসতায় অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদে পৌছতে সক্ষম হচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদেরও একই অবস্থা। যার কারণে ক্যাম্পাস সচল রাখতে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। তবে এই অবস্থা অচিরেই কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।