রাগিব-রাবেয়ার আইসিইউতে পিপড়ার কামড়ে নবজাতকের মৃত্যু!

Ragib-Rabeya-Medical-Collegনুরুল হক শিপুঃ নবজাতক পূত্রশিশুটির বয়স মাত্র ২ দিন। জন্মের পর তার নামও রাখা হয়নি। শনিবার নগরীর আম্বরখানা খাসদবীরের একটি বাসায় দুপুর ১২ টায় তার জন্ম হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় ভর্তি করা হয় নগরীর জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ তলার শিশু ওয়ার্ডে। সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হয় নবজাতক এই শিশুকে। পরদিন রোববার নবজাতকটিকে নেয়া হয় নিবিড় পর্যবেক্ষন কেন্দ্রে (আইসিইউ)। গতকাল সোমবার দুপুরে আইসিইউ ওয়ার্ডে পিপড়াঁর কামড় আর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলায় নবজাতকটি মারা যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আইসিইতে নবজাতকটিকে দেখতে তার ফুফু অ্যাডভোকেট নীলিমা ইয়াসমিন মুক্তা গতকাল বেলা ২টায় প্রবেশ করের। প্রথমে তাকে আইসিইউতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বারণ করা সত্বেও তিনি এসময় আইসইউতে প্রবেশ করেন। এ সময় দেখতে পান নবজাতকটির নাকের ওপর একটি পিপড়াঁ। সাথে সাথে দায়িত্ব পালনকারীদের তিনি বলেন, ওর নাকের ওপর পিপড়াঁ কেন? ওতো নড়ছে না। ওকি মারা গেছে? জবাবে তাকে বলা হয় আপনে এখানে কেন ঢুকলেন; বাহিরে যান। সাথে সাথে দায়িত্ব প্রাপ্তরা নবজাতকটির গাঁয়ের চাদরটি সরালে অ্যাডভোকেট মুক্তা দেখতে পান নবজাতকটির সমস্ত শরীরে পিপড়াঁ। ওর নাভীর নরমস্থানে ছোট ছোট লাল রঙের অসংখ্য পিপড়াঁ। এর কিছুক্ষণ পরই পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় নবজাতকটি আর বেঁচে নেই। অ্যাডভোকেট মুক্তা দাবি করেছেন, তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুনের ২ দিনের নবজাতক পুত্রসন্তানের মৃত্যু হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকা পিপড়াঁর কামড়ে আর কর্তব্যরতদের দায়িত্বের অবহেলায়। তিনি বলেন, নবজাতকটি বেলা ২টার দিকেই মারা গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারণ ওই সময় তার শরীরে অনেক পিপড়াঁ ছিল। ও নড়ছিল না। কিস্তু রাগীব রাবেয়া হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ওর মৃত্যুর সনদ দিয়েছেন বিকেল সোয়া ৫টায়। তারা সব কিছুতেই অবহেলা করেছেন। তাদের অবহেলায় আমার ভায়ের ছেলেকে হারাতে হল। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁর সাথে খারাপ ব্যবহারও করেছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মুক্তা। আইসিইউতে পিপড়াঁ দেখে তিনি হতবম্ব হয়েছেন, যোগ করেন অ্যাডভোকেট মুক্তা।
এ ঘটনায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছেন তিনি। কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগও করেছেন। কর্তৃপক্ষ ২ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। ওই ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব) নাজমুল ইসলাম, সিলেট জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক অশক পুরকায়েস্থ, সিলেটের ডাক পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস ও ৩০/৩৫ জন অ্যাডভোকেট নবজাতক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বৈঠক করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু জানান, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। আমাকে গতকাল বিকালে অ্যাডভোকেট নীলীমা ইয়াসমিন ফোন করে জানান, তার ভাইয়ের ছেলে মারা গেছে। আমিসহ ৪০/৪৫ জন অ্যাডভোকেট হাসপাতালে যাই। পরে মডিকেল কলেজের প্রধান অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব) নাজমুল ইসলাম সাথে বৈঠক করলে তিনি ওই বিভাগের সকলকে বহিস্কার করেন। অ্যাডভোকেট নীলিমা এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আগামীকাল বারের সভাপতি হিসেবে আমাকে ওই ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ বিয়য় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানানোর কথা রয়েছে।
রাতে যোগাযোগ করলে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব) নাজমুল ইসলাম জানান, নবজাতকটিকে মূমুর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। নিহত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব। এ ঘটনায় শিশু বিভাগের সবাইকে বহিস্কার করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সবাইকে বহিস্কার করার প্রশ্নই ওঠেনা। ২/৩ জন নার্সকে বহিস্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি ঘটন করা হবে। ব্যবস্থা কি নেয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে সিলেট জেলা বারের সভাপতিকেও জানানো হবে বলে জানান তিনি।