কোতোয়ালী থানার ওসি তদন্তসহ দু’জন ক্লোজড

civil-policeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সন্দেহভাজন আসামি অনিতা ভট্টাচার্যকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগের পর সিলেট কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এসআই হাসিনা আক্তার আঁখিকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে এক আদেশে ক্লোজড করা হয়। কোতোয়ালী থানা থেকে দুজনকে প্রত্যাহার করে এমএমপি হেড কোয়ার্টারে ক্লোজড করা হয়। যোগাযোগ করলে এসএমপির এডিসি (মিডিয়া) ও কোতোয়ালির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্লোজ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এসএমপির একটি সুত্র জানিয়েছে, কিশোর ভট্রাচার্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এসএমপির হেডকোয়ার্টারে ক্লোজ করা হয়েছে। তবে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগকারী অভিযোগ করেছেন, তবে এর মানে এই না যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা দায়ী। সঠিক তদন্তের পর বেড়িয়ে আসবে ঘটনার আসল রহস্য। পুলিশ অপরাধ করলে অবশ্যই তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ১৭ নভেম্বর মহানগর কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আলিসাকুল গ্রামের কিশোর ভট্টাচার্য অভিযোগে বলেন, গত ৭ নভেম্বর তার নিজ বাড়ি শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে, তাঁর ছেলে ও স্ত্রী, একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স অনিতাকে কোতোয়ালী থানার একটি অপহরণ মামলায় (জিআর ১৯৭/২০১৪ মামলা নং-২) সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে পুলিশ রাত ২ টার দিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানায় আনা হয়। পরদিন ৮ নভেম্বর তার ছেলেকে ও ৯ নভেম্বর সকালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একই দিনে সিলেটের বিচারিক হাকিম আদালতে তার স্ত্রী অনিতাকে হাজির করে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড চাইলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অমিতাকে রিমান্ডে আনার শুরু করা হয় অস্বাভাবিক শারীরিক নির্যাতন।
কিশোর অভিযোগে আরও বলেন, পুলিশ রিমান্ডে অনিতা ভট্টাচার্য্যকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ওই দিন বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি কোনো তথ্য পাননি। এরপর ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, থানার মহিলা এসআই আখি অনিতার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। ওসি তদন্ত মনিরুল প্রথমে আসামিকে গলার ভিতর পাইপ ঢুকিয়ে মদ খাওয়ান। তিনি তার পায়ের বুট দিয়ে অনিতার গলায় চাপ দিয়ে ধরেন। তিনি স্বীকারোক্তি আদায় করতে নানা অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দও করেন। মহিলা এসআই আখি অমিতার সঙ্গে একই আচরণ করেন। অনিতার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা অশ্লীল ইঙ্গিত করে কথা বলেন। এভাবে তিনদিন তার উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে অনিতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর তাকে আদালতে নিয়ে আসলে তার শারীরিক অবস্থা দেখে কোর্ট পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ওই দিন সন্ধ্যায় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ অনিতাকে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে আসা হয় জেলহাজতে।
প্রথমে জেল কর্তৃপক্ষ অসুস্থ অনিতাকে রাখতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তাকে রেখে জেলা পুলিশের মাধ্যমে সিলেট এমএজি ওসামানী কলেজ হাসপাতালে ওই দিন রাতে ভর্তি করা হয়। ১২ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অনিতাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে ফের তাকে জেলখানায় আনা হয়। ১৬ নভেম্বর অনিতাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ড চাইলে আদালত অনিতার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অনিতাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান করেন। এমন অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের বিস্তর কাহিনী উল্লেখ ছিলো মহানগর পুলিশের কাছে দেয়া অনিতার স্বামীর দেয়া লিখিত অভিযোগে। এসব বর্ণনার পরিরেপ্রক্ষিতে তাৎক্ষনিক ক্লোজড করা হয়।
যোগাযোগ করলে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. রহমতুল্লাহ জানান, প্রশাসনিক কারণে দুজনকে এসএমপি হেডকোয়াটারে ক্লোজড করা হয়েছে।
অমিতকে রিমান্ডে এনে অত্যাচারের অভিযোগে ক্লোজ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অমিতা মামলার আসামী। তাকে রিমান্ডে আনা হয়েছে, তার পক্ষে তার স্বামী কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ করার মানে তাই না, যে ওই ২ জন পুলিশ ঘটনা সত্যি ঘটিয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য তাদের ক্লোজ করে উপপুলিশ কমিশনার উত্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ওই বিষয়ে অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দিবেন। তখন সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
একই সুরে কথা বলেন কোতোয়ালী থানার ওসি আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, অন্য কোনো কারণে না, তাদের ক্লোজ করা হয়েছে নিয়ম মাফিক। তাদের অন্য জায়গায় পোস্টিং হবে।