টেংরাটিলায় আতঙ্ক : বাপেক্স কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

tengratilaসুনামগঞ্জ সংবাদদাতাঃ সুনামগঞ্জের টেংরাটিলায় পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ডের আশপাশ দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস উদগীরণ শুরু হয়েছে। গ্যাসফিল্ডের পাশের গ্রাম টেংরাটিলার বিভিন্ন সড়ক, জমি, পুকুর, বাড়ি, বিদ্যালয় এমনকি ঘরের ভিতরে ফাটল দিয়েও গ্যাস বেরোতে থাকায় গ্রামের মানুষের মধ্যে নতুন করে আবারো আতংঙ্ক দেখা দিয়েছে। গ্যাসের বিষ্ফোরণ আতঙ্কে এরই মধ্যে প্রশাসন একটি পরিবারকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আরো ১০/১২টি পরিবার চরম ঝুকিতে রয়েছে। গ্যাসফিল্ডের নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়া বিষয়টি দেখারও যেন কেউ নেই। তবে নাইকো কিংবা পেট্রোবাংলা বিষয়টিকে তেমন একটা আমলে না নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখবাল করা হচ্ছে। আর এতো সব ঝুঁকির মধ্যেও গ্যাসকুপের পার্শ্ববর্তী টেংরা মাধ্যমিক স্কুল ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা ক্লাস করছে এবং বুদবুদ করে বের হতে থাকা গ্যাসের গদ্ধে ইতিমধ্যে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাস জনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারী ও ২৪ জুন দু’দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের প্রোডকশন কূপের রিগ ভেঙে যায় প্রচন্ড এবং ভয়াবহ কম্পনসহ ২০০ থেকে ৩০০ ফুট উঁচু আগুন ১৫ দিন পর্যন্ত জ্বলে । এই দুই দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, কৈয়াজুরি ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের পর আশপাশের মানুষকে সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছুদিন পরই নাইকো তাদের সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে গ্যাস কূপটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে ওখান থেকে চলে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় ৯ বছর পর আবারো পরিত্যক্ত এই গ্যাস ফিল্ডের আশপাশ এলাকায় গত ১৫দিন ধরে গ্যাসের উদগীরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত দুই তিন দিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের উদগীরণ শুরু হয়েছে। এলাকার সবত্র বুদবুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী পাথমিক বিদ্যালয়ের ভবণ ও একমাত্র রাস্তাটিও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। আর এই ঝুঁকিতেই ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এলাকার লোকজন বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা বা নাইকো’র কর্তৃপক্ষ এসে দেখে গেলেও স্থানীয় লোকজনকে তারা কোন ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন না। ফলে পুরো এলাকায়ই এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর ওই গ্যাস ফিল্ডের পাশে অবস্থিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও রয়েছে আতঙ্কে। শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা বিষ্ফোরণ আতংকে ঠিকমত ক্লাস ও পড়ায় মনযোগ দিতে পারছেনা।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব সারোয়ার এবং ভূ-তত্ত্ববিদ মিজানুর রহমান গ্যাসক্ষেত্র এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও উন্নয়ন) ড. আহমদ উল্ল্যাহ,দোয়ার বাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান,ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সেলিম ও স্থানীয় সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মাষ্টার সহ প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব সারোয়ার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিদিষ্ঠ করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন ‘তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানানো হবে’।
বাপেক্সের পক্ষ থেকে নিদিষ্ঠ করে কিছু না জানালেও দোয়ারাবাজার উপজেলরা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, ‘কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের কথা হয়েছে শীঘ্রই নাইকো গ্যাস উৎপাদন শুরু করবে। এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন যাতে কোন প্রাণনাশের ঘটনা না ঘটে’।
তবে বাপেক্সের ভূ-তত্ত্ববিদ মিজানুর রহমান জানান, টেংরাটিলায় দুই দফা বিস্ফোরণের পর থেকেই গ্যাসের চাপ ছিল। এখন চাপের মাত্রাটা একটু বেড়েছে। তবে বিগত নয় বছরে যেহেতু বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তাই আশা করা যাচ্ছে এখনো কিছু হবে না।
তবে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানান, যে হারে বাড়িঘর, পুকুর, রাস্তাাঘাটে গ্যাস বের হচ্ছে। তাতে করে বাপেক্স কর্মকর্তাদের কথায় আমরা মোটেও আশ্বস্থ হতে পারছি না’। যে কোনো সময় এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর বাপেক্সের কর্মকর্তরা পরিদর্শন শেষে এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করার কথা থাকলেও পরিদর্শন শেষে একপ্রকার লুকিয়েই চলে যান’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হেলালী জানান,টেংরাটিলা গ্যাসকূপের আশপাশের লোকজন খুবই আতংক গ্রস্তের মাঝে দিন যাপন করছেন। নাইকো কিংবা পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের নজরদারী না থাকা ও তাদের উদাসীনতার কারণে যে কোন মারাত্মক ধরনের অঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান।