নগরীতে অবৈধ পশুর হাট : মেয়র আরিফ অসহায় না ব্যর্থ

অবৈধ পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ নেতারা

SONY DSCনুরুল হক শিপুঃ নগরীর কোরবানির পশুর হাট নিয়ে বেকায়দায় আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী । নগরীতে অবৈধ পশুর হাট বসানো যাবেনা বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেও তিনি রক্ষা করতে পারছেন না। নগরীর স্থানে স্থানে বসছে অনুমতিহীন পশুর হাট। এ ক্ষেত্রে সিটি মেয়র ব্যর্থ না অসহায়-এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি প্রশানকে দোষারূপ করলেও প্রশাসন উল্টো অভিযোগের তীর ছুড়ছে তার দিকে। অবৈধভাবে কেউ পশুর হাট না বসাতে গত মঙ্গলবার বিকেলে সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অবৈধ হাট না বসানোর আহবান জানান। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন। সূত্রমতে, সিটি করপোরেশনের অনুমোধন ছাড়া নগরীতেই যত্রতত্র বসানো হচ্ছে পশুর হাট। হাট উচ্ছেদের কারো মাথা ব্যথা নেই। পুলিশ এ সকল হাট উচ্ছেদে কোনো অভিযান দিচ্ছেনা। পুলিশের শেল্টারে কিছু হাট বসানোরও অভিযোগ উঠছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নিষেধের পর নগরীতে অবৈধ পশুর হাট বসানোর সাথে বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়র রয়েছেন বেকায়দায়। পুলিশ তার কথা শুনছে না, নাকি পুলিশকে তিনি ব্যবহার করছেন না এমন প্রশ্ন চলে এসেছে। পুলিশ কমিশনার বলছেন, ফোর্স লাগলে দেওয়া হবে, সিটি করপোরেশন অভিযান দিচ্ছে না কেন?
Illegal Animal Market in Sylhetনগরীর কয়েদির মাঠসহ ২৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে কোথাও পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দেয়নি সিটি করপোরেশন। তারপরও কয়েকটি স্থানে বসানো হচ্ছে অবৈধ পশুর হাট। সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, কোনো সড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, সিটি করপোরেশনের সড়কের আশপাশে কোনো পশুর হাট না বসাতে আন্তমন্ত্রনালয় মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। একই সাথে মেট্রোপলিটন পুলিশকেও তাদের হেড কোয়াটার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকায় অবৈধ পশুর হাট বসালে ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের কোথাও কোনো পশুর হাট বসাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। এরপর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিটি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করা হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমরা কি করবো আমাদের কি করার আছে ‘আমাদের তো ফোর্স নেই’ যে আমরা অবৈধ হাট উচ্ছেদ করি। প্রশাসন করছেনা কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তা আমার জানা নেই। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রশাসন কি কোনো হাট বসানোর অনুমোদন দিতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না পারেনা। যদি প্রশাসন সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া হাট বসানোর অনুমোদন দিয়ে থাকে তাও অবৈধ বলে জানান মেয়র আরিফ।
মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন জনান, সিটি করপোরেশন অনুমোদন দেয়নি ঠিক আছে, আমরা পুলিশ দেব, তারা অভিযান করুক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন লাগলেতো পুলিশ নেয়। এখন নিচ্ছেনা কেন? পুলিশ কমিশনার অফিস থেকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা এ কথা বলছেব তাদের অনুমতিপত্র দেখাতে বলেন। আমরা কাউকে অনুমোন দেইনি। ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বলেন, সিটি করপোরেশন আজ সকাল থেকে অভিযানে নামুক আমরা ফোর্স দিবো।
সূত্রমতে, সিটি করপোরেশন নিষেধাজ্ঞার পরও পশুর হাট বসাতে রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালীরা ব্যস্ত। গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখাগেছে, রাস্তার পাশের খালি জায়গা ও রাস্তাঘাট দখল করে বসানো হচ্ছে পশুর হাট । এছাড়া আরো কিছু এলাকায় ঈদের আগের দিন পশু বিক্রি করার পায়তারা চলছে। ওই স্থানগুলো হচ্ছে, দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চন্ডিপুল, নগরীর সোবহানী ঘাটের ময়না মিয়ার বিল্ডিং এর সামনের মাঠ ও সোবহানীঘাট আগরা কমিউনিটি সেন্টার এর সামনের সড়ক। এছাড়া, ইতোমধ্যে নগরীর কয়দির মাঠ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠ, চালিবন্দরে স্বদেশ পশুর হাট, দক্ষিণ সুরমার ফল মার্কেটের সামনে ও ঝালপাড়ায় অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়েছে। সদর উপজেলার শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠে ‘উন্নয়ন কমিটির ব্যানারে চলছে অবৈধভাবে পশু বিক্রি। এছাড়া, নগরীর রিকাবিবাজার, সুবিদবাজার, উপশহর, মজুমদারী দিঘীর মাঠ, রিকাবী বাজার রাস্তার পাশে খুঁটি গাড়া হয়েছে। বাঘবাড়ি জেলা সমাজকল্যান অধিদপ্তর এর পাশে হাট বসানো হয়েছে।
ওসমানী হাসপাতালের পাশে একটি পশুর হাট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বাজার পরিদর্শক জামিলুর রহমান। তিনি বলেন, হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে পশুর হাট বসানো হয়েছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থানায় দিয়েছেন। যার একটি অনুলিপি সিটি করপোরেশনেও তারা দিয়েছেন।