টমটমের ভারে ন্যুজ সিলেট : উভয় মেয়রই টমটমের পক্ষে

jella-porishod-Kamran Arifসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান নিজ দ্বায়ীত্বে নগরীতে ১৫০০ ব্যাটারীচালিত টমটমের অনুমতি প্রদান করেন। এটি পর্যায়ক্রমে কয়েক হাজারে উন্নীত হয়। তার উপর চলে আসে ব্যাটারী চালিত রিক্সা। সেই থেকে টমটম ও ব্যাটারীচালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ে গোটা সিলেট নগরী। বিআরটিএ প্রথম থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছিল। বিআরটিএ কোনভাবেই অবৈধ এই গাড়ীর অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। তাছাড়া ঘনঘন লোড সেডিং এর জন্যও ব্যাটারী চালিত টমটম ও ইজিবাইককে দায়ী করেন বোদ্ধারা। সেই প্রেক্ষিতে সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান নিজ দ্বায়ীত্বে টমটমের (ইজিবাইক) সাময়িক অনুমতি প্রদান করেন। ইতোমধ্যে সারা দেশে টমটমের উপর হাইকোর্টও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাছাড়া সিলেট নগরীর ধারনক্ষমতার চেয়ে বেশী টমটমের কারনে অসহনীয় জানজট হয়ে উঠে নিত্যদিনের সঙ্গী। টমটমের কারনে সিলেটে সিএনজি আটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশনও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। অবশ্য সম্প্রতি কিছু সিএনজি রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে সিলেট বিআরটিএ। তাছাড়া সরকারের এত কষ্টের অর্জিত বিদ্যুতের অধিকাংশ বিদ্যুৎ অবইধপথে চলে যাচ্ছে ইজিবাইকের ব্যাটারী চার্জে। যেকারনে এত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও ঘনঘন লোডসেডিং এর কবলে পড়ছে সারা দেশ। কিন্তু সরকারের উর্ধতন মহল বিদ্যুৎ ঘাটতির কারন সনাক্ত করতে ব্যার্থ হচ্ছে। নতুন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিতর্কিত ইজিবাই হালাল করার চষ্টায় কম যাননি। বিশ্বস্ত সূত্রে পাপ্ত তথ্যমতে, মেয়র আরিফ টমটমের বৈধতা দেয়ার জন্য একটি জরুরী সভার আয়োজন করেন। এতে সিলেট বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহকেও আমন্ত্রন জানান। সেই সভায় তিনি সাময়িকভাবে টমটমের বৈধতা দেয়ার জন্য একটি রেজ্যুলিশন পাস করানোর চেষ্টা করেন যাতে অতি চতুরতার সাথে তিনি বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর স্বাক্ষর আদায় করার চেষ্টা করেন। যদিও শহিদুল্লাহ ওই রেজ্যুলিশনে স্বাক্ষর করেননি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার নগরীতে টমটম বিরোধী অভিযানে নামে পুলিশ প্রশাসন। এরপর থেকে নগরীতে টমটম চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে ইজিবাইক চালকরা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করে তারা।রাতে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রায় ৬শতাধিক চালক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কুমারপাড়াস্থ বাসায় হাজির হয়। এসময় ইজিবাইক চালক শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে আরিফুল হক চৌধুরী তাদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান। এ সময় তারা মেয়রের বাসা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। সেখান থেকে ফেরার পথে কুমারপাড়া, নয়াসড়ক ও চৌহাট্টা পয়েন্টে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মেয়রের কুমারপাড়াস্থ বাসা থেকে বেরিয়ে ইজিবাইক চালকরা নগরীর মীরবক্সটুলা, নয়াসড়ক, মানিক পীর রোড. আম্বরখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক, মাইক্রোবাস, হাইএইচ, নোহা, প্রাইভেট কারসহ শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে। তাদের তান্ডবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ওইসব গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপাররাও। ইজিবাইক চালকদের হামলায় ২ জন গুরুতর আহতসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে রমজানে ইজিবাইক (টমটম) চালকদেরও সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে শর্তসাপেক্ষে হলেও নগরীতে টমটম চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ অটোবাইক চালক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সৈয়দ গোলাম রহমান। চালকদের পক্ষ থেকে এ অনুরোধ জানিয়ে, নগরীতে যানবাহন ভাঙচুরেরও নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, টমটম বন্ধ প্রসংঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসভবনে অটোবাইক শ্রমিক ও মালিকদের যৌথ সভায় মেয়রের বক্তব্যের সঙ্গে সভাই ঐক্যমত পোষন করেন। এই সময় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, রমজান মাসের হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারের সমস্যার কথা চিন্তা করে টমটম চলাচলের সমস্যা সমাধানে মেয়রের আশ্বাসে আমরা ঐক্যমত পোষন করি। কিন্তু সভা চলাকালে কতিপয় সুবিধাভোগী উচ্ছৃংখল শ্রমিক নামদারী ও কতিপয় মালিক সমিতির মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর চালায় ও জনমনে আতংক সৃষ্ঠি করে। এই উচ্ছৃংখল ব্যক্তিরাই আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের উপর আক্রমণ করে বলে বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রমজানে শর্তসাপেক্ষে টমটম চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি মেয়র ও পুলিশ কমিশনারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।