ভেজাল পণ্যে সয়লাব সিলেটের বাজার

লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোহারা নেন বিএসটিআই’র কর্মকর্তারা

BSTIফখরুল ইসলামঃ ভেজাল পণ্যে ছেয়ে গেছে সিলেটের বাজার। সিলেট বিভাগীয় মাননিয়ন্ত্রণ (বিএসটিআই) অফিস যেন সাইনবোর্ড সর্বস্ব মাসোয়ারা আদায়ের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে-এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরীক্ষক ছাড়াই চলে এই মাননিয়ন্ত্রণ অফিসের পরীক্ষা নিরীক্ষা। কল-কারখানা পরিদর্শন, গুনগত মাণ নির্ধারনি সনদ (সিএম লাইসেন্স) প্রদান, নমুনা সংগ্রহ করা, সার্ভেলিয়েন্স (কারখানা) পন্য যাচাই করা, মেয়াদউত্তীর্ন কি না তা পরীক্ষা করা মুলত বিএসটিআই এর কাজ। আর এ সব কাজ করতে গিয়ে আইন প্রয়োগে শিথিলতা এবং আইনের ফাঁক ফোকরকে পুজিঁ করে বিএসটিআই এর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা নানা অযোহাতে অবৈধ ফায়দা হাসিলে ব্যাস্ত এমন অভিযোগ একাধিক ভূক্তভোগীর।
জানা যায়, বিএসটিআই এর লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্টানের সংখ্যা ৮০০ (আট শত)। এর মধ্যে মসলা মিল রয়েছে ২৫টি। কিন্তু লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্টান রয়েছে এর অধিক। এসব প্রতিষ্টান চলে বিএসটিআইকে ম্যানেজ করে এমন অভিযোগ একাধিক মহলের।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিএসটিআই এখন অনেকটা ঠুঠু জগন্নাথ, নামে মাত্র দু একটি লোক দেখানো ভেজাল বিরোধী অভিযান দিয়েই চলছে এর আঞ্চলিক অফিসের কার্যক্রম। সিলেটে ভেজালরোধ করণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিএসটিআই এর অভিযান মানে উৎকোচের হার বেড়ে যাওয়া। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্য, পানীয়, লাচ্ছা সেমাইসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। খাদ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, কাপড়ের রং , কীটনাশক, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক এবং তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আম, কলা, খেজুর, পেঁপে, আনারস, মালটা, আপেল, আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফলে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কীটনাশক, ইথেফেন, ফরমালিন, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামক। মাছে ফরমালিন, শাক-সবজিতে কীটনাশক ও ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ভেজাল মেশানো নেই এমন ভোগ্যপণ্য পাওয়া এখন ভার। এসব বিষাক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি।
পন্যের গুনগত মান, বিশুদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করণ এবং জনসাধারণের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ৩৬০ আউলিয়ার পূর্ণভূমি সিলেট জেলায় বিএসটিআই আঞ্জলিক অফিসের অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সিলেট জেলার জাফলং রোডে বিসিকি শিল্প নগরী খাদিম নগরে মনোরম পরিবেশে নিজস্ব ভবণে বিএসটিআইর সেবা প্রদান শুরু হয়। বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত এবং আমদানীকৃত যাবতীয় শিল্পপণ্য, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যের মান প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, মানের সঠিক নিশ্চয়তা বিধানসহ ওজন পরিমাপের মেট্রিক পদ্ধতি প্রচলন ও বাস্তায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
বিএসটিআই’র অফিস সুত্রে জানাযায়, এখানে উপপরিচালক ২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১ জন, সহকারী পরিচালক ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন, ইন্সপেক্টর ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন , ফিল্ড অফিসার ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন, পরীক্ষক ২জন থাকার কথা থাকলেও একজনই নেই।
এছাড়া মাসের অধিক সময় পারিবারিক ব্যাস্থতায় দিন কাটান সিনিয়র একাধিক কর্মর্কতা। কিন্তু সময় মতো এসে স্বাক্ষর দিয়ে বেতন ভাতা নিয়ে যান। আর এ সুযোগকে কাজে লাগীয়ে কর্মরতরা অবৈধ ভাবে ফায়দা হাসিল করছেন বলে অবিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ দিন থেকে সিলেট বিভাগের একমাত্র মাননিয়ন্ত্রন অফিস হলেও জনবল সংকট প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এখন পর্যন্ত দূর করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে নানা মূখী সমস্যা। বিএসটিআই এর আওতাভ’ক্ত ১৫৪টি পণ্যের মধ্যে মাত্র ১২টি পণ্য পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি ছাড়া বাকী পণ্যগুলো পরীক্ষা করার কোনো যন্ত্রপাতি নেই তাদের।
এ ব্যাপারে মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সিলেট আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক এই প্রতিনিধিকে জানান, সবধরনের পণ্যে মান পর্যবেক্ষন করতে আমরা সব সময় সচেষ্ট। বিভাগের একমাত্র অফিস এটি, লোকবল ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটে কারণে পর্যবেক্ষন করতে আমাদের পক্ষে কষ্টকর। এছাড়া যে কোনো সময় ইচ্ছা করলে পর্যবেক্ষন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তার অনুমোদন আনতে হয়।
বিএসটিআই-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের অফিসের কেউ কোনো অনিয়ম বা ঘুষের সাথে জড়িত নয়।