তাহিরপুরে অর্ধলক্ষাধিক পরিবারের পাথরেই জীবন পাথরেই প্রাণ

PHOT0180.JPG

কামাল হোসেন,তাহিরপুর: যাদুকাটা নদী ভয়ে চলেছে ভারতের খসিয়া রাজ্যের মেঘালয় পাহাড়ের খোল ঘেষে। প্রাচীন লাউড় রাজ্যের স্মৃতিমাখা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বুক চিরেচলা এই নদীটি এক সময়ে ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যের অনন্য আঁধার। যার রূপের টানে এক সময়ে যেমন হাজির হতেন হাজার হাজার র্পযটক তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ বালু আর পারথ উত্তোলনে হাজার হাজার শ্রমিক ব্যাস্ত সময় কাটাতো সকাল থেকে সন্ধা র্পযন্ত। র্বষা মৌসুমের শুরু থেকে সার বছরেই তাদের জীবন জীাবকার এক মাত্র অবলম্ভন বালু আর পাথর শ্রমিকরা যোগযোগ ধরে এই নদীতে বালু-পাথর অরোহন করার কারনে এই সীমান্ত নদী যাদুকাটর বুকে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু আর পাথরের কিছুটা ভাটা যায়। জানাযায়, প্রাকৃতিক সম্পদ বালু একেবারে নেই বললেই ছলে তবে শুকনো মৌসুমে এই উপজেলাসহ আশপাশের বেশ কয়েটি উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিকের জীবন জীবিকার একমাত্র বরসা নুরি আর বোল্ডার পাথর। যাদুকাটা নদী এখন পানিশূন্য। তাই পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের আয় অনেকটা কমে যায়। তবে যারা মাটি খনন করে পাথর তোলেন তাদের আয় একটু বেশি। তাহিরপুর উপজেলার বাংলাদেশ-ভার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত সীমান্তনদী যাদুকাটার লাউড়েরগড়

PHOT0187.JPG
PHOT0187.JPG

সীমান্তের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন নদীর বুকে পাথর উত্তোলন করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ পাথর শ্রমিকের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্ভন । আরও জানাযায়, দু’তিন জন এমনকি ৪-৫ জন পাথর মহাজন মিলে একটি পাথর কোয়ারী করে ওই স্থান থেকে শ্রমিক লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করে। আর ওই পাথর কোয়ারীতে ৩ ধরনে শ্রমিক কাজ করে। কেউ কোয়ারী থেকে বালু উত্তোলন করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। আবার কোন কোন শ্রমিক কোয়ারীতে বাল ও মাটি খনন করে বালতিতে করে পাথর উটাচ্ছে। আবার অন্য শ্রমিকরা ওই পাথর কোয়ারীর নিচ থেকে পাথর বাঁশের টুকরিতে করে পাথর কোয়ারীর উপরে খোলা জায়গায় উঠিয়ে আনছেন। একটি কোয়ারীতে ওই ৩ ধরনে শ্রমিক কাজ করার কারনে প্রতিটি কোয়ারীতে প্রায় ১’শত থেকে দেড়শত জন শ্রমিকের দরকার পরে। আবার ওই ৩ ধরনের শ্রমিককে ৩ ধরনের মজুরিও দিতে হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা র্পযন্ত কোয়ারী থেকে বালু উত্তোলনকারী একজন শ্রমিককে দিতে হয় ২শত ৫০ টাকা। আর কোয়ারীর নিচ থেকে পাথর কোয়ারীর উপরে উঠিয়ে আনার এক জন শ্রমিককে দিতে হয় ৩শত টাকা। আবার কোয়ারীর তল থেকে বালতি বা বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর উঠানো কাজে ব্যাস্ত এক জন শ্রমিককে মুজরি দিতে হয় সাড়ে ৩শত থেকে ৪শত টকা। আবার ওই স্থান থেকে কোন কোন কোয়ারীর মালিক লড়ির মাধ্যমে উঠিয়ে প্রায় আধ কিলোমিটার দক্ষিণে লাউড়েরগড় বাজার সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর তীরে নয়ি মজুদ করেছে। এব্যপারে পাথর কোয়ারীর মালিক জাঙ্গালহাটি গ্রামের বোরহান উদ্দিন বলেন, পাথর শ্রমিকদের মুজুরি ও বিভিন্ন আনুসাংঙ্গীগ খরছসহ সব মিলিয়ে কোয়ারীর মালিকদের প্রতিফুট ভোল্ডার পাথরে খরছ পরে ৪৫ টাকা আর প্রতিফুট ভোতো পাথরে ২৫ টাকা। এবং কোন কোন মালিক ওই কোয়ারীর পাশ থেকেই পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করছে প্রতিফুট ভোল্ডার পাথর ৫১ টাকায় আর প্রতিফুট ভোতো পাথর বিক্রয় করছে ৩১ টাকায়। এতেকরে হাজার হাজর শ্রমিকের র্কমসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি অর্থ র্উপাজন করে পরিবার পরিজন সুখে শান্তিতে বসবাস করে আয়ের মুখ দেখছেন। কিন্তু বিগত এক সপ্তাহ যাবৎ কোন এক অদৃষ্য করণে এই নদীর বুকে পাথর উত্তোন বন্ধ থাকার ফলে যেমন পাথর ব্যবসায়ীরা লক্ষলক্ষ টাকা লোকসানের মুখে পরছেন তেমনি হাজার হাজার পাথর শ্রমিকদের সংসার চলছে অভাব অনটনে। ওই পাথর শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতীপাত করছে কোর রকমে খেয়ে না খেয়ে ও অর্ধাহারে অনাহারে। যাখানে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক পরিবারের ছিল পাথরেই জীবন পাথরেই প্রাণ। এখন ওই পাথরেই হয়ে উঠেছিল তাদের জীবনে বিষ ফোঁড়ার মত গলার কাঁটা। বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আর এলাকাবাসী একান্ত প্রচেষ্টায় সব বাঁধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক খন্দকার গোলাম মহিউদ্দিনের গত ১০ ফেব্রুয়ারী বুধবার থেকে ওই সথান থেকে পাথর উত্তোলণ আবারও উনুমুক্ত করেদেন। গতকাল সরেজমিনে গেলে যাদুকাটা নদীর ওই পাথর কোয়ারী এলকায় গেলে হাঁসিমাখা মুখে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সখিনা(৪৫) নামে এক মহিলা পাথর শ্রমিক কান্নাবরা চোখে এই প্রতিবেদককে বলেন, কি কইমুরে বাপ, এহানে একমাস ধইরা পুলার বাহে(মহিলার স্বমী) আমি, আমার পুলাডা আর মাইয়াডা সহ ৪ জনে বোরহান ভাইয়ে কোয়ারীতে কাাজ করি। আনডা( আমরা) পুলা, মাইয়া আর আমি ৩ জনে প্রতিদিন পাই ৯শ টাহা(টাকা)। আর পুলা পাহে পায় ৩শ ৫০ টাহা(টাকা)। পুতরে(ছেলে) আমার সংসারে ৮জন খাওইয়া। আনডার (আমরা) ৪জনের যে টাহা পাই এইহান থাইকা র্অধেক টাহা সংসারে খরছ হইত আর র্অধেক আয় হইত। কিন্তু ১০/১২ দিন ধইরা এইহানে কাজ বন্ধ থাহায় আমাদের সংসারে যে টাহাডি আই আচিন হেইডিও খাইয়া শেষ হইয়া গেছিল। কি চিন্তার মাইঝে যে পরছিলাম। এহন আবার আল্লায় আমাদের দিহে মুখ ফিরাইয়া চাইছে। দুই দিন ধাইরা আবার এই হানে কাজা করছি। এহন আর না খাইয়া থাহন লগদনারে বাপ। এইহানে আমরা কাজ কইরা কোনলাহান খাইয়া না খাইয়া জানে বাঁচি। কথা হয় জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনাবাগ গ্রামের কোদ্দুছ মিয়া(৫০) নামে আরেক পুরুষ পাথর শ্রমিকের সাথে। সে বলে আমার এলাকায় কোন কাজ না থাকায় আমি পরিবার নিয়ে এই কানে(সীমান্ত সংলগ্ন বারেকটিলায়) চলে আসি। আগে কাজ করতাম ইনফুডে(বড়ছড়া কয়লা শুল্কষ্টেশনে) কিন্তু কয়লা দেড় বছর যাবৎ বন্ধ থাকার কারনে একন নদীতে কাজ করে কোন মতে জীবন বাঁচাই। এব্যপারে তাহিরপুর উপজেলার প্রেস কাবের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আলম সাব্বির জানান, আমি নিজেও পাথরের ব্যবসা করি। কোয়ারীর মালিকদের কাছ থেকে এখন প্রতি ফুট ভোল্ডার পাথর ৫১ টাকা ও ভোতো ৩১ টাকায় কিনে নদীর তীরে ষ্টক(মজুদ) করছি। তা বৈশাখের প্রথম চিজনেই নদীতে পানি বাড়লে প্রতি ফুট ভোল্ডার ৬২ থেকে ৬৫ টাকা ও ভোতে ৩৯ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রয় করব। এতেকরে ভোল্ডারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা ও ভোতো পাথরে ৮ থেকে ৯ টাকার মত লাভ হবে। আমি এবছর ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার পাথর ষ্টক করব। পাথর কোয়ারী সমিতির সভাপতি সেনবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ উসমান গনি বলেন, এখানে প্রায় ১শত থেকে দেড়শত পাথর কোয়ারী আছে। যেখানে মানিক আছেন ৪শ থেকে ৫শত আর কোয়ারীতে র্কমরত পাথর শ্রমিক আছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজারেরও অধিক। তাই সীমান্ত এলাকা বলে আমরা এলকাবাসী মিলে একটি সমিতির মাধ্যমে তা পরিচালিত করছি। যাতে এখানে কোন ধরনে বেআইনি বা বিশৃঙ্খলা না ঘটে। আমাদের এলাকাবাসীর পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা তাদের মন উজার করে র্সবাত্বক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাদাঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, এই হাওর ও সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্ভন এই যাদুকাটা নদী। যার বুকে শুধু তাহিরপুর উপজেলার দরিদ্র মানুষেই না আশপাশের কয়েকটি উপজেলার গরীর লোকন জন এই নদীতে কাজ করে তাদের ছেলে মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। আগে এই এলাকার ৩টি কয়লা শুল্কষ্টেশন দিয়ে কয়লা ইনফুট এক্সফুট হত। যেখানে প্রায় ১ লক্ষাধিকেরও অধিক শ্রমিক কাজ করতো। কিন্তু অনেক দিন যাবৎ তাও বন্ধ থাকায় তাদের এখন একমাত্র ভরসা এই নদীটি। এখানেও যাদি শ্রমিকরা কাজ না করতে পারে তাহলে এলাকা অতিথের মতো শুরু হবে দিনে দুপুরে চুরি-ডাকাতি। বৃদ্ধিপাবে আইন শৃঙ্খলা অবনতির মত বিভিন্ন বেআইনি কাজ। কিন্তু সুনামগঞ্জ-৮ ব্যাটলিয়নের সিও স্যারসহ বিজিবির র্উধতন র্কমর্কতাদের সহযোগীতায় ও তাদের শুভ দৃষ্টিতে এখানে পাথর কোয়ারী ও ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন করতে পারায় ব্যবসায়ীদের লাভমানের পাশাপাশি কোয়ারীতে কাজ করে শ্রমিকরা তাদের পরিবার নিয়ে ৩ বেলা ৩ মুঠো ভাত পেটবরে খেতে পারছে। এর পাশপাশি তা থেকে কিছু টাকা আয় করে ভবিষ্যতে বাঁচা স্বপ্ন দেখছে।