বছর বছর ভাড়া বাড়ালে রেল যাত্রী বিমুখ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে : বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি

IMG_2112ডেস্ক রিপোর্টঃ বছর বছর রেল ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে রেলে যাত্রী কমবে, আয় কমবে, এভাবে রেলকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি মনে করে, রেলের মাথাভারী প্রশাসন, অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ করে কোচ ও গতি বাড়িয়ে একক যাত্রী প্রতি খরচ কমিয়ে রেলখাতে লোকসান কমানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে লাভজনক করা সম্ভব হবে। এজন্য সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরী বলে দাবি করেন সংগঠনটি। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সারাদেশে রেলের বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা।
আজ সকালে নগরীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক আবদুল হক, ডব্লিউবিবি ট্রাষ্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
সভায় অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, আমরা কথায় কথায় ভারতের উদাহরণ দিলেও ভারত কিভাবে রেল খাতে উন্নয়ন করেছে তা কাজে লাগাতে চাই না। বিশ্ব ব্যাংকের যে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে তা রেলের উন্নয়নের চেয়ে দূর্নীতি ও লুটপাটে বেশী ব্যবহৃত হবে। এ ঋণের শর্ত হিসাবে বছর বছল ভাড়া বাড়ালে রেলে লুটপাট ও দূর্নীতি আরো বেড়ে যাবে। তিনি রেলের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডের একটি স্বেতপত্র প্রকাশের দাবী জানান।
সভায় পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রেলের বর্তমান প্রশাসন ডায়নামিকভাবে উন্নয়নে ব্যর্থ দাবী করে এই প্রশাসন পরিবর্তন করে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাত্রীদের চাহিদা নিরুপন করে রেল পরিচালনার দাবী জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সড়ক পথে সরকার শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রাস্তা নির্মাণ করছে, আর ব্যবসা করছে বেসরকারি বাস-ট্রাক মালিকরা। রেলের ক্ষেত্রে একদিকে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করা হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়া বাড়িয়ে তা যাত্রীদের কাঁধে চাপানো হচ্ছে।
বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রেলকে সংকুচিত করা হয়েছে। সড়কপথ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের জন্য রেল ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবী জানান।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক বলেন, আমাদের রেল যেন অবহেলার প্রতীক। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে উন্নত বিশ্বের রেল ব্যবস্থার সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম হচ্ছে না। ভারত, জাপানে খুব কম খরচে উন্নত রেল সেবা দিতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে তা এত বিনিয়োগের পরেও সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আজ তলা ফুটো কলসীতে পরিণত হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধি করে রেলের লোকসান কমানো বা লাভজনক করা যে কোন ভাবে সম্ভব নয়, তা ২০১২ সালে ব্যাপক ভাড়া বৃদ্ধির পর প্রমাণিত হয়েছে। তিনি যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবী জানান।