‘একদাম একশ, লইয়া যান একশ’

61837ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর ফুটপাতে হাঁটলে বিভিন্ন মোড়ে এমন হাঁকঢাক কানে আসবেই। কিন্তু যদি সেটা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়! হ্যাঁ, সত্যিই যেখানে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদশর্ণী ও বিপণনের জন্যই ফিবছর আয়োজন সেখানে এখন শোনা যাচ্ছে হকারদের হাঁকঢাক।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্টল, প্যাভিলিয়নের সামনে তিলধারণের ঠাঁই নেই। সেখানে চলছে এই হকারদের রমরমা বাণিজ্য।
মেলায় স্টল, প্যাভিলিয়ন বা গ্যালরির বাইরে কোনো পণ্য বিক্রির নিয়ম না থাকলেও জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, কেউ হাতে করে ঘুরে ঘুরে, কেউ প্রাঙ্গণে বসে জিনিস বিক্রি করছে। তবে ভ্রাম্যমাণ হকারের সংখ্যাই বেশি। এদের থ্রি-পিস, সিঙ্গেল জামা, কাটা কাপড় সোয়েটার, বিছানার চাদর বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেক হকারকে ভ্যানিটি ব্যাগ, ওয়ালেট, পার্স নিয়েও বসে থাকতে দেখা গেল।
আর ভাসমান হকাররা চিপস, বেলুন, লুছনি, ছোবা, মাজুনিসহ বিভিন্ন গার্হস্থ্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।
কথা হয় নাছরিন নামে একজন নারী হকারের সঙ্গে। তিনি পার্স, ওয়ালেট বিক্রি করছেন। স্টল প্যাভিলিয়নে দাম বেশি হওয়ার কারণে তাদের জিনিসপত্রে চাহিদা বেশি বলে জানালেন তিনি।
দুপুরের পর মেলার ভেতর প্রবেশ করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি করে ফেলেছেন। মেলার ভেতরে বিক্রির অনুমতি নেই। কিন্তু যে হারে বেচাবিক্রি হচ্ছে তাতে একটু ঝুঁকি নিয়ে হলেও ভেতরে ঢুকেছেন তিনি।
হকার প্রবেশ নিষেধ হলেও কীভাবে ঢুকলো- জানতে চাইলে অপর এক হকার জানান, ‘সিস্টেম’ করে ঢুকতে হয়। এদিক ওদিকে কিছু দিতে হয়। এছাড়া খালি হাতে ঢুকে পরে বাইরে থকে ‘সাপ্লাই’ নেয়ার ব্যবস্থা করেন।
এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে যত্রতত্র হকারদের বসার কারণে দর্শনার্থীদের চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটতে দেখা গেছে। অনেক স্টল মালিক হকারদের নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। কারণ হুটহাট ভাসমান হকারদের জিনিস কিনতে আগ্রহী মানুষের ভিড় কোনো স্টলের সামনেই জমে যাচ্ছে। প্রচণ্ড জটলা তৈরি হচ্ছে।
মাঝে মাঝে স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন। তৎক্ষণাত হয়তো পুলিশ সরাতে তেড়ে যাচ্ছে আর হকাররা গাড্ডি বস্তা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পড়ে সুযোগমতো আবার বসে পসরা নিয়ে বসে পড়ছে।
তবে কোথাও কোথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই হকারদের জিনিস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেলা সচিব রেজাউল করিম বলেন, ‘ফাঁক, ফোঁকরে এসব হচ্ছে। এগুলো কারো ইচ্ছাতে নয়। তবে আপনি যদি খেয়াল করেন, অতীতের মেলাগুলোর থেকে এবার অনেক কম হকার মেলা দেখা গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পুলিশকে দায়িত্ব প্রদান করেছি। হকারসহ মেলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন বিষয়গুলো দেখতে। মেলায় ৫‘শ থেকে ৭‘শ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে এর মধ্যে সবার মেন্টালিটি এক নয়। তবে উপর লেভেলের পুলিশরা এসব ঠেকাতে তৎপর। তারপরও কোনো পুলিশ যদি বাড়তি কোনো সুবিধা নেয় এসব বিষয়ে ইনকোয়ারি করা হবে।’
মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি জহিরও একই কথা বললেন। তিনি বলেন, মেলায় যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত আছে। তারপরও এরা বেড়ার ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ঢুকে জিনিসপত্র বিক্রি করছে। তবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করছে।