আতঙ্কে লাফ দিয়ে জীবন শঙ্কায় ঢাবি ছাত্র
ডেস্ক রিপোর্টঃ খাটের কাঁপুনিতে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই দেখি চেয়ার, টেবিলসহ সব আসবাবপত্র কাঁপছে। রুমে তখনও আরও একজন ছিল। ঘুমের ঘোরে তাকে দেখতে পাইনি। প্রাণ বাঁচাতে কোনোমতে লুঙ্গিটা ঠিক করে লাফ দিয়ে খাট থেকে উঠি। চোখের পলকে দরজা দিয়ে বের হই। তারপর আর কিছুই মনে নেই। বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের চার তলা থেকে লাফ দিয়ে
আহত শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার হাত ও পা ভেঙে গেছে। সরে গেছে মেরুদণ্ডের হাড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ফাইনালের এই ছাত্র প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ৮ই জানুয়ারি বিসিএস প্রিলিমিনারি পলীক্ষার। ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পড়তে বসবেন এই জন্য রাত ১২টার আগেই ঘুমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভোরে ঘুম ভাঙার পর আর পড়া হয়নি। গতকাল দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। ইকবাল হোসেন বলেন, যেদিকে তাকাই সেদিকেই কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবীটাই কাঁপছে। এই বুঝি কেয়ামত হচ্ছে। চোখে তখন অন্ধকার। কাউকে খোঁজার মতো সময়-সুযোগ ছিল না। দরজা থেকে বের হয়ে কি যে হলো আর মনে নেই। পরে বন্ধু ও রুমমেটরা তাকে খুঁজে পান হলের ভবনের নিচে ড্রেনের পাশে। অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন ইকবাল। হাত-পা ফুলে গেছে। রক্ত জমাট হয়ে আছে। এ অবস্থাতেই নিয়ে যান ঢামেক হাসপাতালে। ইকবালের রুমমেট বাবুল হোসেন, শাহরিয়ার, আজিজ, রাসেলসহ রুমে একজন মেহমান ছিলেন। ওই রুম থেকে সবশেষে বের হন বাবুল। তিনি জানান, রুমের সবাই নিচে নেমে যান। কিন্তু বাবুল প্যান্ট পরে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। বাবুল জানান, ভয় পেয়েছিলেন খুব। কলেমা পড়ছিলেন মনে মনে। প্যান্ট পরে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন কক্ষে কেউ নেই। ভূমিকম্প সম্পর্কে ওয়ার্কশপ করেছেন তিনি। যে কারণে তাড়াহুড়া করেননি। চারদিকে তখন চিৎকার। একে অন্যকে ডাকছেন। কেউ কেউ ভয়ে কান্না করছেন। বাবুলসহ রুমমেটরা তখন ইকবালকে খুঁজছিলেন। বাবুল বলেন, দরজার সামনে বারান্দা। বারন্দার মধ্যস্থানে সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে না নেমে চতুর্থ তলার ওই বারান্দা থেকে লাফ দিয়েছে বলেই মনে করছেন তারা। কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই মনে করতে পারছেন না ইকবাল।
ঢামেক হাসপাতালে যখন কথা হয় তখন ইকবাল যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। স্যালাইন দেয়া হচ্ছে তাকে। বন্ধুরা দেখতে আসছেন। এর মধ্যেই পানি পান করতে চান তিনি। পাশে থাকা এক যুবক তার মুখে পানি দেন। ইকবালের বন্ধু আবদুল মালেক জানান, এক্সরে দেখে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ইকবালের বাম পা ও ডান হাত ভেঙে গেছে। মেরুদণ্ডের ছয়টি হাড় নড়ে গেছে। সবমিলিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ইকবাল। ঢাবির মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের এমএস’র ছাত্র ইকবালের বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের রানীনগর। তার পিতার নাম আকবর আলী।
এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তরের কণ্ট্রোল রুমের ব্যারাক থেকে নামতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন কনস্টেবল খন্দকার সোহান। তার দুই পা ভেঙে গেছে। আঙুলের জয়েন্ট খুলে গেছে তার। এই অবস্থাতেই ঢামেক হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, দুই নম্বর ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন সোহান। রাত ১১টার দিকে ঘুমাতে যান। গতকাল ভোরে খাটের কাঁপুনি ও সহকর্মীদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে তার। টের পান তীব্র ভূকম্পন। জীবনে প্রথম এরকম তীব্র কম্পন অনুভব করেন তিনি। ভবনের পুলিশ সদস্যরা যে যার মতো করে নিচে নামছেন। দ্বিতীয় তলার শতাধিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিচে নামেন তিনি। শত শত মানুষের নিচে নামার প্রতিযোগিতায় সিঁড়িতেই পড়ে যান সোহান। অনেক কষ্টে নিজেকে রক্ষা করে নিচে নামেন। ভবনের এক পাশে পড়েছিলেন। কান্না করছিলেন তিনি। অনেকটা ঘুঙানির শব্দের মতো। তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত খন্দকার সোহান ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। দুই বছর যাবৎ পুলিশ সদর দপ্তরে আছেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুরের নগরকান্দা গ্রামে। তার পিতার নাম খন্দকার বাবুল। সোহান ও ইকবাল হোসেন ছাড়াও ভূমিকম্প চলাকালীন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুইজন। তাদের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২ জন। (মানবজমিন)