শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট তুলে দেন : সিলেটের সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা

ICT Expo (2)বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সিলেট শাখা ও দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে নগরীর রিকাবীবাজারস্থ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মোহম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপি আইসিটি এক্সপো সিলেট-২০১৫‘র চতুর্থ দিনে গতকাল শুক্রবার সন্ধায় ‘তথ্যপ্রযুক্তি ও সিলেটের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বলেন- মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন মানুষের মেধা, স্বপ্ন আর সৃজনশীলতা। বক্তারা বলেন, আইসিটি জ্ঞান প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এ খাতের প্রচুর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আমাদের জনশক্তিকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি খাত একটি অত্যান্ত সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতের উপযুক্ত জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে জাতি দ্রুত এগিয়ে যাবে। ‘জন্য সরকারের আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট তুলে দেওয়া প্রয়োজন।’ তবে বাংলাদেশের স্বর্ণকন্যা প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং শিক্ষা দিতে হবে। তাই বিনামূল্যের পরিবর্তে ট্যাব তুলে দেওয়া হউক। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি, বাংলা বিজয় কিবোর্ডের আবিস্কারক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার অঙ্গীকার করে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন- ব্যয়র দিকে থাকাবেনা, জাতির ভবিষৎ চিন্তা করুন। আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট তুলে দিলে আগামী ১০ বছর পর তারা সরকারকে এর ব্যয়ে দশগুন বেশী দিবে। যদি না হয় তাহলে আমাকে ফাসি দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন- আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বর্ণকন্যা বলার কারণ- ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমি বলেছিলাম, কম্পিউটারের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করলে আমাদের দেশ এগিয়ে যেতে হসজ হবে। তিনি তখনকার অর্থমন্ত্রী, সিলেটের কৃতিসন্তান মরহুম শাহ এসএম কিবরিয়া সাহেবকে বলেছিলেন। কিবরিয়া সাহেব বলেন, কম্পিউটারের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করলে প্রতি বছর ২১০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম- আপনি দেশের ভবিষৎ চান না ২১০ কোটি টাকা চান। এরপর থেকে বাংলাদেশে কম্পিউটারের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক নেওয়া হয় না। পৃথিবীতে এমন দেশপ্রেমিক আছে বলে আমার জানা নেই। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি ইমরান আহমদ বলেন- বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটাল করতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। এর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে সরকার দেশের প্রত্যেটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট পৌছে দিচ্ছে। তিনি বলেন- বিদ্যুতের লাইনের মতো ইন্টারনেট সংযোগ দিলে হবেনা। এমনভাবে দিতে হবে যাতে এক দিক নষ্ট হলে অন্যদিক সাখে সাথে কাভার করে, তাই সরকার সব বিবেচনা করে কাজ করছে।
সেমিনারে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন- তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি, বাংলা বিজয় কিবোর্ডের আবিস্কারক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার। সেমিনারের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মো. আলী মর্তুজা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সিলেট শাখার সভাপতি ও মেলার আহ্বায়ক এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান হীরা লাল গোপ, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনির্ভাসিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. মেকাম্মেল ওয়াহিদ। উপস্থিত ছিলেন- দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন কিবরিয়া সুমন, পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী।
তথ্যপ্রযুক্তি ও সিলেটের সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন- মানব সভ্যতা এগিয়ে নিতে হলে, মানুষের মঙ্গল করতে হলে টাকার চেয়ে মেধার বেশী প্রয়োজন। যুুগে যুগে মেধা স্বপ্ন আর সৃজনশীলতার যথার্থ চর্চার মাধ্যমেই সভ্যতা এগিয়ে গেছে। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের ভর্তি পরিক্ষার পর বিজ্ঞান বিভাগে ৬০০ জন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েও বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হয়নি। কারণ, তাদের বিজ্ঞান নিয়ে পরতে আগ্রহ নেই। কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের আইসিটির ওপর জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
বক্তারা বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাত একটি অত্যান্ত সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতের উপযুক্ত জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে জাতি দ্রুত এগিয়ে যাবে। এখাতের বিকাশে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ঘরে বসে বিদেশের কাজ করে মানুষ টাকা রোজগার করছে। ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যখন আমাদের মা বোনেরাও গ্রামে গঞ্জে নিজ বাড়িতে বসে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানীর কাজ করে টাকা আয় করতে পারবে, তখন জীবন যাত্রার মানও আরও বাড়বে। বক্তারা মেলার আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ মেলা তথ্য প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলেও তাঁর আশাবাদ ব্যাক্ত করে মেলার উদ্বোধন ঘোষনা করেন। সেমিনারে উপস্থাপনা করেন ফারজানা শারমীন। আইসিটি এক্সপো সিলেট-২০১৫‘র প্লাটিনাম স্পন্সর হিসাবে রয়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানী গ্রামীনফোন।
এতে প্রবেশ ফি রাখা হয়েছে ১০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড প্রদর্শন করে ফি ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবে।
মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটের ওপর র‌্যাফেল ড্রয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এতে নেটবুকসহ বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে।
প্রদর্শনী উপলক্ষে পৃষ্ঠপোষক, সহযোগী ও প্রদর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে পণ্য ও সেবা বিক্রিতে আকর্ষণীয় মূল্য ছাড়। সেই সঙ্গে বিশেষ উপহার এবং বিশেষ সুবিধা। ফলে দর্শনার্থীরা আকর্ষণীয় মূল্যে পছন্দের প্রযুক্তিপণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন।