জন্মদিনে শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী

Pic Ex Vc Sodoruddin sir-2জন্মদিনে শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পদার্থ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী’র ৮৫তম জন্মদিনে স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা প্রবীণ এ শিক্ষাবিদকে অভিনন্দিত করেন। শাবি’র সাবেক উপাচার্য ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেটের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ-এর নেতৃত্বে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা গতকাল সন্ধ্যায় ফুল ও কেক নিয়ে ডঃ চৌধুরী’র সুবিদবাজারস্থ বাসভবনে উপস্থিত হন ।
ঘরোয়া আয়োজনে কেক কেটে সিলেটের এ কৃতিসন্তানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান শ্যামল, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমর বিজয় সি শেখর, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ব্যুরো প্রধান রেজওয়ান আহমদ, সরকারি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সিলেট ব্যুরো প্রধান চয়ন চৌধুরী, লোক সংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাস, দৈনিক সবুজ সিলেটের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক ছামির মাহমুদ, প্রবাসী সমাজকর্মী শাহানা বেগম, প্রথমআলোর শাবি প্রতিনিধি মুন্সি মিসবাহ উদ্দিন ও সমকাল’র শাবি প্রতিনিধি তন্ময় মোদক প্রমুখ ।
প্রসঙ্গত, ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী-একাধারে শিক্ষাবিদ, পদার্থ বিজ্ঞানী, ভাষাসৈনিক, গবেষক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দক্ষ প্রশাসক ও পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক। বর্নাঢ্য পেশাজীবনে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন সহ আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে তিনি নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন ।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফুলবাড়ি গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে ১৯৩১ সালের ১লা জানুয়ারী ডঃ ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী জন্মগ্রহন করেন। বইটিকর পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে তিনি ১৯৪১ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তদানন্তীন সমগ্র আসাম প্রদেশে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি পান । পরে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে এমসি কলেজ থেকে আইএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৫৫ সালে এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরের বছরই রাজশাহী কলেজের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারে রির্সার্চ স্টুডেন্ট হিসেবে গবেষণাকাজে জড়িত হন। ১৯৫৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। পরে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ‘এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফী’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফী বিষয়ে গবেষণা ছাড়াও ‘হিউম্যান ইনসুলিন’ আবিষ্কার তাঁর মৌলিক আবিষ্কার। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বীকৃৃত জার্নালে তাঁর ৪০টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। পালন করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা। সুদীর্ঘ ৫৮ বছর শিক্ষকতা জীবনে তিনি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো ও ১৯৯৪-৯৬ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির সভাপতি, ওর্য়াল্ড ইউনিয়ন অব ক্রিস্টালোগ্রাফীর সদস্য ছিলেন। প্রফেসর ছদরুদ্দিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ইন কমপিউটিং মেথডস, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোতে সপ্তম ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অব ক্রিস্টালোগ্রাফী, ইটালিতে ন্যাটো অ্যাডভানস্ড ইনস্টিটিউট ইন ক্রিস্টালোগ্রাফী, হল্যান্ডের আমস্টারডামে দশম আর্ন্তজাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের ইয়কর্ -এ ন্যাটো অ্যাডভানস্ড ইনস্টিটিউট ইন ডাইরেক্ট মেথডস্, কানাডার অটোয়াতে ১২তম আর্ন্তজাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, ভারতের দিল্লিতে কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সভা, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজের বার্ষিক সাধারণ সভা, যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের ১৫তম সভায় সভাপতি হিসেবে, ১৭তম আর্ন্তজাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, তুরস্ক, পাকিস্থান, সিঙ্গাপুর ও ভারতে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ও সেমিনারে অংশগ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সহজ সরল জীবনযাপনের অধিকারী অধ্যাপক চৌধুরী প্রকৃত অর্থে মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল ধ্যানধারণার অধিকারী। এক অনাড়ম্বর আয়োজনে বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। বিজ্ঞপ্তি