হাসপাতালই তার বাড়ি, রোগ ছাড়াই বছরের পর বছর থাকছেন হাসপাতালেই (ভিডিও)

ডেস্ক রিপোর্টঃ দুইশ শয্যার পটুয়াখালী হাসপাতাল। প্রতিদিন কত রোগীই না আসেন এখানে চিকিৎসার জন্য। কেউ আসেন কেউ যান। তবে ব্যতিক্রম একজনই। রোগবালাই নেই। তার পরও হাসপাতালেই কেটে গেছে তাঁর চার বছর। পটুয়াখালী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাম-পরিচয় না জানা এ অশীতিপর বৃদ্ধার নাম রেখেছেন হায়াতুন্নেচ্ছা। তবে কোথা থেকে কীভাবে হায়াতুন্নেছা হাসপাতালে এলেন, তা জানাতে পারেননি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কেউই।
প্রথমে রোগী হিসেবে হাসপাতালে থাকলেও এখন আর হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় নাম নেই হায়াতুন্নেচ্ছার। যাওয়ার জায়গাও নেই তাঁর। তাই হাসপাতালের বারান্দাতেই বসবাস করেন তিনি। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে বছর। কিন্তু জীবন গতি থেমে আছে এক জায়গাতেই।
পটুয়াখালী হাসপাতালের নার্স আরতি রানী ম-ল বলেন, ‘স্যার বললেন, রেজিস্ট্রারে এতদিন নাম রাখা ভালো না। আপনি নাম কেটে ডিসচার্জ করে দিন। ওকে এমনি রাখেন। জ্ঞান ফিরে আসলো, তো আমরা তার নামও জানি না। কী বলে ডাকব, তাই হায়াতুন কইতাছি।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এফ এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাঁকে ওয়ার্ডের বাইরে রেখেছি। কখনো বৃষ্টি এলে আমরা তাঁকে ভেতরে নিয়ে যাই। কোনো পরিচিত লোক কাছে ছিল না। ওয়ার্ডবয় বা যারা ছিল, তাদের জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার, কোথা থেকে এলো? তারা আমাকে বলল, একে পুলিশ দিয়ে গেছে।’
হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কলাপাড়ায় একজন কলিগ ছিল। সে আমাকে বলল, এ রকম একজন রোগী গেছে হাসপাতালে, তো দেইখো। পরদিন সকালে গিয়ে আমি তাকে ভর্তি দেখেছি।’
মোহাম্মদ আলীর কথার সূত্র ধরে এনটিভি টিম যায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে পুরোনো নথি ঘেঁটে জানা যায়, কুয়াকাটা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এক সদস্য বৃদ্ধাকে দিয়ে যান এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কথা হয় সেই নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যের সঙ্গে। তাঁর নাম আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে রাঙ্গাবালী থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটার তুলাতলী এলাকা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় অন্য এক নারীর সহায়তায় তাঁকে প্রথমে কুয়াকাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। পরে তাঁকে কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আমিই নিয়ে যাই তাঁকে।’
তবে হায়াতুন্নেছার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি এ পুলিশ কনস্টেবলও। হায়াতুন্নেছার সঙ্গে কথা বললে তিনি বাড়ি যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাড়িতে তাঁর ছেলেমেয়ে আছে বলে জানান। আর গ্রামের নাম জানান ডামুড্যা।