প্রশ্ন ফাঁস আন্দোলন মুক্তির আন্দোলন : এ্যাড, সিরাজী এম আর মোস্তাক
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৫, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নাটকীয় প্রশ্ন ফাঁসের কারণে ছাত্রসমাজ যে দুর্বার আন্দোলন শুরু করেছে, তা শুধু ভর্তি সুযোগ বঞ্চিত ছাত্রদের আন্দোলন নয়। এটি মেডিকেলে অধ্যায়নরত ও ভবিষ্যতে মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক সবারই আন্দোলন। এটি অন্যায়ভাবে ভর্তির সুযোগ লাভের আন্দোলন নয়, বরং মেধার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের নিমিত্তে একটি বৈধ আন্দোলন। অবৈধ স্বার্থ হাসিল বা পরশ্রীকাতরতা নয়, বরং চিকিৎসা বিভাগের ওপর আরোপিত ঘৃণিত কলঙ্ক থেকে মুক্তির আন্দোলন।
এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে এর প্রতিবাদ হয়েছে। শত শত চিকিৎসক বিবৃতি দিয়েছেন। রাজপথে আন্দোলন করেছেন। অথচ ‘৭১ এর নরপশু ইয়াহিয়া খানের মতো স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের এক হুংকারেই সব আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশে অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের এই হলো পরিস্থিতি।
ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা নারীরা আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদেরকে কি এমন শিক্ষা দিয়ে গেছেন? কখনো নয়। তারা আমাদেরকে যেভাবে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন, একইভাবে আমাদেরও উচিত প্রশ্ন ফাঁসের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হওয়া। এজন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। ইয়াহিয়া খান ও তাদের যুদ্ধাপরাধী সেনাবাহিনীর মতো এদেশেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার অসাধু বিএমএ চিকিৎসক গোষ্ঠি তথা বেতনভুক্ত ষঢ়যন্ত্রকারী বুদ্ধিজীবি মহল রয়েছেন। তারা প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়কে উড়িয়ে দেবার ঘৃণ্য ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা রিপোর্ট করেছে যে, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ভিত্তি নেই। জাতির সামনে তাদের বিকৃত চরিত্র আজ প্রশ্ন ফাঁসের মতোই পরিস্কার হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিশেষ অসাধুতায় এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বেশীরভাগ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা দলীয় কোটায় সুযোগ পেয়েছে। আর কতিপয় ছাত্র উক্ত কোটাভোগীদের সংস্পর্শে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পেয়েছে। উভয় পক্ষই অবৈধ সুযোগ লাভ করেছে। এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বাস্তবতা। এদেশে ত্রিশ লাখ শহীদের জীবনদান ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের আত্মত্যাগ সম্পুর্ণ বৃথা প্রমাণ হয়েছে। বত্রিশ লাখ আত্মত্যাগীর বিপরীতে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা ও ৪১ জন বীরাঙ্গনাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ বিকৃত তালিকাভুক্তদেরকে অন্যায়ভাবে সুবিধা দিতেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আর সে সত্য প্রকাশের ভয়ে ওমর সিরাজের মতো নিরীহ কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে। এসবই ইয়াহিয়া খানের জঘন্য কাজের সাথে তুলনীয়। আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রশ্ন ফাঁস যদি মিথ্যা হয়ে থাকে এবং প্রকৃত মেধাবীরাই যদি নির্বাচিত হয়ে থাকে, তাহলে পুণঃ পরীক্ষা নিতে ভয় কিসের? মেধাবী ও যোগ্য ছাত্ররা শতবার পরীক্ষা নিলেও উত্তীর্ণ হবে, এটাই সত্য। তারা প্রশ্ন ফাঁসের গ্লানি কখনই মানতে রাজি নয়। এ মিথ্যা অপবাদের বোঝা তারা কেনইবা বহন করবে? প্রয়োজনে আরো দশবার পরীক্ষা দিবে, তবু কোনো নরপশুর হুমকিতে তারা নত হবেনা। তারা দেশের সবচেয়ে যোগ্যতর দেশপ্রেমিক শ্রেণী। তারা নিজেদের সকল আরাম-আয়েশকে কোরবানি দিয়ে দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। তারা দেশ ও জাতির একনিষ্ঠ সেবক।
দেশের সবচেয়ে মেধাবী, যোগ্য ও দ্বায়িত্বশীল উক্ত দেশপ্রেমিক জনসমাজের ওপর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ দ্বারা অপমান ও লান্থণার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ লান্থণা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলন। এটি গ্লাণি থেকে মুক্তির আন্দোলন। অন্যায়ের বিরূদ্ধে সত্যের আন্দোলন। মেধাহীনতার বিরূদ্ধে মেধার অধিকার আদায়ের অন্দোলন। কোনো চক্রান্তই মেধাবী ছাত্রদের এ আন্দোলন নস্যাৎ করতে পারবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুণরায় সুষ্ঠু পরীক্ষা না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে ‘৫২ র ভাষা আন্দোলনের মতো তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। ১৯৭১ এর ত্রিশ লাখো শহীদের মতো সংগ্রামী জনতা প্রাণ বিসর্জন করবে। তবু আন্দোলন চলবে, ইনশাল্লাহ।
. ০১৭২৪-৭৫৫৭৮৫