উইমেন্স হাসপাতালের ৩ ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএমডিসি

Shafiসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলাকারী অর্থোপেডিক্স বিভাগের রেজিস্টার ডাক্তার জাবের আহমদসহ ৩ ডাক্তার ও ইন্টার্ণের সনদ বাতিলে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। বুধবার দুপুরে বিএমএডিসির রেজিস্টার ডা. জেড এইচ বসুনিয়াত অঙ্গহানির শিকার শিশু সাফির পিতা সিলেট টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি, বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন বদরুর রহমান বাবরকে এ আশ্বাস দেন।
বিএমডিসির বিজয়নগরস্থ কার্যালয়ে সাংবাদিক বাবর চিকিৎসায় অবহেলাকারী ডাক্তার জাবের আহমদ, ডা. তানভীর আহমদ চৌধুরীর সনদ বাতিল ও ইন্টার্ণ শাফিনাজ মোস্তফাকে সনদ না দেওয়ার আবেদন জানালে বিএমডিসির রেজিস্টার অভিযোগটি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ডিসিপ্লিনারি কমিটি হাসপাতালের পরিচালককে চিঠি দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে অভ্যন্তরীন কোনো তদন্ত করা হয়েছে কি না তা জানতে চাইবে। এছাড়া অভিযুক্ত ডাক্তার ও ইন্টার্ণ-এর কাছে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেবে কমিটি।
সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর বলেন, চিকিৎসায় অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন নিয়ে বিএমডিসির রেজিস্টারের সাথে দেখা করলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
২৩১ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর উল্লেখ করেন, গত ১৮ জানুয়ারি তার নয়াসড়কস্থ বাসার দরজার হেজবল্টে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় ছেলে সাফি। ডানহাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ্ববর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সাফিকে নিয়ে যান। এ সময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করে। পরবর্তীতে ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত¡াবধানে হাসপাতালের ৫ তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডা. তানভীর আহমদ চৌধুরী ও ইন্টার্ণ ডা. শাফিনাজ মোস্তফা সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। সেলাইকালে তানভীল ও শাফিনাজ মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছিলেন। এর ফাঁকে তারা সময়ক্ষেপন করে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। এ সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ তার সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘ডাক্তার আমরা, না আপনি ?’
অপারেশনের পর সাফিকে হাসপাতালের ৫০৫ নং কেবিনে সাফিকে নেওয়ার পর ডা. জাবের বাসা কাছে থাকায় সাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের সমূদয় বিল পরিশোধ করে সাফিকে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালের ছাড়পত্রে কর্তৃপক্ষ কৌশলে নিজেদের বাঁচিয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্রে ৩ দিন পর ড্রেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বর্হি:বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর ২০ জানুয়ারি হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. মহসিন শিশু সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারো ডা. মহসিনের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ডা. মহসিন হাসপাতালের ৫ম তলায় ডা. কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডা. কাজী সেলিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডা. জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারো ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডা. জাবের। এ সময় চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডা. জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজের করবেন বলেও জানান ডা. জাবের।
পরবর্তীতে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী কয়েকবার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় সাফির ক্ষতস্থান। এক পর্যায়ে ক্ষতস্থানে পুজ জমলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ হাসপাতালের প্যাডে মেডিএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. আবদুল মান্নানের কাছে রেফার্ড করেন। ওই দিনই ডা. মান্নানের কাছে সাফিকে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্ষতস্থানে গ্যাংগ্রিন হওয়ায় ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলেন।
ছেলের আঙ্গুল যাতে রক্ষা করা যায় তার জন্য তাকে নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে যান সাংাবিদক বদরুর রহমান বাবর। সেখানেও হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলা হয়। এতে নিরাশ হয়ে সিলেট ফিরে সাফিকে ডা. আবদুল মান্নানের তত্ত¡াবধানে মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে গত ১৭ ফেব্রয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে সাফির ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় ২৬ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করেন। আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি চিকিৎসায় অবহেলার কারণে আমার ছেলের আংশিক অঙ্গহানি সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটিও চিকিৎসায় অবহেলার সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আদালত বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির মতামত পেয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ২৮ জুলাই চিকিৎসায় অবহেলাকারী ডাক্তার ও ইন্টার্ণে বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। আগামী ২ নভেম্বর এ মামলায় অভিযুক্তরা আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।