বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্যে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ‘টিপিপি’

TPP & Bangladesh EXPORT Market in Danger - 02মাঈনুল ইসলাম নাসিম : যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রুনাই, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর এই ১২টি দেশের মধ্যকার বিশেষ মুক্তবানিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার মধ্য দিয়ে অতি সম্প্রতি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) যাত্রা শুরু করায় ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পতিত হয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্য। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টরা ‘টিপিপি’-কে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের জন্য। শুধু এক ভিয়েতনামই অবধারিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দখল করে দেবে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের বিশাল বাজার, এই প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন ২০১০ থেকে ২০১৪ ভিয়েতনামে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা।
পেশাদার এই কূটনীতিক গত বছরের শেষার্ধ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত আছেন মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে। ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি মেক্সিকো, যাদের বার্ষিক রপ্তানী ৮শ’ বিলিয়ন ইউএস ডলার। সঙ্গত কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় শুল্কমুক্ত এই নতুন জোট টিপিপি’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ১২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মেক্সিকো। টিপিপি ইস্যুতে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “এখানে আসার আগে পাঁচ বছরে ভিয়েতনামে থাকাকালীন ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নিয়ে আমি অনেক স্টাডি করেছি, শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে বাদ রাখিনি রিপোর্ট লিখতে, যাতে সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানো যায়”।
রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “রাষ্ট্রদূত হিসেবে হ্যানয় থেকে আমি আমাদের মাননীয় বানিজ্য মন্ত্রীকেও লিখেছিলাম। মনে হয় আমার পাঠানো রিপোর্টগুলো কেউ কোনদিন পড়েও দেখেনি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা কোন ফলো-আপ করি না। চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ১২টি দেশ বহুল আলোচিত-সমালোচিত এগ্রিমেন্টে সই করে ফেলায় বাংলাদেশকে ১৬-১৭% ট্যাক্স দিয়ে পন্য রপ্তানী করতে হবে টিপিপি ভুক্ত অধিকাংশ দেশে, যাদের সাথে বাংলাদেশের আগে থেকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) নেই। যুক্তরাষ্ট্রে আগে আমরা যে সুবিধা পেতাম সেটা না থাকায় এমনিতেই বিপদে ছিল আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর, তার উপর এখন টিপিপি’র বদৌলতে ভিয়েতনাম শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে যে কাজটা করবে, তাতে করে শুধু এই একটি দেশের কাছেই শেষ হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী গার্মেন্টস পন্যের বাজার”।
রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা আরো জানান, “প্রায় ২২টি দেশ ও গ্রুপের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করার জন্য ভিয়েতনাম গত ১০-১২ বছর ধরে নিগোসিয়েশন করে এসেছে। এখন টিপিপি’র সুফল কড়ায়গন্ডায় পাবে তারা। জাপান ও কোরিয়ার সাথে আগেই ‘এফটিএ’ ছিল ভিয়েতনামের। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথেও তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করেছে। আমরা বাংলাদেশের জন্য যদি আরো আগে থেকে বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করে রাখতে পারতাম, তবে আজ এই ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চালু হবার পর কিছুটা হলেও রেহাই পেতাম। কারণ টিপিপি ভুক্ত ১২টি দেশই নিয়ন্ত্রন করছে এবং করবে গোটা বিশ্বের মোট বানিজ্যের চল্লিশ শতাংশ”।
টিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিনষ্ট হবার আশংকা প্রকাশ করেছেন গত ৬ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, “টিপিপি’র কথা আমি শুনেছি। যদিও এই নোগোসিয়েশনের সাথে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না, তবে এটা বলতে পারি যে, টিপিপি এগ্রিমেন্ট বাংলাদেশের জন্য খুব ক্ষতিকারক হবে”। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ড. মোমেন স্পষ্ট করেই বলেন, “বিশেষ করে ভিয়েতনাম আমাদের কমপিটিটর, তারা যখন সস্তায় টিপিপি কান্ট্রিতে পন্য বিক্রি করবে, তখন বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বো আমরা”। উল্লেখ্য, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।