হবিগঞ্জে ‘জ্বিনের বাদশা’ আটক
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হবিগঞ্জে কথিত এক জ্বিনের বাদশাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে জেলা সদরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি পিতলের মূর্তি ও সোনালী রঙের কিছু অলঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।
সে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুকানুপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে আতিউর রহমান (২২)।
পুলিশ জানায়, সে কথিত জ্বিনের বাদশা চক্রের একজন অন্যতম সদস্য। দীর্ঘদিন থেকেই বাহুবল উপজেলার কাইতগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী সেলিম খানের স্ত্রী রাণী খানকে রাতে মোবাইল ফোনে ভয় দেখাতে থাকে। অত্যন্ত কৌশলে তার সাথে প্রতারণার ছক আঁকে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার আতিউর একটি মূর্তি নিয়ে তার সাথে দেখা করতে পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় আসে। এর আগে তার সাথে দেখা করার জন্য রাণীকে তার সব স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে আসতে বলা হয়। বিষয়টি রাণী সদর থানায় অবহিত করলে পুলিশ সেখানে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়। রাণী স্বর্ণালী রঙের ধাতব পদার্থের কিছু নকল স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। বেলা দেড়টার দিকে সে রাণীর সাথে টার্মিনালের একটি অংশে গাড়ির পেছনে অধিকতর নির্জন স্থানে দেখা করতে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আতিউর জানায়, সে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানীতে চাকরী করে। তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম কাপাশিয়ার শামীম (৩০) এ প্রতারণার ছক তৈরি করেছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে তার সাথে ওই মহিলার কথা চলছে। ইতিমধ্যে সে মহিলার নিকট থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। মঙ্গলবার সেই তাকে একটি পিতলে মূর্তি দিয়ে ওই মহিলার কাছে পাঠিয়েছে। বলেছে মূর্তিটি ওই মহিলাকে দিয়ে যেতে।
প্রতারণার শিকার ইতালি প্রবাসী রাণী খান জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে প্রথমে তার মোবাইল ফোনে কে একজন ফোন করে। শুরুতেই সে নানান রকম দোয়া-দূরুদ পড়তে থাকে। অনেক ছুরা পড়ে। এক পর্যায়ে সে নিজেকে জ্বিনের বাদশা পরিচয় দেয়। বলে তার কথা না শোনলে সন্তানের ক্ষতি হয়ে যাবে। সে মারা যাবে। এর মাঝে আমি ফোন কেটে দিলে সে আবারও ফোন দিয়ে নানান রকম ভয় দেখায়। পরদিন রাত ১২টার দিকে ফোন দিয়ে একই রকম ভয় দেখাতে থাকে। সর্বশেষ ঈদুল আযহার দিন সে রাত ১২টার কিছু পরে ফোন দিয়ে আমার সন্তান মারা যাওয়ার ভয় দেখিয়ে বলে আমার স্বর্ণালঙ্কারগুলো নিয়ে গেলে সে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দেবে। আর একটি মূর্তি দেবে তার কাছে যা চাইব তা-ই পাওয়া যাবে। তাতে আমার সব বিপদ কেটে যাবে। এক পর্যায়ে আমি বিষয়টি প্রতারণা বুঝতে পেরে সদর থানায় অবহিত করি। এদিকে তার দেয়া কথামতো আমি কিছু নকল স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে আমার দুইজন ননদকে সাথে নিয়ে যাই। প্রথমে সে বলে তুই বড্ড দেরি করেছিস। আমি নামাজ পড়ে আসি। পরে সে মোবাইল ফোনে আমাকে একটি বাসের পেছনে নির্জন স্থানে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর আরেকজন আমাকে একটি পিতলের মূর্তি দিয়ে আমার কাছে থাকা নকল স্বর্ণালঙ্কার হাতে নেয়। তখন পূর্ব থেকে অপেক্ষমান পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।