কারাগারে জি কে গউছের ওপর হামলা : হামলাকারী তিন দিনের রিমান্ডে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের ভেতরে একজন খুনের আসামির হামলায় গুরুতর আহত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র (সদ্য সাময়িক বরখাস্ত) ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছকে চিকিৎসা শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জি কে গউছ সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে তিনি হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন।
গউছের ওপর এ হামলার ঘটনায় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ঘটনার দিন শনিবার রাতেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। পাশাপাশি কারাগার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছে।
হবিগঞ্জ জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন গত শনিবার সকাল নয়টার সময় কারাগারের ভেতরে পবিত্র ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে ইলিয়াস মিয়া নামের এক খুনের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হঠাৎ করে লোহাজাতীয় কিছু দিয়ে গউছের ওপর হামলা চালান। এতে তাঁর পিঠে ক্ষত ও রক্তক্ষরণ হয়। এ ঘটনার পর প্রথমে তাঁকে কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হবিগঞ্জ জেলা আধুনিক হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আনা হলে তাঁর পরামর্শে গউছকে ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
জি কে গউছের ওপর এ হামলার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ওই দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা সেখানে হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনার পরদিন গত রোববার হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্র হরতাল পালিত হয় জেলা বিএনপির ডাকে।
হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই অভিযুক্ত আসামি ইলিয়াস মিয়াকে বিবাদী করে হবিগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। কী কারণে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামি জি কে গউছের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয় বলে জানান কারা তত্ত্বাবধায়ক।
হামলাকারী ইলিয়াস মিয়া আদালতে জানান অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরকে হত্যার জন্য ১২ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র জি কে গউছ। কারাগারে বসে এ চুক্তি করা হয়। আর এই চুক্তি পূরণ না করায় গউছের ওপর হামলা চালানো হয়।
বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মামুনুর রহমান ছিদ্দিকীর আদালতে এ কথা বলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে আটক জি কে গউছের ওপর হামলাকারী ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন।
এসময় ছোটন দাবি করেন, চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল তাকে ঈদের আগে জামিনে মুক্ত করা এবং অগ্রিম হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেয়া। এর কিছুই করেননি জি কে গউছ। এতে তার মনে সন্দেহ হয়, হয়তো চুক্তির বিষয়টি ফাঁসের আশংকায় তাকেই হত্যা করা হতে পারে। এ কারণেই তিনি জি কে গউছের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালতে তিনি নিজেই তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জি কে গউছের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ইলিয়াছকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। রিমান্ড আবেদনে পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু বলেন, কারাগার হলো নিরাপদ স্থান। এর ভেতরে অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সৃষ্ট ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে জেলের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের তথ্য উদঘাটনে ইলিয়াছকে সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী।
পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতুকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল দুদু, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান কাজল, অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো, অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান খান সজল।
এদিকে কারাগারে ভেতরে জি কে গউছের ওপর হামলা বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে তদন্ত করছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এই কমিটি ইতোমধ্যেই কারাগার পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান এডিএম সফিউল আলম জানান, যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ১৮ জুলাই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।