থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ৯ মাসের বন্দী জীবনের বর্ণনা দিলেন উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি টুটন

tutonসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘থাই-মালয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মানব পাচারকারীদের ক্যাম্পগুলোতে ৫শ’র বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এরা সকলেই মানব পাচার এবং অপহরণের শিকার।’ ভাগ্যের জোরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত ও রকম একটি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা এক অভিবাসী এ তথ্য জানিয়েছেন বলে এএফপির খবরে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে প্রায় ছয় মাস আগে মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয় বলে জানায় বেঁচে যাওয়া ওই অভিবাসী। তিনি যে ক্যাম্পে ছিলেন সেখানে আরও ৭০০-৮০০ অভিবাসীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি জানায়, ‘আমার মা জমি বিক্রি করে মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে ছাড়িয়ে এনেছে। এজন্যে আমি এখনো জীবিত আছি।’ ওই ব্যক্তি জানায়, শুধুমাত্র তিনি যে ক্যাম্প ছিলেন ওই ক্যাম্পে তার সামনে ১৭-২০ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গুলি করে অথবা নির্যাতন চালিয়ে এদের হত্যা করা হতো। যেসব বন্দিদের স্বজনরা মুক্তিপণ দিতে পারতো না তাদের ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ডের সাদাও জেলার সংখলা জঙ্গলে গণকবর থেকে গত শুক্রবার উদ্ধার করা হয় ২৬টি লাশ। এ সময় এক ব্যক্তিকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধারে করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সান হেরাল্ড ডট কমের খবরে বলা হয়, বর্তমানে পাদাঙ বেসার হাসপাতালে অপুষ্টির জন্য চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং নিজের নাম বলেছেন টুটন সাহা। তিনি বলেছেন, তার কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হলেও তিনি দিতে পারেননি। এ কারণে দালালরা তাকে লাঠি দিয়ে মারতো। তিনি বলেন, ৯ মাসের বন্দী জীবনে তাকে সাতটি ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তার মতে অন্য ক্যাম্পগুলোতেও গণকবর রয়েছে। তার ভাষায়, ‘পাচারকারীরা একদিন পুলিশ আসছে, পুলিশ আসছে বলে চিৎকার শুরু করে। কিন্তু আমি নড়তে পারছিলাম না। তারা আমাকে বলল, তুমি মালয়েশিয়া যেতে পারবে না, তুমি এখানে থাইল্যান্ডেই মর। এ বলে তারা আমাকে ফেলে চলে যায়।’
ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয় টুটন সাহাকে একটি নৌকায় করে থাইল্যান্ডের ওই জঙ্গলে আনা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ওই ক্যাম্পে তার অবস্থানকালে কমপক্ষে ৪০ জন অভিবাসী মারা গেছে। এর মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি। অন্যরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। তারা অপুষ্টি, অনাহার এবং নিপীড়নেই মারা যায় বলে তিনি জানান।
এদিকে থাই পুলিশ এ ঘটনায় তিনজন থাই কর্মকর্তা ও মিয়ানমারের এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। এ গ্রেপ্তারের ঘটনায় এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে মানবপাচারের ঘটনায় স্থানীয় থাই কর্মকর্তারাও জড়িত। এ ঘটনায় থাইল্যান্ডের উপ পুলিশ কমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গলে যাবে বলেও জানায় পুলিশের এক মুখপাত্র।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমানে থাইল্যান্ডে বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি চলছে। ছুটি শেষে দূতাবাসে নিযুক্ত কনস্যুলার (অ্যাকসেস) উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশির ইন্টারভিউ নেবেন। এছাড়া দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতও সেখানে গিয়েছেন তিনি বিষয়টি নজর রাখছেন। সেখানে যাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের শেল্টার হোমে রাখার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডে নিরীহ বাংলাদেশিদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে হবে। যেন তারা জীবন বাজি রেখে সমুদ্রে পাড়ি না দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধভাবে সমুদ্র পথে বিদেশ গমন বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।