স্কুলের সামনে খোলা খাবার ও খেলনা সামগ্রীর দোকান নয়

Raju Ahmedগ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা । পানিবাহিত রোগ হওয়ায় বছরের এ সময়টায়তে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগের প্রকোপ দেখা যায় । চিকিৎসালয়গুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের উপচানো পড়া ভীড় দেখেই অনুমান করা যায় দেশের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাধিক্য । পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি । শিশুদের মধ্যে আবার যারা স্কুলগামী তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি । বৈশ্বিক উষ্ণতা ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বছরের বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় । বিশেষত গ্রামের চেয়ে গণবসতিপূর্ণ শহরের বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে । স্কুল পড়ুয়া যে সকল বাচ্চারা বাইরের খোলা খাবার ও দুষিত পানি পান করে তাদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শতভাগ বেড়ে যায় । অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে সন্তানের মায়াবী আব্দারে কখনো কখনো ক্ষতিকর জেনেও বাইরের খাবার কিনে দিতে হয় । এছাড়াও কিছু কিছু বাচ্চা মা-বাবাকে লুকিয়েও সাময়িক মজাদার এ সকল খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায় । সুতরাং বাড়তি সচেতনতাও অনেক সময় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে না । এজন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগে সমস্যা লাঘব করা সম্ভব ।

যে সকল স্থানের খাদ্য গ্রহনের ফলে স্কুলগামী শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তার মধ্যে স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে ভাসমান খোলা খাবারের দোকানের দুষিত খাবার অন্যতম । এসকল খোলা খাবারের দোকানে ভূণা খিচুরীর নামে নিম্ন মানের ডাল, পাম ওয়েল ও নালার দুষিত পানির মিশ্রন, আখের রস, উম্মুক্তস্থানে কেটে রাখা তরমুজ কিংবা বাঙ্গীর অংশ বিশেষ, কম দামী আইসক্রিম, আচারজাতীয়, শরবত, ফুচকা, চটপটি ও বিভিন্ন ধরণের নিম্ন মানের জুস । স্কুলে প্রবেশের সময়, টিফিন পিরিয়ডে কিংবা ছুটির শেষে শিশুরা বায়না করে এই সকল ক্ষতিকর খাদ্য থেকে কিছু একটা কিনে দেওয়ার জন্য । বাসা থেকে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে টিফিনে দেওয়া হলেও শিশুরা বাইরের খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে । বাইরের খাবার কিনে দিতে অভিভাবকরা রাজী না হলে শিশুরা রাস্তায় বসেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় । তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা শিশুদেরকে এসব খাবার কিনে দিতে বাধ্য হয় । এ সকল খাবার খাওয়ার পরেই শিশুরা একের পর এক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । কখনো কখনো জীবনহানীও ঘটে । শিশুদেরকে নিয়ে অভিভাবকদের শুরু হয় দুশ্চিন্তা, চিকিৎসার জন্য অনেক ব্যয়, সর্বোপরি অসুস্থ শিশুরা পাঠের ক্ষেত্রে ব্যাপক পিছিয়ে যায় ।
স্কুল ও কোচিং সেন্টার মূখী সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের আরও কতগুলো মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয় । খেলনা সামগ্রীর প্রতি শিশুদের টান চিরন্তন । শিশুদের যত খেলনা থাকুক তারপরেও তাদের আরও নতুন নতুন খেলনা চাই । প্রতিদিন নতুন খেলনা কিনে দেওয়ার মত সামর্থ্য এদেশের অধিকাংশ অভিভাবকের নাই । খেলনা দেখলেই শিশুরা আব্দার করে তা কিনে দেওয়ার জন্য । শিশুদের এমন আব্দারে প্রায়ই সময় বিব্রত হতে হয় । অনেক মানুষের মধ্যে যখন শিশু আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে নতুন খেলনা পাওয়ার দাবীতে কান্না শুরু করে তখন তা কিনে না দিয়ে কোন গত্যন্তর থাকে না । আর্থিক সঙ্গতি ভাবার মত সময় থাকে না । খেলনা সামগ্রী বিক্রেতারাও এ সুযোগটি নিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে তাদের সুযোগবাদী ব্যবসার পসরা সাজায় । স্কুলপড়ুয়া সন্তানটি এক্ষেত্রে বেশি জ্বালাতন না করলেও মা-বাবার সাথে যদি স্কুল যাওয়ার বয়স না হওয়া কোন ২-৫ বছরের সন্তান থাকে তবে প্রতিদিনই বেগতিক অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং অভিভাবককেও লজ্জার মুখোমুখি হতে হয় ।
কর্তৃপক্ষকে এ সকল খোলা খাবারের দোকান ও খেলনা সামগ্রীর ভ্যান স্কুল ও কোচিংয়ের সামনে থেকে অপসারণ করতে হবে । পানিবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে বছরের এ সময়টাতে শিশুদেরেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে । স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি এসকল উদ্যোগ কার‌্যকরে অক্ষম হয় তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া উচিত । কঠোরতা অবলম্বন করে হলেও গ্রীষ্মের এ সময়টাতে খোলা খাবারের দোকান ভিড়তে দেওয়া এবং বছরের সর্বসময় খেলনা সামগ্রীর দোকান স্কুল ও কোচিংয়ের সামনে ঘেঁষতে দেওয়া উচিত নয় । কোমলমতি, অবুঝ বাচ্চাদের অযাচিত বায়না থেকে রক্ষার জন্য কিছু কিচু ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করাও নিয়ম বহির্ভূত নয় । বাচ্চাদের বায়না পূরণে অভিভাবক আর্থিকভাবে অক্ষম না হলেও তাদেরকে ক্রন্দনমুক্ত রাখতে এবং বায়না মিটানোর পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাদের নিয়ে মানসিক ও শারীরিক ধকল থেকে রক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যাবশ্যক । কাজেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে বিনীত দাবী, যে কোনভাবে বাচ্চাদের স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে থেকে সকল মানহীন খোলা খাবারের দোকান ও খেলনা সামগ্রীর পসরা উচ্ছেদ করে কোমলমতি শিশুদের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং অভিভাবকদের দুশ্চিন্তামূলক সময় অতিবাহিত করার সুযোগ করে দিন ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর ।
[email protected],
01728465455