উদ্ভট অভিযোগে সবুজ সিলেট সম্পাদক’র বিরুদ্ধে শাহপরান থানায় মামলা : সাংবাদিকদের উদ্বেগ

Sabuj-Sylhetসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ দৈনিক সবুজ সিলেট সম্পাদক-প্রকাশক ও সিলেট জেলা প্রেসকাবের উপদেষ্টা মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে উদ্ভট অভিযোগে মামলা নিয়েছে শাহ পরান থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহ পরান থানায় তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করা হয়।
মামলায় মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রাতের আধারে ধানকাটার কল্পিত একটি ঘটনা সাজিয়ে চুরির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার দিনগত রাতে একজন নিরীহ বর্গাচাষিকে আটক করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগের প্রথম সারির একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মামলা রুজু করায় এ নিয়ে সাংবাদিক মহলেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাতে সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিকদের এক জরুরি সভা থেকে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা প্রেসকাবে কার্যনিবাহী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ শাহপরান থানা এলাকার সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত জুবের আহমদসহ অজ্ঞাত আরো ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে শাহপরান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমান। ওই মামলা দায়েরের সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াৎ হোসেন ছুটিতে থাকায় তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি রেকর্ড করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। মামলা দায়েরের পর ওসি সাখাওয়াৎ ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যোগদান করেন। যোগদানের পর গত ৩০ মার্চ রাত দেড়টায় মুজিবুর রহমানের স্বত্বদখলীয় খাদিমপাড়া কল্লগ্রাম বাইপাস সড়কের সন্নিকটের ভূমিতে ওসি সাখাওয়াৎ ও মামলার আসামি জুবের আহমদসহ ৩ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ জন সন্ত্রাসী ভূমির ওপর নির্মিত পাঁকা ঘরে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালায়। তারা ভূমিতে নির্মিত ঘরে বসবাসকারী চৌকিদারকে মারধর করে ঘর থেকে সকল মালামাল বাইরে ফেলে তালাবদ্ধ করে দেন।
এ বিয়য়টি মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসাকে অবহিত করেছিলেন। পরদিন ৩১ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে শাহপরান থানার ওসি সাখাওয়াতের নির্দেশে পুনরায় ৪জন পুলিশ সদস্য ভূমিতে অবস্থান করে বসবাসকারী চৌকিদার ও তার স্ত্রীকে গালিগালাজ করে ভূমি থেকে অন্যত্র সরে যেতে হুমকি দিয়ে ফিরে আসেন। চৌকিদার বিষয়টি সাথেসাথে ভূমি মালিক মুজিবুর রহমানকে জানালে তিনি পরদিন ১ এপ্রিল পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মুশফিকুর রহমান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৯ এপ্রিল রাতে একইভাবে শাহপরান থানা পুলিশ ও জুবের আহমদের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে মুজিবুর রহমানের ভূমিতে নির্মিত ঘরে হামলা চালায়। হামলার ঘটনা তখন শাহপরান থানার ওসি অস্বীকার করেছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শাহপরান থানা এলাকার সন্ত্রাসী জুবের আহমদ ও তার সহযোগীদের নিয়ে সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বত্বদখলীয় ভূমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন ওসি সাখাওয়াৎ নিজেই। এ ঘটনা আড়াল করতে গতকাল দুপুরে মামলা সাজানো হয় বলে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ৫টি গাড়ি যোগে থানার ওসি সাখাওয়াৎ ও জুবেরসহ বুধবার রাত দেড়টার দিকে সম্পাদক মুজিবুর রহমানে স্বত্বদখলীয় খাদিমপাড়া কল্লগ্রামের বাইপাস সড়কের সন্নিকটের সেই ভূমির ওপর নির্মিত ঘরের তালা ভেঙে হানা দেয়। এ সময় ঘরের ভেতরে রক্ষিত মূল্যবান জিনিসপত্রও তারা নিয়ে আসেন। পাশাপাশি ঘরের বাইরে ছিল বর্গাচাষি দুদু মিয়া ওরফে কালা’র বর্গাচাষ বাবত প্রাপ্ত হিস্যার কিছু ধান। ওই ধান দুদু মিয়া তাঁর ভূমি মালিকের কাছ থেকে কষ্ট করে চাষ করে ভাগের অংশ পেয়েছিলেন। পুলিশ ওই রাতে মুজিবুর রহমানের ঘরের বাইরে দুদু মিয়ার রক্ষিত ধান নিয়ে আসে। পাশাপাশি চোরাই ধান রাখার অভিযোগ এনে বৃদ্ধ বর্গাচাষী দুদুকে আটক দেখায়।
ওই রাতে ওসি সাখাওয়াৎ ও জুবের ভূমির ওপর সাটানো মুজিবুর রহমানের নামের সাইবোর্ডটিতে তাঁর নাম মুছে শামসুদ্দিন আহমদ নামের এক ব্যক্তির নাম লিখে চলে যান। শাহপরান থানাহাজতে আটক বর্গাচাষি দুদু মিয়া রাতের ঘটনা সম্পর্কে এ বর্ণনা গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় এভাবেই জানিয়েছেন।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় এমন তথ্য পেয়ে সিলেটের কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে ওসি সাখাওয়াতের সাথে থানা কম্পাউন্ডে দেখা করেন। ঘটনা সম্পর্কে ওসি জানান, দুদুু মিয়া নামের বর্গাচাষিকে শামসুদ্দিন আহমদ নামের ব্যক্তির ধান চুরি করে কাটার অভিযোগে থানায় লিখিত এজহার দিয়েছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে তিনি এজহারটি পড়েও শুনান। এজহারনামীয় আসামি বলেই দুদু মিয়া অরফে কালাকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। পরবর্তীতে ওসি সাখাওয়াৎ ধান কাটার কথিত চুরির অভিযোগ এনে সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বত্বদখলীয় ভূমিটির অন্য একজনকে মালিক সাজিয়ে শাহপরান থানায় মুজিবুর রহমান ও শাহপরান এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী আনসার মিয়ার নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে মামলা রুজু করেন।