স্বপ্ন পূরণ হলো না তামান্নার, স্তব্ধ পরিবার

pilot tamannaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ চারিদিকে শুধুই নীরবতা। পুরো বাড়ি জুড়ে কোনো সাড়া শব্দ নেই। অথচ বাড়ির সব ঘর জুড়ে অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে বাড়ির ড্রইং রুমে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এতো মানুষের উপস্থিতিতেও যেন সব কিছু নিস্তব্ধ।
ড. আনিসুর রহমান ও রেহানা ইয়াসমিনের একমাত্র মেয়ে রেহানা তামান্না রহমান। স্বপ্ন ছিল মেয়েকে বৈমানিক বানাবেন। মেয়ে আর কিছুদিন পরেই পূর্ণাঙ্গ পাইলট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করবেন।
এমনই সব স্বপ্নের মধ্যেই বুধবার (০১ এপ্রিল’২০১৫) দুপুরে এলো তাদের সব স্বপ্ন একসঙ্গে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হলেন তাদের মেয়ে ট্রেইনি পাইলট তামান্না রহমান।
তামান্নার এই মৃত্যু এতোটাই আকস্মিক যে ঢাকায় তার নিকুঞ্জের বাসায় সবাই শোকস্তব্ধ।
বুধবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, তার মা শোকে পাথর হয়ে ড্রইং রুমে বসে আছেন। ওপাশের সোফায় তার বাবা আনিসুর রহমান। কারো মুখে কোনো কথা নেই। তাদের চারপাশে আত্মীয় স্বজনের ভিড়। কিন্তু কেউই সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
তামান্নার বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির সভাপতি ক্যাপ্টেন শাহাব আহমেদ বীর উত্তম, প্রশিক্ষক আতিউর রহমান। তারাও নির্বিকার। কি বলবেন আদরের ধন হারানো শোকস্তব্ধ এই পিতা-মাতাকে।
ক্যাপ্টেন শাহাব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কিছুদিন আগেই হার্টের অপারেশন করা হয়েছে তামান্নার মায়ের। এরপর এতো বড় দুর্ঘটনার খবর তার জন্য অনেক বড় একটি শকড।
তামান্নার প্রশিক্ষক আতিউর রহমান বলেন, তার মা-ই তাকে ফ্লাইং ক্লাবে নিয়ে আসতো। একদিন মেয়ে বৈমানিক হবে- সেই স্বপ্ন এতদিন বুকে লালন করেছেন এই মা। আজকের এই দুর্ঘটনা তার জীবনের ভয়াবহ আঘাত।
নিকুঞ্জের ১২ নং সড়কের ওই বাড়ির বাইরে তামান্নার একমাত্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। তার পাশে বন্ধুদের ভিড়। কিন্তু কেউই যেন সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। তামান্নার ভাইয়ের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে প্রিয় বোন হারানোর অশ্রু।
একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ওই প্রশিক্ষণ প্লেনের প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন শাহেদ কামালকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় রাজশাহী সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।
অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিশেষ প্লেনে করে ঢাকা সেনানিবাসের সিএমএইচে আনা হয় তাকে। শাহেদের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত রাজশাহীতে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না ফেরদৌস নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন পাইলট লে. কর্নেল সাঈদ কামাল। তামান্না ফেরদৌসের বাড়ি ঢাকার নিকুঞ্জ-২ এলাকায়। আর সাঈদ কামালের ঠিকানা এখনও জানা যায়নি।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এসময় বিমানটিতে ওই দু’জনই ছিলেন। শাহ মখদুম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।