সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ৭০০ পুলিশের নিবাস!

Sylhet Police Lineনুরুল হক শিপুঃ পুলিশের জীবন কর্তব্যের। যেন কর্তব্যের ছকে বাধা তাদের জীবন। আর সিলেট মহানগর পুলিশ বাহিনী নগরীর মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার কাজেই সব সময় থাকতে হয় ব্যস্ত। কিন্তু যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন তাদের নিরাপত্তা যেন রয়েছে হুমকির মুখে। প্রশ্ন ওঠেছে মানুষের নিরাপত্তাদাতা পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে। কে দিবে তাদের নিরাপত্তা? আর এমন প্রশ্ন ওঠবেই না কেন। অবশ্যই প্রশ্ন ওঠার পেছনে রয়েছে নানা কারণ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত হয় পুলিশ লাইনে একটি ভবন। যে ভবনে বর্তমানে মহানগর পুলিশের ৭’শ সদস্য বসবাস করেন। অবশ্য যে জায়গার ওপর ভবনটিতে মহানগর পুলিশের ৭’শ সদস্য বসবাস করছেন তাও আবার পরের জয়গা; আর পরের ঘরেই তাদের বাস। ভবনে ২’শ পুলিশ সদস্য বসবাস করার কথা থাকলেও বর্তমানে বসবাস করছেন ৭’শ সদস্য। তাও আবার নিরাপত্তাহীনভাবে, রিতিমত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আর গাদাগাদিতো আছেই। ওই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ২০১২ সালে। সে সময় ধরা পড়ে ভবনটিতে বেশ কিছু ফাটল। ছাদের বড় বড় পাঁকা কিছু অংশ ওই বছর ভেঙেও পড়েছিল। এরপর কিছু সংস্কার কাজ করানো হয় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু ভবনটির ঝুঁকি আজও কমেনি।
জানা যায়, ভূমি কম্পের ডেঞ্জার জোন হিসেবে বিবেচিত সিলেটে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলে পুলিশ লাইনের ৩ তলা বিশিষ্ট ওই ভবনে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। পুলিশ সদস্যরা জানান, বড় ধরণের নয় ভবনের দেয়াল থেকে শুরু করে ভবন যে পরিমান ঝুঁকিতে রয়েছে তাতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পন হলে বড় ধরণের বিপদ ঘটতে পারে।
আরআই অফিস সূত্র জানায়, সিলেট জেলা পুলিশের জায়গায় পুলিশ লাইন। ওই জায়গায় ৫০ থেকে ৬০ বছর আগের ৩ তলা বিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বর্তমানে মহানগর পুলিশের ৭’শ সদস্য বসবাস করছেন। ভবনের নিচ তলায় রয়েছে এসি ফোর্স অফিস, আরআই অফিস, এএসআই ফোর্স অফিস, রেশন স্টোর, পোশাক ভান্ডার কক্ষ, মটরযান শাখা, ২য় ও ৩য় তলায় কনস্টেবলদের থাকার বেরাক। ওই দুটি তলায় পুলিশ সদস্যরা গাদাগাদি করে থাকছেন। আর সেজন্য কিছু পুলিশ সদস্য ভবনের পাশেই দুটি খুবড়ি ঘর (টিন শেটের তৈরি) করেও থাকতে হচ্ছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ৩য় তলায় রয়েছে অস্ত্রাগারও। বৃষ্টি দিনে ভবনে পানি পড়ার কারণে ভবনের বারান্দায় পলিথিন দিয়ে তাবু টানিয়ে থাকতে হয় পুলিশ সদস্যদের। ৩ তলা ভবনের ২য় ও ৩য় তলা এবং পাশের ২টি খুবড়ি ঘর বসবাস করছেন পুলিশ লাইনের ৬৯৫ জন পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে ৩১ জন এসআই, ৪২ জন এএসআই, ৭০ জন নায়েক, ৫৪৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন। এছাড়া মহানগর পুলিশের আরো ১’শ জন নারী পুলিশ সদস্য থাকছেন পাশের আরও একটি ভবনে। ওই ভবনে তারা জেলা নারী পুলিশ সদস্যদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকেন। সেখানে নারী পুলিশ সদস্যরাও থাকছেন গাদাগাদি করে।
পুলিশ লাইনের পুলিশ পরিদর্শক (আরআই) আব্দুল লতিফ খান জানান, ওই ভবন ও পাশের দুটি খুবড়ি ঘরে গাদাগাদি করে ৬৯৫ জন পুলিশ সদস্য খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া, ভবনটি ২০১২ সালে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করেছেন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তখন ভবনের দেয়ালে প্রচুর ফাটল দেখা দেয়। উপরের ছাদ ভেঙে ভেঙে পড়ছিল। পরে সংস্কার করা হয়। ভবনটি কেন ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সবারই জানা রয়েছে ভবনটি সিলেট জেলা পুলিশের জায়গায়। যার কারণে ভবনটি ভাঙাও যাচ্ছেনা আর নতুন ভবনও নির্মান করা যাচ্ছেনা। কারণ মহানগর পুলিশের কোনো জায়গা নেই, তাই জায়গা ছাড়া পুলিশ লাইন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ওই জায়গাটি যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মহানগর পুলিশকে দিয়ে দিতেন তাহলে অনেক ভাল হত। নতুন ভবন করে পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকি বিহীন থাকতে পারতেন। আব্দুল লতিফ খান বলেন, কষ্ট লাগে সারা দিন পরিশ্রম করে যখন একজন পুলিশ সদস্য গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয়।
অস্ত্রগারের ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। আর সেই ভবনের ৩য় তলায় অস্ত্রগার। দেয়ালও ফাটা। তিনিও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নগর পুলিশের ৭’শ সদস্য ওই ভবনে যেমন জীবনের ঝঁকি নিয়ে থাকছেন তেমনি কষ্টে রয়েছেন। বৃষ্টির দিনে ভবনে পানিও পড়ে বলে জানান সাইফুল। তিনি বলেন, নগরের মাঝে এরকম একটি জায়গায় মহানগর পুলিশের খুব প্রয়োজন। এতে পুলিশ সদস্যদের কষ্ট লাগব হবে বলে মনে করছেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার কামরুল আহসান সবুজ সিলেটকে বলেন, এসএমপির পুলিশ লাইন জরুরি। তাই ২৫ একর ভূমি প্রাপ্তি প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই ভূমির অনুমোদনও হয়েছে। নতুন পুলিশ লাইন হলে, তখন ব্যারাকও হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পুলিশ সদস্যদের থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবনটি এখনও পরিত্যক্ত হয়নি। আর পুলিশ যে ব্যারাকে থাকছে তা যতেষ্ট মজবুদ রয়েছে। ওই ভবনের পাশে আরও একটি ব্যারাক করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের জায়গা পর্যাপ্ত না হওয়ায় কিছু পুলিশ স্টেডিয়ামে থাকতে হচ্ছে। কিছু পুলিশ সদস্য থানায়ও থাকছেন। তিনি বলেন, পুলিশ লাইনে থাকার ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কষ্ট হচ্ছে তা ঠিক, তারপরও থাকতে হচ্ছে।