নষ্ট রাজনীতির কষ্ট ॥ নওরোজ জাহান মারুফ

Nowruj Jahan Marufস্বপ্নের দেশ আমার বাংলাদেশ আমার সোনার বাংলা ছেড়ে কখনই বিদেশে গিয়ে একেবারে থেকে যাবো সেটা কল্পনাই করতে পারতাম না। কেন যানি এই বোধটাই কিশোর বয়স থেকে আমাকে পেয়ে বসেছিল। সুদীর্ঘ ২৭ বছর থেকে স্বপ্নপুরী নামে খ্যাত আমেরিকার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট স্টেটাস থাকার পরও এক দুই মাস সেখানে থেকে ফিরে এসেছি। প্রতিবারই রিটার্ন টিকেট নিয়ে গেছি। গত ফেব্রুয়ারীতে গিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাকে এবার প্রায় দশ মাস সেখানে থাকতে হয়েছিল। বন্ধু-বান্ধবরা এবার একটানা এতো দিন থাকার সুবাদে বলেই ফেলেছেন, আমি আমার নীতি বা ইচ্ছা থেকে ফিরে গেছি কি না? বা এবার বোধহয় আমার বোধদ্বয় ঘটেছে এবং স্বপ্নপুরীতে স্থায়ী আবাস নিয়েছি। আসলে যে যা ভাবে বা বুঝে সেটাই বলেফেলে কোন বাচ বিচার করে না। আমি অবশ্য এসবের তেমন বিশ্লেষণে যাইনি। সে যাক। দীর্ঘ দিন নিউ ইয়র্কে থাকার পর এবার দেশে ফিরে ভেবেছিলাম প্রবাস জীবন নিয়ে কিছু একটা লিখব। প্রবাসে-পরবাসে ঠিক সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেওয়া স্বপ্নপুরী আমেরিকা বা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার নিয়ে কিছু একটা লিখব। কিন্তু পারলাম না। দীর্ঘ কয়েক মাস পরে এসে পুরোপুরী এডজাস্ট করা বা রেস্ট নেওয়ার আগেই নিজ দেশের এমন ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হতে হলো তা নিজেরইতো তালগুলো পাকিয়ে গেল এতো নির্মমতা এতো সহিংসতার রূপ একেবারে কাছে থেকে দেখে। আসলে মানুষ বিদেশে কাজকর্ম পড়ালেখা ইত্যাদির পরে যেটুকু সময় পায় দেশকে নিয়ে ভাবে, দেশের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করে। দেশে এতো কিছুর পরও সেখানের মানুষজন বাংলাদেশের নানান কথা জানলে বুঝলেও এতো নির্মম, এতো রূঢ়রূপ, এতো সহিংসতা বা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলার বর্তমান এমন চিত্র বুঝতেই পারে না। তারা তাদের কায়িক পরিশ্রমের বিনিময়ে পাঠানো রেমিটেন্সের রেটিং শুধু শুধু উপরের দিকে নিয়ে গেলেও এমন রূঢ়রূপ বাস্তবে কল্পনাই করতে পারে না।

প্রসঙ্গে ফিরে আসি। দুই মাস হতে চলেছে এবার দেশে ফিরেছি। এই বুঝি দেশে শান্তি হবে, এই বুঝি ককটেল মারা বন্ধ হবে, এই বুঝি পেট্রোল বোমা মারা বন্ধ হবে, মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ হবে, রেলের নাশকতা বন্ধ হবে; এইসব ভেবে ভেবে এতো দিন পার করা। কিন্তু কই! ‘যেই লাউ সেই কদু’। কোন উন্নতি নাই তথাকথিত রাজনীতির নামে রাজনৈতিক নেতাদের।
অনেকে লিখার জেগৎ থেকে আমি ফিরে গেছি কি না জানতে চান। আসলে এ অবস্থায় কেউই তো স্বস্থিতে নাই। আমি নিজেও নাই, কী লিখব কি না করে করে ঢের বেশি সময় খুইয়ে ফেলেছি। অবশেষে কাগজ-কলম হাতে নিলাম। বিষয় বস্তু ঠিক না করেই লিখতে বসলাম। কারণ, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য কোন বিষয়বস্তুর প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়বস্তু শুধু একটাই আমাদের দেশে এসব হচ্ছেটা কী? এসব কী? এসব কীসের আলামত? এতদিন পর স্বাধীন দেশের জনগণের এটাই কি পাওনা ছিল। এ সময়ে দেশ স্বাধীনের তেতাল্লিশ বছর পরে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে দেশের জনগণের এটাই কি একমাত্র পাওনা ছিল? ভুল সবই ভুল এ জীবনের পাতায় পাতায় যা লিখা সব ভুল…।