নষ্ট রাজনীতির কষ্ট ॥ নওরোজ জাহান মারুফ

রাজনীতিবিদরদের কাছ থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা কি শিখবে। যা তারা টিভিতে দেখে তাই শিখছে তাই গিলছে। তা না হলে টিভির টকশো গুলোতে আমরা কী দেখি? বেসরকারী এসব চ্যানেলগুলোতে প্রায় সব কটায়ই প্রায় একই সময়ে একই স্টাইলে শুরু করেন টকশো। রোজ রোজ তারা এসব টিভিতে বিরোধী দল সরকারী দল এর সমর্থক এনে কাজিয়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হন। এটা আরেক রাজনীতি। জনগণকে এসব দেখতে হবে কেন। এসব জনগণ না দেখলেও ভালো দিন পার করবে। রাজনীতির বিশ্লেষণ, বর্তমান রাজনীতি, গণতন্ত্র এখন ইত্যাদি নানান নামে মধ্যরাতে সরোগরম করে তুলেন তারা টিভি চ্যানেলগুলি। এসব রোজ দিনকার কাজিয়া-ফ্যাসাদ মানুষ আর দেখতে চায় না। পাশের বাড়িতে কাজিয়া-ফ্যাসাদ হলে দরজা বন্ধ করে দিলেই হয়। আর টিভির কাজিয়া-ফ্যাসাদ শুরু হলে জনগণ তা রিমোর্ট টিপে বন্ধ করেন অথবা অন্য চ্যানেলে চলে যান। সেখানেও একই অবস্থা। দু-দল দু-দলেরই ছাফাই গান। অন্য দলের গন্ধ খোঁজে ফেরেন। টিভির এইসব টকশো দেখলে গণতন্ত্র খোঁজতে অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। দেন-দরবারের মাঝে উপস্থাপক একরকম জোর করেই অনুষ্ঠান শেষ করেন। কেন টিভিতে দেখানোর আর অন্য কোন বিষয় নাই মানুষ বিনোদন চায়, গান-নৃত্য চায়, শিক্ষা মূলক অনুষ্ঠান, গঠনমূলক অনুষ্ঠান নিয়ে কোন অনুষ্ঠান এখন প্রায় নাই-ই।
আরো আছে, মিডিয়াতে রিপোর্টিং এর নামে ক্যামেরা নিয়ে যেভাবে স্পটে যান মিডিয়া কর্মিরা তাও রীতিমতো ভয়ানক। তারা অনরগল মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক বক করেই যান। সুযোগ পেলে মাইক্রোফোন ছাড়তেই চান না। তারা বক বক করে তাদের মুখে ফেনা তুলেন। ক্যামেরা স্টুডিওতে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের বক বকানি চলতেই থাকে। মিডিয়াকে একটু সচেতন হতেই হবে। সব জিনিষ সাধারণ মানুষকে দেখাতে হবে কেন। অনেক জিনিষ আছে যেটা না দেখালেই নয় সেটা দেখাবে। সব কিছুতে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে রিপোর্টিং করে গোটা দেশে তা পৌঁছে দেওয়ার কারণেও দেশে ভায়োল্যান্স আরো বাড়ে। এতো টিভির তৎপরতা তো আগে ছিল না। এতো টিভি চ্যানেল তো আগে ছিল না। আগে মানুষ খবর দেখেনি। রিপোর্টিং শুনেনি, সবুই শুনেছে; সবই ছিল। একটা মাত্র টিভি বিটিভিতেই সব দেখে শুনে মানুষ তৃপ্ত থাকতো। এখন এতো এতো টিভি চ্যানেলের পরেও মানুষের তৃপ্তি মেটে না। বেশি বাড়াবাড়ি সবকিছুতেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশের ক্রান্তিলগ্নে মিডিয়ার অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আছে। সেটা অনুপস্থিত। বেশি রাজননৈতিক অনুষ্ঠান থাকাতে মূল জিনিসটার প্রয়োজনীয়তা লোপ পেয়ে যায়। এখানেই সব গ-গুল। টকশোর পলিটিক্যাল আলাপের কোন কোন অথিতিদের কথাবার্তা অঙ্গ-ভঙ্গি দেখলে বমির ভাব উদয় হয়, রুচি নষ্ট হয়। রাতের এইসব টকশো গুলোতে আসেন তথাকথিত বুদ্ধিজীবি রাজনীতিক সুশিল সমাজের নামে কুশিল অনেক জ্ঞান পাপিরা। তাদের স্বার্থের গড়মিল হলেই আজ এ দল কাল অন্যদলের পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন, সাফাই গান; তারা ঝোপ বুঝে কুপ মারেন। তারা তাদের কথায় একবার দেশের সমস্যার সমাধান দেন, অন্যবার আশা ভঙ্গের কথা বলেন। তারাও জনগণের দোহাই দেন। সত্যিই কি তারা জনগণের কথা বলেন? তারা কথা বলেন আওয়ামী লীগের তারা কথা বলেন বিএনপির হয়ে; তারা একে অন্যের দালালি করেন। এটাও আরেক বাণিজ্য। কিছু মুখ চেনা কথার ফুলঝুরি ঝরানো নারী-পুরুষরাই এইসব টকশোতে ঠাঁই পান। কারণ, তাদের দেন দরবারে জনগণের লাভ না হলেও মিডিয়ার লাভ হয় বেশি। মিডিয়ার কাটতি বাড়ে, প্রচার প্রচারণায় জমজমাট হয়। নামও হয় বেশি। তাই তাদের দৌরাত্ম এতো বেশি। আমরা দেখেছি জিহাদ নামের একটি শিশু ঢাকার শাহজাহানপুরে খেলার ছলে একটি গভীর কুপে পড়ে যায়। তা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া কত তুলকালাম কা-ই না করলো। সংবাদ সংগ্রহের নামে উদ্ধার কারিদের তারা সর্বক্ষণ ডিসটার্ব করেছে। পারলে ক্যামেরা নিয়ে কূপে ঢুকে যায়। এখানে কি দেখাবার আছে? জনগণকে তারা অযতাই একই কথা বার বার বলে পরিস্থিতি আরও ঘুলাটে করে ফেলেন। কই, তারা উদ্ধাকারীদের সাহায্য করবেন তা না করে সব কটি চ্যানেলে এতো এতো কর্মী এবং কৌতুলী মানুষের ভিড় তো ছিলই। আমরা দেখেছি উদ্ধারকারী লোকজন লোক সামাল দিতে দিতে হয়রান। কোন চ্যানেলে কোন একজন রিপোর্টারকে তো বলতে শুনিনি যে, এখানে পুলিশ বাহিনী প্রয়োজন। ভিড় এড়াতে পুলিশের সাহায্য জরুরী। না তারা তা করেন নাই। আর তারা কত রকম ভুল তথ্যই দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি জিহাদের নামটি পর্যন্ত তারা ঠিক মতো বলতে পারেননি। আমার লেখায় মনে হতে পারে আমি সাংবাদিক বা মিডিয়ার বিরুধিতা করছি। আসলে তাই নয়, আমিও কোন না কোনও ভাবে সাংবাদিকতা বা মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। আমার চোখে যা লেগেছে তাই লিখেছি মাত্র।
আমরা আরো লক্ষ্য করেছি দেশে আরও অনেক ছোটখাটো দল থাকলেও তাদের প্রায় ডাকাই হয় না এব টকশোতে। ঘুরেফিরে একই মুখ একই চেহারা। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে প্রতিদিন।