নষ্ট রাজনীতির কষ্ট ॥ নওরোজ জাহান মারুফ

গত বছর ৫ জানুয়ারী ১৪ নির্বাচনের পর বলতে গেলে সব কিছু মোটামোটি একরকম সচলই হয়ে এসেছিল। তার কারণ আগের ডিসেম্বর মাসের পর এটাকে সচলই বলা চলে। ফেব্রুয়ারির শেষে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে দেশের অবস্থার উন্নতিতে মোটামোটি স্বস্থিতেই ছিলাম। সেখানের মানুষজনকে বলতে শুনতাম, নির্বাচন যেভাবেই হোক হয়েছে (এটার অবশ্য আইনি গ্রহণযোগ্যতা আছে), মানুষের চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে, মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ভালো লাগতো এসব দেখে এসব শুনে। কারণ, ১৩‘র নভেম্বর-ডিসেম্বর প্রবাসীরা দেশে আসার টিকেট বাতিল করে ফেলেছিলেন। নির্বাচনের পর এ অবস্থা থেকে ফিরে মানুষ আবারও গতি ফিরে পেয়েছিল। ১৪’র পুরো সময় প্রথম থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মানুষ আবারও দেশের টানে নাড়ির টানে দেশে ফিরতে শুরু করেছিল। এখন আবার আগের অবস্থার পুরাবৃত্তিতে ডিসেম্বর-১৪ থেকে তথাকথিত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দেশে এই শান্তিময় পরিবেশ সহ্য হলো না। তারা নির্বাচনে গেলো না কার ইশারায়, না কারো ইশারায় নয়। নিজেদের ভুলেই গেলো না। যে ভুলের মাশুল সারা জীবন বিএনপিকে টানতে হবে দিতে হবে। যদিও বিএনপি স্বীকার কারছে না তাদের এই ভুলের কথা। কারণ, স্বীকার করলে মানুষের রোষানলে পড়তে হবে তো তাই। বিএনপি নেত্রী তো নির্বাচনের পথেই হাটছিলেন, হঠাৎ ইলেকশনের কয়েক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের ইচ্ছা ত্যাগ করলেন। আসলে অন্য কোন নেতা নয়, নিজের পুত্রের ইচ্ছায়ই সায় দিলেন। তারা ভাবলো, জনগণ আবার কী? জনগণের যা হয় হবে। আন্দোলন করতে হবে। যে আন্দোলনের কোন মা-বাবা নেই। এটা কীসের আন্দোলন। কারণ, সামনে তেমন ইস্যু নাই। তাই আওয়ামী লীগকে কোপকাত করতে বা ঠেকাতে একবার শবেবরাতের পরে আরেকবার রোজার পরে আরেকবার কুবারণীর পরে আন্দোলন জোরদার হবে এই করে করে বিএনপির কোন লাভ না হওয়ায় এবার ১৫‘র ৫ জানুয়ারী সরকারের এক বছর পূর্তিতে তাদের কাটা গায়ে নুনের ছিটার মতো বিদলো। নইলে স্বৈরতন্ত্র ঠেকাতে বা গণতন্ত্র হত্যা দিবস নাম দিয়ে সমাবেশের নামে পারমিশন না পেয়ে (পারমিশন সরকারের না দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত) কিছুটা নড়েছড়ে উঠলেন তারা। তারপরও কিছু হলো না। দেখলাম বিএনপি নেত্রী গুলশানের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠার জন্য সামনে আসছেন। অথচ গেইটে তালা। সেই সময়েই মিডিয়ার উঠতি বয়সি সাংবাদিকরা এমন ভাবে খালেদা জিয়াকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করলেন হরতাল না অবরোধ অবরোধ না হরতাল। সেই অবস্থায় নেত্রী কিছু না বুঝে পিছনে ফিরে থাকালেন। দলের কেউ একজন বলে বসলেন অবরোধ। আর যায় কোথায়! নেত্রীও বললেন অবরোধ। হরতাল পরে যোগ হলো এবং সহিংসতার উন্মাদ খেলায় মেতে উঠলেন তারা। বর্তমান রাজনীতির কোন আদর্শ নাই। আদর্শ শুধু ক্ষমতা এবং ক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগ যে সুযোগ পেয়ে গেছে বিএনপি নির্বাচনে না আসায়, এরকম অবস্থায় আওয়ামী লীগ না হয়ে বিএনপি হলেও তাই করতো। এটা তো বাংলাদেশী স্বস্তা রাজনীতির অপকৌশল মাত্র। কারণ, রাজনীতিবিদরা যে রাজনীতির কথা বলেন বা গণতন্ত্রের কথা বলেন; এটা তাদের নিজস্ব রাজনীতি বা গণতন্ত্র। এটা রিয়্যাল ডেমোক্রেসি নয়। রিয়্যাল ডেমোক্রেসি হলো জনগণের জন্য গণমানুষের জন্য; এটা তারা করেন না মানেন না। করেন শুধু সংসদের যাওয়ার জন্য রাজনীতি। সেখানে গিয়েও সামনে বসা পিছনে বসা নিয়ে আরেক রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা ক্রমাগত জনগণের দোহাই দিতেই থাকেন। জনগণের দোহাই দিয়ে কাজ করেন ক্ষমতায় যাওয়ার, এখানে কোনও আদর্শ নাই শুধু ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের লক্ষ। নিরীহ জনগণের সরলতা নিয়ে তারা রাজনীতি করেন। তাই যদি না হতো কেন শুধু শুধু জনগণের কথা বলে গণমানুষের কথা বলে গণমানুষ চাইছে জনগণ চাইছে এসব স্বস্তা কথা বলে বলে তাদের পুঁজি করে দেশে এতো এতো নৈরাজ্য? এটা কি জনগণকে পুঁজি করা নয়? রাজনীতিবিদরা কী মনে করেন? জনগণ এতো বোকা! জনগণ কিছু বোঝে না! আসলে আপনারাই বুঝেন না, জনগণ ঠিকই বুঝে এই সবই রাজনীতির খেলা। দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণ শুধু ধৈর্য্য ধরেই চলেছেন। কিছু দিন পর পর রাজনীতির নামে দেশে আপনারা মানুষ মারেন পুড়িয়ে, স্বার্থের হেরফের হলেই গাড়ি পুড়ান, গাছ কাটেন, সাইনবোর্ড ভাঙ্গেন, ট্রেনে নাশকতা করেন এসব কী? এসবের নাম কী রাজনীতি? এটা কি গণতন্ত্র? এটা কি গণতন্ত্রের ভাষা?