নষ্ট রাজনীতির কষ্ট ॥ নওরোজ জাহান মারুফ

জনগণ রাজনীতি বুঝে না, গণতন্ত্রও বুঝে না। জনগণ চায একমুটো ভাত, এক টুকরো কাপড় এটাই জনগণের রাজনীতি এটাই জনগণের গণতন্ত্র। তার বেশি জনগণ আর কিছুই চায় না। জনগণের শ্রম আর ঘামে সমৃদ্ধ এই সোনার বাংলার রূপ ওই নীরিহ কর্মস্পৃহা জনগণই কি ঠিক করবে? জনগণ বেশি কিছু আশা করে না, মৌলিক কিছু জিনিষেই জনগণ সন্তুষ্ট থাকতে চায়। তারা কারও কাছে হাত পাতে না, তারা কারও কাছে ধর্নাও দেয় না। তারা চায় তাদের সুন্দর করে বাঁচার, সুন্দর করে কাজের পরিবেশ আর চায় বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাতে। ন্যূনতম অধিকার জনগণের শান্তিতে ঘুমাবার জনগণ তাই কি পারছে? প্রতিনিয়ত দুঃস্বপ্নের মধ্যে সময় পার করছেন জনগণ। ঘুমের ঘুরে আঁতকে উঠেন, চোখের সামনে ভেসে উঠে টিভিতে দেখা পেট্রোল বোমায় দগ্ধ বিভৎস্য নারী-শিশু-বৃদ্ধের করুণ আর্তনাদ। পেট্রোল বোমার গন্ধ, মানুষ পোড়ার গন্ধ মানুষের নাকে বাজে সর্বত্র। এ থেকে বের হতে হবে নইলে হবে বিস্ফোরণ। গণবিস্ফোরণ ঘটলে এইসব রাজনীতির ‘রাজশাহী’রা নিজেদের জান নিয়ে পালাবার পথ পাবেন না। কারণ, এ দেশের জনগণই তো বিস্ফোরিত হয়েছিল ৭১-এ। এটাই কি একমাত্র প্রমাণ নয়। আরেকবার জনগণ বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই ভাবুন, বুঝুন; সময় আর হাতে নাই। সময় ফুরাবারে আগে জনগণ গর্জে উঠার আগে সন্ত্রাসী-রাহাজানী জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করুন।
বিশ্ব বিবেক আজ কোথায়! পশ্চিমারা তো একটুতেই মানবতা বোধের স্বস্থা বুলি আওড়ায়। আজ কই তাদের মানবতা বোধ? তাদের বিবেক জাগ্রত হয় না। গুটি কতেক ইউরোপিও ইউনিয়ন তাদের নিজেদের পছন্দ মতো দলের সাথে কথা বলে, সংলাপের নামে দৌড়-ঝাঁপ দেয়, আবার সরকারের ঝাড়ি খেয়ে বন্ধ করে এসব তৎপরতা। তারা দামি দামি গাড়ি চড়ে রাজনীতিবিদদের অফিসে যান, আসেন। কই কাজ তো হয় না। এটাকি তাদের ব্যবসা নয় তো কী? তারা তো তাদের স্বার্থের উর্ধ্বে নয় কখনও। রানা প্লাজা ঘটনার পর সেই ট্রাজেডির ছয় মাস পর ইউএসএ-তে গিয়ে দেখি তাদের দেশের বড় বড় স্টোরগুলোতে গধপু’ং, এধঢ়, ঔঈ চধহু, ডধষষসধৎঃ, ঈড়হধিু, গধৎংযধষং ইত্যাদিতে গিয়ে দেখি ঠিকই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকই স্থান পাছে শুভা পাচ্ছে এইসব ষ্টোরগুলোতে। অথচ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বলেছিলেন, তাদের দেশের জনগণ বাংলাদেশের রক্তমাখা এসব শার্ট পরবে না। এটা তাদের কৌশল, তাদের ব্যবসায়িক কৌশল মাত্র। তখন এদেশের মানুষ ভেবেছিল তারা মার্কিনীরা বাংলাদেশের কাছের মানুষ সুখ-দুঃখের সাথি। আসলে তারা তা না দেখে তাদের স্বার্থটাই বেশি দেখে। চায়নার পর এই দেশই তো তাদের স্বস্থা বাজার। এদেশের স্বস্তা বাজারের কারণেই তো এদেশের নিরীহ গার্মেন্টস কর্মিরা ভালো বেতন পান না, দু-মুটো ভাত পেট ভরে খেতে পান না। এদেশের গার্মেন্টস মালিকরা এসব বিদেশি বায়ারদের খুশি করার যা যা দরকার ঠিকই তাই করেন। করেন না শুধু দেশের স্বস্তা শ্রমিকদের জন্য। তারা গার্মেন্টস মালিকরা তাদের স্বার্থের হেরফের হলেই সরকারের সাথে বসে বিদেশি বায়ারদের সাথে বসে। তারা রাজনীতিও করেন, টিভির টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু নীরিহ শ্রমিকদের এসবে কোন লাভ হয় না। শুধু শ্রমিকরা সময় মতো কাজে যায়, কাজ করে ফিরে। গার্মেন্টসে আগুন লাগলে পুড়ে মরে। আগুন লাগলে মাল লুটের ভয়ে কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে দেয় তারা। একটি মাত্র পথে বের হতে গিয়ে শুধু পিষ্ট হয়েও মরেন অনেকে।
আমি এবার নিউ ইয়র্কে যাওয়ার কয়েক দিন পর নিউ ইয়র্কের প্রাণ কেন্দ্র ম্যানহাটনের মিড টাউনে একটি বিল্ডিং কাত হয়ে অন্য একটি ভবনের উপর আছড়ে পড়ে, সেটার খবর তো তেমন মার্কেট পায়নি। সে দেশের অনেকেই যানে না এই ঘটনাটি অথচ বাংলাদেশে এরকম কোন ঘটনা ঘটলে তা তারা কীভাবে প্রচার করে তা সকলেরই জানা।
পরিশেষে বলতে চাই, এ দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের জবাব দিহিতা নাই। তাদের কথায় কাজে মিল নাই। অনেকে বলেন, এদেশে গণতন্ত্র নাই। ভুল কথা। গণতন্ত্র কতখানি শক্তিশালী এদেশে তা তো ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাম্প্রতিক সব খবরাখবর বা নিউজ এবং টুকশো গুলোর আলোচনা-সমালোচনা দেখলেই সহজেই অনুমেয়। এইসব টকশো গুলোতে অবলীলায় সব অথিতিরা নগ্নভাবে সরকার বা সরকার প্রধানদের নেতানেত্রীদের সমালোচনায় মশগুল হন। এর আগে কখনও তো এতো স্বাধীনতা মিডিয়াগুলোতে ছিল না। সরকার বিরোধী কিছু আগে বলাই যেত না কেহ সাহসও পেতেন না কিছু বলার। এখন অবলীলায় যে কেউ সরকারকে তুলু ধুনু করে ছাড়েন। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বদলে একমাত্র টেলিভিশনই গণতন্ত্র রক্ষা করে চলেছে।

২৪.০২.২০১৫

শুভেচ্ছা-২, জাহান ম্যানশন, আম্বরখানা, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১২-৫০৯৭১৯