অভিভাবকহীন নগর ভবনে প্রশাসক বসছে?

Sylhet Nogor Bhovonইয়াহইয়া মারুফঃ বর্তমান মেয়র জেলে, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সচেতন মহলের ধারণা প্রশাসক আসতে পারে নগর ভবনের অভিভাবক হিসাবে। বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় জেলে বন্ধী রয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় গত ৭ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করে মেয়র আরিফ কে। একই সাথে প্যানেল মেয়র-১ কে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করে মন্ত্রনালয়। এই আদেশের কপি সিটি করপোরেশনের পৌছার পর আরিফুল হক চৌধুরী সমর্থিত কাউন্সিলরদের একটি পক্ষ তার বিরোধীতা করেন। তারা সংবাদ সম্মেলন করে ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে নগর ভবনে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়ায় নগরজুড়ে নতুন আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত রোববার কয়েস লোদী নগর ভবনে গেলে বিরোধী কাউন্সিলররা তাকে মেয়রের রুমে ডুকতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। লোদী অফিসে যাওয়ার আগেই মেয়রের চেয়ার দখল করে বসে থাকেন প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী।
মেয়রের রুমের দরজায় দু’জন নারী কাউন্সিলর দাড়িয়ে থাকেন, যাতে লোদী এলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এনিয়ে দিনভর নগর ভবনে চলে উত্তেজনা, নানা নাটকীয়তা। সিলেট নগরীতে ও শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। অনেকেরই ধারণা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের আদেশ অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ এডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী।
প্রশ্নও উঠেছে বরখাস্ত হওয়া মেয়র কিভাবে দায়িত্ব দেন এবং দিলেও তো বরখাস্ত হওয়ার পর সেটা আর থাকবেনা। অথচ প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী অফিসে গিয়েও মেয়রের রুমে ডুকতে পারেননি। ১১ জানুয়ারি গত রোববার এনিয়ে নগরভবনে বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে আইন অনুযায়ী বরখাস্তকৃত মেয়র আইন অনুযায়ী প্যানেল মেয়র -১ এর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন মর্মে একমত হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান হয়। কিন্তু সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও কারারুদ্ধ সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেষ্ঠ্য প্যানেল মেয়রের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় বর্তমানে অভিভাবকহীন নগরভবন। এর ফলে আবার তৈরি হয়েছে জঠিলতা।তবে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, মেয়র ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্ব না দেয়ায় এখন করণীয় ঠিক করবে মন্ত্রনালয়।
নগর ভবন ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে যাওয়ার সাপ্তাহ খানেক পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের আইন অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ৭ জানুয়ারি। একই সাথে প্যানেল মেয়র-১ কে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করে মন্ত্রনালয়।
এই আদেশের কপি সিটি করপোরেশনের পৌছার পর আরিফুল হক চৌধুরী সমর্থিত কাউন্সিলরদের একটি পক্ষ তার বিরোধীতা করেন। তারা সংবাদ সম্মেলন করে ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে নগরভবনে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়ায় নগরজুড়ে নতুন আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত রোববার কয়েস লোদী নগর ভবনে গেলে বিরোধী কাউন্সিলররা তাকে মেয়রের রুমে ডুকতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। লোদী অফিসে যাওয়ার আগেই মেয়রের চেয়ার দখল করে বসে থাকেন প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী। মেয়রের রুমের দরজায় দু’জন নারী কাউন্সিলর দাড়িয়ে থাকেন, যাতে লোদী এলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এনিয়ে দিনভর নগর ভবনে চলে উত্তেজনা, নানা নাটকীয়তা।
পরে অবশ্য আইন অনুযায়ী বরখাস্তের ৩ দিনে মধ্যে প্যানেল মেয়র-১ কে দায়িত্ব দেয়া হবে মর্মে সমঝোতার বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উভয় পক্ষ। সমঝোতা মেনে ওই দিন নগর ভবন ছাড়েন কয়েস লোদী। তবে ৩ দিনে সমাধান হওয়ার কথা থাকলে ও গতকাল শনিবার ৬ দিন চলে যাওয়ার পর ও প্যানেল মেয়র-১ কে দায়িত্ব না দেয়ায় আবার তৈরি হয়েছে নতুন জঠিলতা। আবারো শুরু আলোচনা সমালোচনা, কেউ কেউ আবার উন্নয়নের বাঁধা হয়ে দাড়িছে বলে এবিষয় কে দোষারোপ করছেন।
সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু এ ব্যাপারে সুরমা টাইমসকে বলেন, মেয়র বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকায় এমনিতেই নগরবাসী নানা সমস্যায় ছিলেন, তার ওপর কাউন্সিলরদের এই বিবাদ নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই নগরীর উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
গত রোববার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দাবীদার এড: সালেহ আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর তাকেঁ ভার দিয়ে গেছেন মেয়র। তাই তিনি এই চেয়ারে বসে অফিস করছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন এর প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেছিলেন, মন্ত্রনালয় আমাকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছে। আমিও অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটি পক্ষ এটি নিয়ে যা করছে তা মোটেও আইনসিদ্ধ নয়। তাই তিনি চেয়ে আছেন মন্ত্রনালয়ের দিকে।
প্যানেল মেয়র গঠনের বিষয়ে সিটি করপোরেশন আইনে উল্লেখ থাকলেও অনাস্থা আনার সুযোগ নেই বিদ্যমান আইনে নেই। ইতিপূর্বে কাউন্সিলররা যে অনাস্থা এনেছিলেন তা আমলে নেয়নি মন্ত্রনালয়। তাই এই জঠিলতা তৈরি হয়েছে। তবে মন্ত্রনালয় নতুন আদেশ না দেয়া পর্যন্ত প্যানেল মেয়র-১ ই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে ৮জানুয়ারি গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব।
৬ দিন অতিবাহিত যাওয়ার পর গতকাল শনিবার সর্বশষ পরিস্থিতি কি জানতে চাইলে এনামুল হাবিব বলেন, পরিস্থিতি আগের মতই আছে। তবে বরখাস্তকৃত মেয়র তিন কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি। আরো ৩ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন মন্ত্রনালয় সিদ্ধান্ত জানাবে কিভাবে চলবে সিটি করপোরেশন। তিনি আরো জানান, ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে কারো কাছ থেকেই তারা স্বাক্ষর নিচ্ছেন না। জঠিলতা সমাধানের আগ পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে বলে ও জানান এই কর্মকর্তা। এবং তৃতীয় পক্ষ বা প্রশাসকের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী বলেন, মন্ত্রনালয় চাইলে হতে ও পারে, তবে সেটা মন্ত্রনালয়েরই এখতিয়ার।
এ বিষয়ে প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সুরমা টাইমসকে বলেন, ৩ দিনে সমাধানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জৈষ্ঠ্য প্যানেল মেয়রের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য মেয়র মহুদয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, তিনি হয়ত বা কোন কারণে হস্তান্তর করেন নি। তাই কোন সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এর ছেয়ে বেশী কিছু এই মুর্হুতে আমি জানিনা।
তবে ভিন্ন কথা বলেন প্যানেল মেয়র-২ ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কর্তৃক দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত মেয়র অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী ৩ দিনে সমাধান করার সিদ্ধান্ত অস্বীকার করে সুরমা টাইমসকে বলেন, মেয়র যাকে দায়িত্ব দিবেন সেই পালন করবে। এখন মেয়রের চেয়ারে কেউ বসছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মেয়রের দেওয়া দায়িত্ব এখনো পালন করছেন বলে জানান।