হ্যাপীর রক্ত ও লালা মহাখালী ভিসেরা সেন্টারে
“জিডির বাদী পরের দিন হয়ে গেল আসামি”
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন বলেছেন, আমি দু/এক দিনের মধ্যে সাংবাদিকদের মুখিমুখি হবো। সেখানেই আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরবো। সহ-অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় আগাম জামিন নিতে গিয়ে হাইকোর্টে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এক বলেন। হাইকোর্টে তিনি বলেছেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ ধরণের একটি শঙ্কার কথা আমি আগেই করেছিলাম। এসময়
রুবেলের আইনজীবী বলেন, হ্যাপীর মামলা দায়েরের আগে রুবেল হোসেন একটি সাধারণ ডাইরী (জিডি) করেছিলেন থানায়। এতে তিনি অভিযোগ করেন যে তিনি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলার শিকার হতে পারেন। রুবেলের ঐ ডাইরির পর নাজনীন আক্তার হ্যাপী তার বিরুদ্ধে একটি হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।রুবেলের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “রুবেল শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটের নয়, তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সম্পদ। তিনি আগেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরে তিনি একটি জিডিও করেছিলেন। এই মামলার মাধ্যমে তার সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। এই মামলা সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক।” তিনি বলেন,৪ সপ্তাহের এই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে রুবেলকে বিচারিক আদালতে যেতে হবে। সেখানে ‘আইনি পথেই ষড়যন্ত্র-হয়রানির মোকাবেলা’ করা হবে।অন্যদিকে জামিন শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ বলেন, “উনি (রুবেল) একজন ক্রিকেটার। উনি ক্রিকেট খেলবেন। নারীর মন নিয়ে খেলা ঠিক নয়।”
বশির উল্লাহ পরে বলেন, “আমরা জামিন প্রদানের বিরোধিত করে শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছি। তবে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন।”
সাংবাদিকদের এড়াতে পারলেও আদালতে ভক্তদের ঠিকই সময় দিতে হয়েছে রুবেলকে। উপড়ে পড়া ভিড়ের মধ্যে আদালতের একেবারে পেছনের সারিতে বসে ‘শান্ত’ ভঙ্গিতে তাকে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায়। এ সময় ভক্তদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স (আদালত) ভবনের সামনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথার পর্ব চুকিয়ে রুবেল যখন মূল বিচার ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন, সে সময়ও একদল উৎসুক জনতা তার পেছনে এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেসার রুবেলের বিরুদ্ধে নারী নিরযাতন মামলা হওয়ার আগের দিন মিরপুর মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ক্রিকেটার রুবেল। জিডির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় মিরপুর থানার এসআই রাসেলকে।
এ ব্যাপারে পুলিশের উপপরিদর্ক (এসআই) রাসেল বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ক্রিকেটার রুবেল মিরপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন(জিডি নম্বর-৯৫৫)। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, হ্যাপি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে গত ৬/৭ মাস ধরে তার কথা হয়। ঐ মেয়েটি এখন আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। সে আমার কাছে মোটা অংকের টাকাও দাবি করেছে। অন্যথায় সে আমাকে খেলতে দিবে না বলেও হুমকি ধমকি দেয়।
ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে পুলিশ অফিসার রাসেল বলেন, রুবেল যেদিন জিডি করেন সেদিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। নাইট ডিউটি শেষ করে আমি ঘুমাতে যাই। আর ঘুম থেকে উঠেই শুনি রুবেলের নামে মামলা হয়েছে।
এসআই রাসেল বলেন, এর পর থেকে রুবেল পলাতক ছিল। তাই তার সঙ্গে জিডি নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আর হ্যাপি ভিকটিম হওয়ায় তার সঙ্গেও কথা বলতে পারিনি। এখন রুবেলের দায়ের করা জিডির তদন্তের জন্য আমি আদালতের কাছে আাবেদন জানাবো। বাদী বিবাদীর সঙ্গেও কথা বলবো।
আক্ষেপ করে এসআই রাসেল বলেন,আগের দিন জিডি হলো। পরদিনই আবার মামলা হলো। দেখলাম জিডির বাদী হয়ে গেল মামলায় আসামি। এদিকে ক্রিকেটার রুবেল জামিন নিতে আদালতে যাওয়ার এক পর্যায়ে তার ভক্তরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের স্লোগানের ভাষা ছিল- ‘রুবেল ভাইয়ের কিছু হলে/জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’।
রুবেল জিডি করার পর বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মিরপুরের এসআই রাসেল। আর হ্যাপীর মামলার তদন্ত করছেন একই থানার এসআই মাসুদ পারভেজ।
প্রসঙ্গত গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে চিত্র নায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী প্রতারণা ও ধর্ষনের অভিযোগে রুবেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয়। রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী চলচ্চিত্র জগতের সহঅভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপীর শরীর থেকে সংগৃহীত রক্ত ও লালা পরীক্ষার জন্য মাহাখালী ভিসেরা সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
বয়স নির্ণয়ের জন্য তার হাড়ের এক্সরসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পুলিশের হাতে দেওয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, চিত্র নায়িকা হ্যাপীর ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। গতকাল রবিবার তাঁর শরীর থেকে রক্ত ও লালা সংগ্রহ করে মহাখালীর ভিসেরা সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে নাজনীন আক্তার হ্যাপীর ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার দুপুরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের একটি নীল রংয়ের গাড়িতে করে আনা হয় হ্যাপীকে।
দুই জন পুলিশের মহিলা কনেস্টেবল ও দুইজন পুরুষ কনেস্টবলের মাধ্যমে কড়া নিরাপত্তায় হ্যাপীকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তৃতীয় তলায়। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলে তার শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা।