নবীগঞ্জে আমন ধানের বাম্পার ফলন : কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

Nabi_Dhanউত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)থেকেঃ নবীগঞ্জের ফসলের মাঠে কুয়াশার চাদর ভেদ করে উকি দিচ্ছে সকালের সোনালীরোদ। হেমন্তের মৌ মৌ গন্ধ ও মৃদু বাতাসে মুখরিত দোলা খাচ্ছে মাঠের সোনালি ফসল। ফিঙে আর শালিকের ঝাক উড়াউড়ি করে হাওড় ও আকাশে। এসব কিছু দেখার কোন ফুসরত নেই কৃষককোলের। মাঠের পাকা ধান কেটে গোয়ালে তুলার চিন্তায় ব্যস্থ কৃষকরা। ক্ষেতে বাম্পার সোনলী ফসল দেখে কৃষকদেও মুখে হাসির ঝিলিক দেখে সবাই খুশি। নবীগঞ্জ উপজেলার হাওরগুলোতে এখন চলছে আমন ধান কাটার মহাউৎসব।

সরেজমিনে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউশকান্দি ইউনিয়নের জোয়ালভাঙ্গা হাওরে দেখা গেছে কৃষক-কৃষাণীরা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে নিয়ে ব্যস্ত। কৃষক জানান তবে চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় আমনের ভাল ফলন হয়েছে।
নবীগঞ্জ কৃষি অফিসের হিসাব মতে, উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১ হাজার ৩শ ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
এদিকে চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ধানের দাম কমতে শুরু হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বেচে থাকার তাগিদে ও কিছু মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বর্তমানে ধানের দাম দেখে চরম হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। ভাল ফসলের আশায় অতিরিক্ত মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ নানা উপকরণ কিনে চাষাবাধ করেছেন তারা। কিন্তু বাজারে গিয়ে ধানের কাংখিত দাম না পেয়ে অজানা ভবিষৎ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ৫শত ৫০ থেকে ৬ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, এত কম দামে ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ পুষিয়ে উঠবে না। অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতেরই ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা ফসল ফলানোর সময় ঋন করা মহাজন এবং পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে বিপাকে পড়েছেন। কৃষকেরা বলেছেন ধানের দাম ন্যুনতম ৯ শ থেকে ১ হাজার টাকা না পেলে কোনভাবেই পোষাবে না। তারা জানান, ধানের নিন্মগামী হওয়ার কারনে নবীগঞ্জে কয়েক হাজার কৃষকের কষ্টার্জিত নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দকে অনেকটা ম্লান করে দিতে পারে জানাগেছে। কৃষকরা জানান এ বছর সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনকুলে থাকায় পোকার আক্রমন ছিল অনেক কম। তাই কৃষকেরা আশাবাদী এ বছর আশানুরুপ বাম্পার ফসল নিয়ে ঘরে উঠতে পারবেন তারা। ৫ নং আউশকান্দি ইউনিয়নের কৃষক রিপন মিয়া জানান চলতি অগ্রহায়ণে হাওরের পুরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। খরচ ও কষ্টের তুলনায় আমন ধানের দাম অনেক কম। জোয়াল ভাঙ্গা হাওরের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে লোকসান ছাড়া লাভ হবে না। তিনি বলেন ‘পোকার আক্রমণ ছিল কম, নিয়মিত বৃষ্টিও হয়েছে।
নবীগঞ্জ পৌর এলাকার কৃষক সুকুমার দাশ জানান, আমরা এত কষ্ট করে ধানের চাষ করে এখন যদি দাম কম হয় তাহলে দিন দিন চাষাবাদের প্রতি কৃষকদের নিরুৎসায়িত করবে।
প্রতি হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে গড়ে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন। এতে চাল হবে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন করে। তবে বাজার মূল্য কম থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ দুলাল উদ্দিন জানান, আমন ধান আবাদের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগের পরামর্শ দেওয়ায় এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে সুষ্ঠুভাবে কৃষকরা ধান মাড়াই সম্পন্ন করতে পারলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে ।