গ্রাম্য কুটিল রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে দ্বিধাবিভক্ত রাজনগরের সুরুপুরা গ্রাম

দ্রুত সময়ে এ অবস্থার অবসান চান এলাকাবাসী

আব্দুল হাকিম রাজ, মৌলভীবাজার: গ্রাম্য কুটিল রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে সুরুপুরা নামে একটি গ্রাম। জটিল কোন বিষয় নিয়ে নয়, শুধুমাত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ঐতিহাসিক পাঁচগাঁও ইউনিয়নের এ গ্রামটিতে চলছে একের পর এক কাঁদা ছুড়াছুড়ি-মামলা-হামলা-সমাজচ্যুত করা ইত্যাদি নানা ঘটনা। সম্প্রতি একটি পক্ষ সুরুপুরা গ্রামের আব্দুল মন্নানকে সামাজিকভাবে বয়কট করার ঘোষনার মধ্য দিয়ে উভয়পক্ষের দ্বন্ধ প্রকাশ্য রুপ লাভ করেছে। অপরপক্ষ এটিকে প্রতিপক্ষের “গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল” হবার চেষ্টা হিসাবে আখ্যা দিয়ে দাবী করেছে- গ্রামবাসীদের অবস্থান ওই পক্ষের বিরুদ্ধে। বয়কট করার ঘোষনাকারী ওই পরে পাল্টা দাবী- গ্রামবাসীদের অবস্থান অপরপক্ষের বিরুদ্ধে। আব্দুল মন্নানকে সামাজিকভাবে বয়কট করার ঘোষনা দিয়েছে “গ্রামবাসীরা”। সমছু হাজী গং এবং তারই আপন ভাগ্নীজামাতা আজাদ মেম্বার (সাবেক) গং নামীয় এ দুটি পক্ষের সৃষ্ট এসব পরিস্থিতির কারণে গ্রামের সাধারণ লোকজন প্রায় হয়ে পড়েছেন বিবদমান পক্ষদ্বয়ের বলীর পাঠা। সর্বশেষ, উভয় পক্ষই যাকে যেভাবে বুঝানো যায়, সেভাবে বুঝিয়ে স্বাক্ষর আদায় করে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার বরাবর গণঅভিযোগ করেছেন উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে। আজাদ মেম্বার গংদের দাবী- সমছু হাজী গংরা অন্যায়ভাবে গ্রামে তাদের মাতব্বরি কায়েম করতে চায়। যারা তা মানেনা এবং এর প্রতিবাদী হয় তারাই সমছু হাজী গংদের জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলাসহ নানাভাবে হয়রানীর শিকারে পরিণত হয়। তারা মাদক ব্যবসা ও চোরাকারবারসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের অনেকেই বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার জেলও খেটেছে। তারা সুরুপুরা গ্রামে সকল অপরাধ-অপকর্মের রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তাদের এসব কর্মকান্ডে অতীষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসী তাদেরকে গ্রামের সকল সামাজিক কর্মকান্ড থেকে বয়কট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর গণঅভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছে। অপরদিকে, সমছু হাজী গংদের একই দাবী আজাদ মেম্বার গংদের বিরুদ্ধে। তারাও পুলিশ সুপার বরাবর গণঅভিযোগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ ও পাল্টা গণঅভিযোগ করেছে। এদিকে, জনৈক লাল মিয়া ও রোকেয়া দম্পতির প্রদত্ত লিখিত স্বীকারোক্তির কারণে “গণঅভিযোগ” নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। লিখিত স্বীকারোক্তিতে ওই দম্পতি উল্লেখ করেছেন- সুরুপুরা গ্রামের মাঝির পুত্র সাইদুল ইসলাম বাচ্চু, আবরুছ মিয়া, আজাদুর রহমান ও মাঝির পুত্র জেলু মিয়ার প্ররোচনায় অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ধর্ষন ও নির্যাতনের মামলা দায়ের করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। নগদ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা সে সময় অপরপক্ষ অর্থাৎ একই গ্রামের সামছুল ইসলাম ওরফে সমছু মিয়া, আদর মিয়া, আলমাছ মিয়া, বাদল মিয়া, আঙ্গুর মিযা, নেপুর মিয়া, রানু মিয়া, কয়েছ মিয়া, শিবলু মিয়া, আকবর মিয়া, আলী হোসেন ও খালেদ মিয়ার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। এতেকরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- গণঅভিযোগ পত্রে এবং গণপ্রতিবাদ ও পাল্টা গণঅভিযোগ পত্রে স্বাক্ষরকারীরা আদৌ গণঅভিযোগ, গণপ্রতিবাদ ও পাল্টা গণঅভিযোগ পত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত কি-না কিংবা লাল মিয়া ও রোকেয়া দম্পতির ন্যায় কারো প্ররোচনায় ব্যক্তিগত ফায়দার বিনিময়ে স্বাক্ষর করেছে কি-না। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়- আবরুছ মিয়া, রহিম মিয়া, মাঝির পুত্র সাইফুল ইসলাম বাচ্চু ও জেলু মিয়া অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে তারা হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। তারা চোরাই পথে হিরোইন আনার অভিযোগে পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়েছিল (মামলা নং- দায়রা ২৮০/২০১২ইং এবং জি.আর ১৯৮/২০০৯ইং (রাজ) ও রাজনগর থানায় জিডি নং- ১৭০/২০১৪ইং)। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ অবৈধ ব্যবসা ও আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সমছু হাজী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলার বাদী ও বিভিন্ন মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় একই উল্লিখিত ব্যক্তিদের সাথে বিরোধ বাঁধে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ অপর পক্ষকে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠে। উভয় পক্ষই গ্রামের বিভিন্ন লোকজনকে কৌশলে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। মূলতঃ এ থেকেই গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। উভয় পক্ষই গ্রামবাসীর দোহাই দিলেও মূলতঃ এ দুই পক্ষের বিরোধ-মামলা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য কুটিল রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সুরুপুরা গ্রামবাসী। দ্রুততর সময়ে এ অবস্থার অবসান না হলে, এ গ্রামে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বিয়োগান্ত যেকোন ঘটনা।