আওয়ামী লীগের দেশ শাসন : গনতন্ত্র ও জনগনের জন্য অভিশাপ না কি আশীর্বাদ ?

Jahid-Hasanআওয়ামী লীগকে অনেকেই বলে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী গনতান্ত্রিক দল, হয়ত প্রাচীনতম দল কথাটা ঠিক, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী গনতান্ত্রিক দল কিনা বাংলাদেশের জনগনের কাছে তার কোন প্রমান নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগ ছিল তদানিন্তন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, পাকিস্তান ভিত্তিক দল হলেও তখন আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক ছিল বলতে গেলে সবাই পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী জনগন। যার প্রমান ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী ভোটারদের ভোটে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগড়িষ্ঠ আসনে জয়লাভ। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় অধিক সংখ্যক আসনে জয়লাভ করায় আওয়ামী লীগই পাকিস্তানের সরকার গঠনের দাবীদার ছিল। পরবর্তি ইতিহাস সবারই জানা আছে। ১৯৭১ সালে যখন বাংগালীদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন বা সমর্থকরাই নয় দল মত নির্বিশেষে ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, রিক্সাচালকসহ সকল শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের বাংগালীরা ঐ জনযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল বা অংশগ্রহন করেছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মলাভ করল তখনকার রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন পরবর্তি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা কখনও এক ছিলনা বা এক বলে কারো বিবেচনা করারও কোন সুযোগ ছিলনা। ১৯৭১ সালে কোন দলীয় নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে নয় সকল মানুষের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কাজেই তখন রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল আওয়ামী লীগের স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করার কোন যৌক্তিকতা বা অপরিহার্যতা ছিলনা। তখনকার বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বা সক্রিয় সমর্থক সব দল, সব পেশা ও সব মতের মানুষকে নিয়ে সদ্য স্বাধীন একটা দেশকে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটা জাতীয় সরকার গঠন করাই ছিল সবচেয়ে জরুরী, প্রত্যাশিত ও যুক্তিসংগত। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের মূর্তিমান নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের অপ্রতিদ্বন্দ্বি আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে বা কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ জন্মলগ্নেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা একাই দখল করে নেয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে সমগ্র বাংগালী জনগনের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই তাকেও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যেই কুক্ষিগত করে রাখার ব্যবস্থা করে, যার ফলে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও শেখ মুজিবকে নিয়ে বাংলাদেশে এখনও বিতর্ক চলছে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া স্বতস্ফূর্তভাবে আর কোন দল তাকে জাতির জনক হিসেবে মানতে, সম্মান দিতে বা স্বীকার করতে চায়না। স্বাধীনতার পর পরই আওয়ামী লীগ এককভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সর্বপ্রথম একটা গনতান্ত্রিক দল নয় বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর ঠিক তখন থেকেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তে ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা ও সহিংস রাজনীতির সুচনা করে। আওয়ামী লীগের প্রায় ৪ বছরের শাসনামল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অসহনশীল, অগনতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী এবং নির্যাতন ও নিবর্তনমূলক শাসন ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এক নজিরবিহীন কলংকিত অধ্যায় রচনা করে গিয়েছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা, সহিংসতা ও স্বৈরাচারী রাজনীতির শিকার হয়ে মাত্র ৪ বছরের মাথায় ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংগালীদের হাতেই নৃশংসভাবে জীবন দিতে হয়েছে।

গনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো পরমত সহিষ্ণুতা, অপরের মতামত ও সমালোচনাকে সহ্য বা গ্রহন ও সম্মান করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের “রাজনৈতিক আদর্শের” মধ্যে গনতন্ত্রের এই প্রধানতম উপাদান বা বৈশিষ্ট্যের লেশমাত্র নাই বলে বাংলাদেশের জন্মের পর পরই তাদের শাসনামলে তারা বাংলাদেশের জনগনকে তা ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ তথা শাসক দলের কোন সমালোচনা ও বিরোধিতাকে তখন সহ্য করা হতনা বরং রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি ( বিভিন্ন বাহিনী ) দ্বারা তা কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। গনতান্ত্রিক মানষিকতা, চর্চা ও আচরন ছিলনা বলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তখনই ( বাংলাদেশের সুচনা শাসনামলেই ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তি গড়ে উঠে এবং কোন কোন দল বা সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পরবর্তিতে সশস্ত্র যুদ্ধ বা প্রতিরোধের রাজনীতিও শুরু করেছিল। বিরোধী দল বা মতের লোকজনকে আটক ও দমন করার জন্য ঐ সময় ( ১৯৭৪ সালে ) বিশেষ ক্ষমতা আইণ প্রনয়ন করা হয়েছিল, যাকে কালো আইণ হিসেবে গন্য করা হয় এবং যার অস্তি¡ত্ব ও কার্যকারিতা বর্তমান বাংলাদেশেও বলবত আছে। আওয়ামী লীগের ১৯৭২-৭৫ সময়কালীন শাসনামলেই বাংলাদেশে ক্রস-ফায়ার বা বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করার সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, আইণ শৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ঐ সময় আওয়ামী লীগের বিরোধীতাকারী বিভিন্ন বামপন্থি ও সমাজতান্ত্রিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। ঐ সময়েই বাংলাদেশে প্রথম মানুষ গুম হওয়া বা গুম করে দেওয়ার আতংকিত ও জঘন্য রাজনীতি শুরু হয়েছিল। ছিনতাই, ব্যাংক ডাকাতি, লাগামহীন দূর্নীতি, রাষ্ট্রয়াত্ব কল-কারখানায় বেপরোয়া লুটপাট, ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ খুনের ঘটনা এ সবই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে তাদের প্রথম শাসনকালে উপহার দিয়েছিল।
গনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান বা দেশ শাসনে সাধারন মানুষের মতামত প্রকাশ করার একমাত্র পথ বা সুযোগই হল স্বাধীন ও স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়া বা নির্বাচনে অংশগ্রহন করা। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তি আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধিনে ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যলটবাক্স ছিনতাই, জাল ভোট দেওয়া বা ভোট ডাকাতিসহ নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য এমন কোন অনিয়ম, দূর্নীতি বা আইণ বহির্ভূত কর্মকান্ড অবশিষ্ট ছিলনা যা আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা ঐ নির্বাচনে করে নাই। প্রশাসন, আইণ শৃংখলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সার্বিক শাসন ব্যবস্থাকে এমনভাবে ও এমন মাত্রায় দলীয়করন করা হয়েছিল যে সাধারন মানুষের মতামত প্রকাশ করার একমাত্র পথ নির্বাচন নামক প্রক্রিয়াটার গনতান্ত্রিক ও সর্বজনগ্রাহ্য চরিত্রটাও ধ্বংশ করে আওয়ামী লীগ তখন একে মানুষের কাছে কলংকিত ও আগ্রহহীন করে তুলেছিল। ৪০ বছর পর একইভাবে ক্ষমতায় থেকে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচন ও এর পর পরই বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও প্রমান করল নির্বাচন নামক গনতন্ত্রের এই অলংকারটাও এখন স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মানসূচক পদকের ক্র্যাষ্টের সোনার মত পুরোটাই নকল হয়ে গেছে। বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দলের দাবীদার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার বা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচনটাকেও একটা অগনতান্ত্রিক ও প্রহসনে রূপ দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ গনতন্ত্রের আর এক প্রধান স্তম্ভ বাক স্বাধীনতাতেও বিশ্বাস করেনা, স্বাধীনতা পরবর্তি তাদের প্রথম শাসনামলেই ভিন্ন মত, সমালোচনা বা প্রতিবাদের ভাষা যাতে কেউ প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য কেবল সরকারী মালিকানায় বা নিয়ন্ত্রনে ৪টা সংবাদপত্র খোলা রেখে ঐ সময় দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। ৪০ বছর পর এখনও ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সেই স্বৈরাচরী মানষিকতা থেকে সরে আসতে পারেনি। এখন সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল বা গনমাধ্যম ১৯৭২-৭৫ সময়ের মত নিয়ন্ত্রন করতে না পারলেও সম্প্রচার নীতিমালা, প্রেস কাউন্সিলকে কথিত শক্তিশালী করা ও তথ্য প্রযুক্তি আইণ তৈরী করে বাক স্বাধীনতা বা ভিন্ন মতকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে। উচ্চ বা নিন্ম আদালতের বিচারকরা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বা বিপক্ষে যায় এমন কোন রায় না দিতে অথবা সরকার যা চায় যাতে এমন রায় হয় সেজন্য তাদেরকে নিয়ন্ত্রনে বা চাপে রাখার জন্য ’৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে সংসদের কাছে বিচারকদের অপসারনের ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের ২০০৯ বা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিলনা। স্বৈরাচারী ও অগনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার জন্যই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ একে একে সবার মতামতকে উপেক্ষা করে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করন ও নিয়ন্ত্রনে আনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, গনতান্ত্রিক রাজনীতির অলংকারই হল ভিন্ন মত ও দলের সমন্বয়ে বা সহঅবস্থানে বহমান বহুদলীয় গনতন্ত্র। কিন্তু গনতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগ যে আসলে স্বৈরাচারী বা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী সেই আদর্শের ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান চেতনা গনতন্ত্রকে স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই কবর দিয়ে দেশে দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসন বা এক ব্যক্তির শাসন ( একনায়কতন্ত্র ) কায়েম করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সংবিধান সংশোধন করে ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের সকল গনতান্ত্রিক দলকে বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অদ্ভূত হাতিয়ার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সৌভাগ্যবশত ( আওয়ামী লীগের পুন:জন্মের সুযোগ হওয়ায় ) ঐ বছরেই ১৫ আগষ্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগড়িষ্ঠ অংশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটা সফল সামরিক অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন বা ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একদলীয় শাসন ব্যবস্থা অর্থাৎ বাকশাল বাতিল হয়ে যায় এবং বাংলাদেশে আবারও বহুদলীয় গনতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা উম্মুক্ত হয়। যার সুবাদে আওয়ামী লীগ নামক দলটার আবারও পুন:জন্ম হয় এবং তখন পুন:জন্ম লাভ করেছিল বলেই আজ ৪৩ বছর পর আওয়ামী লীগ তার ৬৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বলে গর্ববোধ করার সুযোগ পেয়েছে, তা না হলে আওয়ামী লীগ যেভাবে বাকাশালে বিলীন হয়ে গিয়েছিল যদি ১৯৭৫ সালের পর পুন:জন্ম লাভ না করত তবে আজ আওয়ামী লীগ নামক দলটা শুধু ইতিহাসের একটা কোনায় নিরবে স্মৃতি হয়ে পড়ে থাকত। ৪০ বছর পর এখনও আওয়ামী লীগ বাকশালী মানষিকতায় একা অর্থাৎ এক দল ( আওয়ামী লীগ ) ছাড়া আর যাতে কেউ বাংলাদেশ শাসন করতে না পারে এই ধ্যান-ধারনা ত্যাগ করতে পারছেনা। এখন ১৯৭২-৭৫ সময়ের মত সব দল বিলুপ করে একদল বাকশাল করা হয়ত সম্ভব নয় কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগের অগতান্ত্রিক চরিত্রের পরিবর্তন হবে এটাও আশা করা হবে বোকামী। আওয়ামী লীগ এখন বিশেষ করে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত, অগনতান্ত্রিক ও একতরফা নির্বাচনের পর গায়ের জোরে ( রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি ব্যবহার করে ) দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে তথা স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করতে প্রধান বিরোধিতাকারী ও আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি বি,এন,পিকে আওয়ামী লীগের ভাষায় রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে ধ্বংশ বা নি:শেষ করে দেওয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর বলেই দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসেই শেখ হাসিনা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম থেকে জিয়া শব্দটা মুছে দিল, এরপর খালেদা জিয়াকে অবৈধ দখলদারের মত তার ৪০ বছরের স্মৃতিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হল, পরবর্তিতে সংসদ সংলগ্ন শেরে বাংলানগর থেকে জিয়ার কবর গুড়িয়ে দেওয়ার পটভূমি তৈরী করার চেষ্টা শুরু করেছিল, এ লক্ষ্য শেখ হাসিনার মাথায় এখনও আছে। দুই সতিনের যে গল্প আমাদের দেশে আছে শেখ হাসিনা মনে হয় খালেদা জিয়াকে তার প্রতিপক্ষ না ভেবে সতিন ভাবে, তাই ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংসদের ভেতরে, দেশের ভেতরে এমনকি দেশের বাইরে গেলেও যে কোন অনুষ্ঠানে প্রথমে খালেদা জিয়া, অথবা বি,এন,পি’র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে বিষেদগার, কটুক্তি, কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেই যাচ্ছে, এটা যেন তার রুটিন কাজ, গত ৭/৮ বছরে মনে হয় শেখ হাসিনা ৭/৮ হাজার বার তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তার স্বভাবসূলভ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, অথচ বিনিময়ে খালেদা জিয়া মনে হয় ৭/৮ বারও শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমান বা তার ছেলে-মেয়েদের নামে কুরুচিপূর্ন উক্তি বা মন্তব্য উচ্চারন করেছে বলে দেশবাসীর কাছে জানা নাই। গনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বা গনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নাই বলেই শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বি,এন,পিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পরিবর্তে “কৌশলে” বি,এন,পিকে নি:শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মতে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নিলেও জনগনের কাছে বি,এন,পি’র যে গ্রহনযোগ্যতা আছে এ বাস্তবতা তারা মানতে চায়না। এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের পর ৭৫ – ৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর পার করেও বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দলের দাবীদার আওয়ামী লীগ ১৯৯১ এর নির্বাচনে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া দল বি,এন,পি’র কাছেই পরাজিত হয়েছিল, জনগনের ভোট বা সমর্থন পেয়েই বি,এন,পি দুইবার রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়েছিল, কোন সামরিক শক্তির পৃষ্টপোষকতায় নয়। শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী ও তাদের দোষর সমর্থক গোষ্টি রাতদিন সরকারের উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলার পরেও ২০১৩ সালের জুন-জুলাইতে অনুষ্ঠিত গাজিপুরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ন ৫টা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বি,এন,পি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারীর কথিত নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও বি,এন,পি সমর্থিত প্রার্থীরা ভাল ফলাফল করেছিল। বি,এন,পি’র জনভিত্তি, জনসম্পৃক্ততা বা জনসমর্থন ছিল বা আছে বলেই তাতে প্রমানিত হয়েছে। ৩৫-৪০% জনগনের সমর্থন যে দলটার প্রতি রয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে বা তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে মাত্র ৫-১০% লোকের মেন্ডেট নিয়ে গায়ের জোরে ক্ষমতা ৫ বছর ( বা অরো বেশী সময় ) ধরে রাখার কথিত কৌশল বা প্রচেষ্টা কখনও গনতান্ত্রিক নয়। বি,এন,পিকে এখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা, বি,এন,পি জোটের শরীকদের বিভিন্ন টোপ দিয়ে ২০-দলীয় জোটকে ভেঙ্গে দেওয়ার ফন্দি করা, বি,এন,পি’র শীর্ষ নেত্রী ও এর সিনিয়ার নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বি,এন,পিকে নেতৃত্ব শূন্য করা, এ সবই আওয়ামী লীগের ১৯৭২-৭৫ সময়ের বাকশালী মানষিকতায় উদ্বুদ্ধ স্বৈরাচারী ও অগনতান্ত্রিক চরিত্রের নবতর রূপ। আওয়ামী লীগ যে শুধু একটা অগনতান্ত্রিক দল তাই নয়, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ লাজ-সরম বা দলের কথিত আদর্শ বিসর্জন দিয়ে তাদের একসময়ের ভয়ানক দুশমন ( ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত হাসানুল হক ইনুর জাসদসহ বিভিন্ন বামপন্থি দল যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ বা প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল, শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর শ্লোগান দিত ), সামরিক স্বৈরাচার, উগ্র মৌলবাদী দল বা গোষ্টি এমনকি তাদের ভাষায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতাবিরোধী আপরাধীদের সাথেও জোট বাঁধতে, হাত মেলাতে, সমঝোতা করতে বা নৌকা মার্কার আবরন দিয়ে কোলে তুলে নিতে অতীতেও দেখা গেছে এবং এখনও দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারন বিরত্বের জন্য যাকে বঙ্গবীর উপাধি দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন অপকর্মের সমালোচনা করায় তাকেও আওয়ামী লীগ রাজাকার বলতে দ্বিধা করেনি। এখন তার ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রীসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হলে টাংগাইলের আসনটা ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সেই কাদের সিদ্দিকীর সাথে আবারও আপোষ করতে বা হাত মেলাতে পারে বলে গুঞ্জন ইতমধ্যে ছড়াচ্ছে, কারণ মানুষ আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ ও দ্বৈত চরিত্রের সাথে ভালভাবেই পরিচিত।
বি,এন,পি’র শাসনামলে ১৯৯৬ সালের মাগুড়া উপ-নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার ( প্রশাসন, আইণ শৃংখলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সার্বিক শাসন ব্যবস্থাকে দলীয়করন করে নির্বাচনের উপর সরকারী দলের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব থাকে বলে ) কারণে বাংলাদেশে কোন ক্ষমতাসীন ( দলীয় ) সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ ( সরকার পরিবর্তনের ) নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হয়না – এই যুক্তি বা অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধী জোট তখন ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় করে নিয়েছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনেই ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে তিনটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ঐ নির্বাচনগুলোকে আন্তর্জাতিক মহলও মেনে নিয়েছিল এবং বিশ্বের সকল গনতান্ত্রিক দেশ উক্ত নির্বাচনগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। ছোট-খাটো ( সূক্ষ বা স্থূল ) ভোট কারচুপির অভিযোগ ছাড়া উল্লেখিত তিনটা নির্বাচনে পরাজিত দল ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার কথা বল্লেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি বা এ নিয়ে কোন আন্দোলনও করেনি, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন প্রত্যেকটা দল/সরকারই তাদের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পেরেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরংকুশ আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার গোপন বাসনা পূরন করার কৌশল অবলম্বন করতে থাকে, এ ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটা সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। সংসদীয় কমিটির কাছে দেশের সকল পেশা ও শ্রেনীর প্রায় ৯০ ভাগ বিজ্ঞ জন, সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে দেওয়া মতামতকে উপেক্ষ করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনেই যাতে নির্বাচন হয় সেভাবে সংবিধান সংশোধনের জন্য শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। ঐ সময় সুপ্রীম কোর্টের বিতর্কিত প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে অগনতান্ত্রিক ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে সংবিধান থেকে তা বাতিল করার পক্ষে মত দিয়ে এক রায় জারী করে। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ একে পোয়া-বারো হিসেবে পেয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২ বছর আগেই তড়িঘড়ি করে সংসদে সংখ্যাগড়িষ্ঠতার জোরে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চোদশ সংশোধনী পাশ করে নেয়। অথচ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কোন বিচারপতি বা উচ্চ আদালত একে অগনতান্ত্রিক ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেনি এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে বা পরে কোন মহল থেকে এ ব্যবস্থা বাতিল করার দাবীও জানানো হয়নি বা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ক্ষমতায় গেলে তারা এ ব্যবস্থা বাতিল করবে বলে কোন অংগীকার ছিলনা। এমনকি খায়রুল হকের রায়ে “সংসদ বিবেচনা করলে” পরবর্তি আরো ২টা জাতীয় নির্বাচন কিছু সংশোধনী সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করা যেতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রচন্ড ক্ষমতালোভী মানষিকতা থেকে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ রায়ের অপর অংশকে বিবেচনা না করে দলীয় সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় থাকায় তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা একবারেই বাতিল করে দেয়। ১৯৯৬ সালে যে যুক্তি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পক্ষে দৃঢ অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনার দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবী আদায় করেছিল এখন তা বেমালুম ভুলে গিয়ে সম্পূর্ন উল্টো সুরে কথা বলছে, এখন বলছে কোন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা একদিনের জন্যও দেশ শাসন করা অগনতান্ত্রিক ও সংবিধান পরিপন্থি। এই যুক্তি বা কথা ১৯৯৬ সালে কি শেখ হাসিনা বা তার দল বা উচ্চ আদালতের কোন বিচারপতি বুঝতে পারেনি ? নির্বাচনকালীন ( ৩ মাসের জন্য ) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ও তার দল উপলব্ধি করতে পেরেছিল ২০১৪ সালে এসেও কি বাংলাদেশের সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতার ( দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য প্রশাসন, আইণ শৃংখলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সার্বিক শাসন ব্যবস্থাকে দলীয়করন করা ) কি পরিবর্তন বা উন্নতি হয়ে গেছে ? এ প্রসঙ্গে ভারতসহ যেসব পশ্চিমা বা উন্নত গনতান্ত্রিক দেশের উদাহরন বা তুলনা দেওয়া হয় আমাদের দেশের জনগন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বি,এন,পি কি বিগত ২৩ বছরে ( ’৯০ এর পর থেকে ) এমন গনতান্ত্রিক মন-মানষিকতা ও গনতান্ত্রিক চর্চায় অদৌ একচুলও অগ্রসর হতে পেরেছে ? শেখ হাসিনা ও তার দোষররা এখন বলছে কোন অনির্বাচিত সরকার দেশ শাসন করতে পারবেনা, কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত হলেও তারাত ৫ বছরের জন্য দেশ শাসন করতে আসেনা, তারা শুধু একটা সংসদের মেয়াদ শেষ হলে আর একটা নির্বাচিত সংসদ আসা পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য দেশ পরিচালনা মূলত একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে এবং ঐ সময় একমাত্র রাষ্ট্রীয় জরুরী, নির্বাচন সংক্রান্ত ও রুটিন মাফিক কাজ ছাড়া অন্য কোন নীতি নির্ধারনী কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সমর্থকরা বার বার ২০০৭-২০০৮ সময়ের মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরন দেয়, তিন মাসের জন্য এসে তারা ২ বছর ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। অথচ ঐটা প্রকৃত অর্থে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলনা তা শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ ভালভাবেই জানে, ঐটা ছিল জেনারেল মইনের সেনা সমর্থিত একটা সরকার, যা ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভয়াবহ সহিংস আন্দোলনের পরিনতি। যেটাকে শেখ হাসিনা ও তার দল বার বার বলেছিল ঐ কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং যাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বি,এন,পি না গেলেও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গভবনে বেশ আনন্দঘন ভাব-ভঙ্গি ও সাজ-গোছ করে প্রথম সারিতে বসেছিল। শুধু তাই নয় ভূয়া ভোটার বাতিল করার জন্য যেখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল তা না করে আওয়ামী লীগ দাবী করল ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করার। এই সুয়োগে নির্বাচন কমিশন আর একটু আগ বাড়িয়ে ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র করার পরিকল্পনা পেশ করে যেজন্য কমপক্ষে ১৮ মাস সময় লাগার কথা জানায়। আওয়ামী লীগও তাতে সাড়া দেয়, যে সুবাধে ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। এজন্য আওয়ামী লীগই দায়ী, তাছাড়া জেনারেল মইনের ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ও আশীর্বাদে নির্বাচন করেইতো আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিল। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা খারাপ এ কথা তাদের মূখে মানায়না বা মানা যায়না। নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হয়না বলেইতো বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার ব্যবস্থা থাকা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। তারা শুধু একটা রেফারীর ভূমিকা পালন করবে, এখানে মাত্র ৩ মাসের জন্য সীমিত পরিসরে রাষ্ট্র পরিচালনায় অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ( সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ) সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল থাকলে কি বাংলাদেশ রসাতলে চলে যাবে নাকি সংবিধান ধ্বংশ হয়ে যাবে ? বরং নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বাংলাদেশে জাল ভোট, ভোট ডাকাতি, আন্দোলন, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। তাহলে দেশ ও মানুষের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য কোন্টা প্রয়োজন ? ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোর পর কি নির্বাচনের ফলাফলকে নিয়ে বা আর একটা মধ্যবর্তি নির্বাচনের দাবীতে পরাজিত দল কি দেশে লাগাতার আন্দোলন বা অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল ? শেখ হাসিনার আমলে এখন কি দেশের বহু প্রতিষ্ঠন ( যেগুলো নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা ) বছরের পর বছর অনির্বাচিত ব্যক্তি বা শসক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেনা ? তাছাড়া তিন বার এই ব্যবস্থা অনুসরন করতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় যদি কোন ত্র“টি বা সমস্যা আছে বলে মনে হত সবার সম্মিলিত আলোচনা বা সমঝোতার ভিত্তিতে তা সংশোধন করা যেত। সংবিধান অুনযায়ী জনগন যদি সার্বভৌম ও সকল ক্ষমতার উৎস বলে গনতন্ত্রের বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় তবে জনগন বা দেশের প্রয়োজনেইতো সংবিধানে সংযোজন, পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগে থেকেই তৈরী বা অহি রূপে নাজেল হওয়া কোন সংবিধান পায়নি, বাংলাদেশের জনগনই দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রনয়ন করেছিল। তাই সংবিধানে নাই বলে বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে জনগন ও দেশের শান্তি, শৃংখলা, ঐক্যমত ও সমঝোতাকে উপেক্ষ করে সংবিধানকে জনগনের উর্দ্ধে স্থান দেওয়া কি বাস্তবসম্মত বা গ্রহনযোগ্য ? তাছাড়া যে কোন রাজনৈতিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমতে পৌছায় এবং সেভাবে সংবিধানকে সাজিয়ে নিয়ে দেশ চালায়। যে কোন রাজনৈতিক বিষয় আদালত থেকে নির্দেশিত বা মিমাংশিত হওয়া কখনও উচিত বা সঠিক নয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ বিভিন্ন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়কে আদালতের মাধ্যমে বা আদালতকে ব্যবহার করে তাদের অনুকূলে নেওয়ার কৌশল অনুসরন করে যাচ্ছে। আসল কথা হল শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ জনগনের মতামত ও গনতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা এবং যেভাবেই হউক ( ছলে বলে কৌশলে ) দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। বিদগ্ধরা বলে থাকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ন জয়ন্তী ( ৫০ বছর ) যাতে সে বা তার দলই ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করতে পারে এ জন্য যেভাবেই হউক ( অগনতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী কায়দায় ) তারা ২০২১ সাল পর্যন্ত বা সম্ভব হলে আরো বেশী সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেই, আর এজন্যই কোন কিছু তোয়াক্কা না করে তারা তাদের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে সংবিধান থেকে তড়িঘড়ি করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী তাদের অধীনেই একটা অগনতান্ত্রিক, অগ্রহনযোগ্য ( সকল দলের অংশগ্রহন ছাড়া ) নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে প্রধান ও বৃহত্তম বিরোধী দল অংশগ্রহন করেনি, বরং বি,এন,পি’র নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ৫ জানুয়ারীর আগে একটানা ৩ মাস সারা দেশে ব্যাপক সহিংস আন্দোলন চালিয়েছিল, যার ফলে বিরোধী জোটের আন্দোলনের মূখে ৫ জানুয়ারীর আগে শেখ হাসিনসহ তার জোটের শীর্ষ নেতারা সবাই বলেছিল সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রক্ষা করতে এবং নিয়ম রক্ষার জন্যই তারা ৫ জানুয়ারী দশম সংসদ নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছে, এটা একটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, নির্বাচনের পর তারা সবার অংশগ্রহনমূলক আর একটা নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী জোটার সাথে আলোচনায় বসবে। নির্বাচনের পর পর শেখ হাসিনা ও তার জোটের নেতা-নেত্রীরা আলোচনার জন্য বি,এন,পি জোটকে হরতাল অবরোধসহ সকল আন্দোলনের কর্মসূচী বাতিলসহ একের পর এক বিভিন্ন শর্ত দিয়ে ৫ জানুয়ারীর আগে বিরোধী জোট তথা জাতির কাছে দেওয়া আশ্বাস বা অংগীকার অনুযায়ী আর একটা নির্বাচনের ব্যাাপারে বিরোধী জোটের সাথে আলোচনায় না বসার কৌশল অবলম্বন শুরু করে। ইতমধ্যে শেখ হাসিনার জোর করে ক্ষমতা দখলকারী সরকার ৫ জানুয়ারীর জোরাতালী মার্কা নির্বাচনের পর প্রায় ১০ মাস পার করতে সক্ষম হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে তারা যেমন বিরোধী জোট বা বি,এন,পি’র সাথে আলোচনা এড়িয়ে বা উপেক্ষা করে যেতে পেরেছে তেমনি বিরোধী জোটও আলোচনার জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে বাধ্য করার মত কোন কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। যার ফলে শেখ হাসিনাসহ তার জোটের বড় ও পাতি নেতা সবাই এখন সূর তুলছে তারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং ২০১৯ সালের আগে আর কোন নির্বাচন নয় এবং এর আগে বিরোধী দলের সাথে কোন আলোচনাও করা হবেনা। ৫ জানুয়ারীর আগের কথাগুলো এখন তারা মনে হয় সচেতনভাবে বেমালুম ভুলে গেছে। এখন বিরোধী জোট বিশেষ করে বি,এন,পি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চরম উস্কানী ও অসৌজন্যমূলক উক্তি ও বিষেদগার করে তাদের সাথে আলোচনা করার কোন সুযোগ নাই বা প্রশ্নই উঠেনা বলে শেখ হাসিনা ও তার দলের লোকেরা দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরে বেশ দাম্ভিকতার সাথে ও জোরালোভাবে বলে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তার দোষররা বলছে দেশে এখন শান্তি বিরাজ করছে, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে, এখন মধ্যবর্তি বা আর একটা নির্বাচনের কোন প্রয়োজন নাই। তারা হয়ত ভুলে গেছে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে সারা দেশে একটানা ৩ মাস কি ধরনের আন্দোলন চলছিল, অথবা ক্ষমতাসীনরা হয়ত ভাবছে বি,এন,পি জোট এখন আর সরকারের বিরুদ্ধে সে ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেনা, অতএব বিরোধী জোটের সাথে আর কোন আলোচনা না করলে বা মধ্যবর্তি নির্বাচন না দিলেও তারা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী ও অগনতান্ত্রিক মানষিকতা ও চরিত্রের পরিচয় আবারও প্রকাশ পেয়েছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কারণে দেশে সহিংস আন্দোলন চলছিল সে কারণটা কি দূর হয়ে গেছে ? ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা কি বিরোধী জোট মেনে নিয়েছে ? সরকারী দলের ভাষায় দেশে এখন যে শান্তি ও উন্নয়নের জোয়ার বইছে তা কি কোন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বা সমঝোতার গ্যারেন্টী অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে, নাকি বিরোধী শক্তির উপর সরকারের একতরফা রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি ও আইণ প্রয়োগ করে দেশে জবরদস্তিমূলক শান্তি শৃংখলা বজায় রেখে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে ? যদি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনটা গ্রহনযোগ্য ও ত্র“টিমুক্ত হত তবে জাতিসংঘ, আমেরিকা, বৃটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় সকল গনতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থা নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত আর একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোটের সাথে আলোচনায় বসতে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপ বা তাগিদ দিয়ে যেতনা। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে রাশিয়া ও চীনও তাদের কোন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি, একমাত্র ভারত তার নিজস্ব স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য তখন শেখ হাসিনাকে একটা বিতর্কিত নির্বাচন করতে নির্লজ্জভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল। নির্বাচনের পরেও একমাত্র ভারত ছাড়া আর কোন দেশ শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয়নি, পরবর্তিতে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন আদায় করেছে বলতে গেলে ঘুষ বা উৎকুচ দিয়ে অর্থাৎ রাশিয়াকে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের এবং চীনকে পদ্মা সেতু ও গভীর সমূদ্র বন্দর নির্মানের সুযোগ দেওয়া হবে, মালয়েশিয়াকে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রলোভন দেখিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এসব স্বার্থান্বেষী বা মতলববাজী কর্মকান্ড দেশবাসী ভালভাবেই বুঝতে পারে। তবে শুধু স্বার্থের কারণে চীন, রাশিয়া ও মালয়েশিয়া এবং জাপান ও অন্যান্য দেশ শেখ হাসিনার সরকারের সাথে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও তারা কেউ ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য বলেনি বা বিরোধী জোটের সাথে আলোচনা করে সব দলের অংশগ্রহনমূলক ও গ্রহনযোগ্য আর একটা মধ্যবতি নির্বাচনের নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসেনি। যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক একটা দেশের সরকারের সাথে আন্ত-রাষ্ট্রীয় বানিজ্য ও বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যুক্ত থাকার কারণে ঐ সরকারের সাথে অন্যান্য দেশের কাজকর্ম অব্যাহত রাখতেই হয়। যেমন এক সময় বর্নবাদী দক্ষিন আফ্রিকা, বর্তমান ইসরাইল ( এমনকি ফিলিস্তিন সরকারসহ ), তাইওয়ান, চিলি, পাকিস্তানের সামরিক সরকার, বার্মা এবং কম্বেডিয়ার পলপট সরকারের সাথেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সম্পর্ক ছিল ও আছে, তার অর্থ এই নয় যে গনতান্ত্রিক রীতিনীতিকে বিসর্জন দেওয়া অথবা স্বৈরাচারী শাসক বা শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া। শেখ হাসিনা ও তার সরকার এখন এসব দেশ সফর করে বড় বড় বিনিয়োগের চুক্তি করে দেশবাসীকে বুঝাতে চাচ্ছে এসব দেশ ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে এবং তার সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সুতরাং বিরোধী জোটের সাথে এখন কোন আলোচনার এবং ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচনের প্রয়োজন নাই। অথচ সরকারের অর্থমন্ত্রীসহ সকল মহল থেকেই বলা হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশী বিনোয়গ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে, শুধুই কি বিদেশী বিনিয়োগ ? দেশের বিনোয়গও যেমন একদিকে স্থবির তেমনি দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, দেশের শত শত নাগরিক এখন বিদেশে গিয়ে বাড়ি / ফ্ল্যাট কিনে সে দেশের নাগরিকত্ব ( সেকেন্ড হোম ) নিচ্ছে। অথচ ৫ জানুয়ারীর একটা তামাশার নির্বাচন যে জাতির জীবনে একটা খত হয়ে আছে এবং এর দ্রুত চিাকৎসা করে নিরাময় না করলে এটা যে পরবর্তিতে ক্যান্সারে পরিনত হতে পারে শেখ হাসিনার সরকার তা জেনেও ক্ষমতার নেশায় তা বুঝতে চাচ্ছেনা। কথায় আছে “উপর দিয়ে ফিটফাট, নীচ দিয়ে সদরঘাট”, দেশের ভেতরের ও দেশের বাইরের মানুষকে বোকা মনে করে শেখ হাসিনা ও তার সরকার বুঝাতে চাচ্ছে বাংলাদেশে এখন চরম শান্তি বিরাজ করছে, দেশের মানুষ খুব সুখে আছে। কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষ যে একটা অদৃশ্য আতংক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে এবং বিদেশীরাও যে বাংলাদেশে আবারও ( ৫ জানুয়ারীর আগের মত ) একটা অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে এমন পূর্বাভাসের লক্ষন ক্ষমতার মোহে অন্ধ শেখ হাসিনা ও তার সরকার উপলব্ধি করতে পারছেনা বা চাচ্ছেনা। বিশেষ করে ২০০৯ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের যেসব সিনিয়ার নেতা মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পায়নি, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর মন্ত্রী হতে পেরে তারাই এখন বেশী জোর গলায় বলছে তারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং ২০১৯ সালের আগে আর কোন নির্বাচন নয়, কারণ না পেয়ে পাওয়ার লোভ ও স্বাদ যে সবচেয়ে বেশী, আগের “ভাগ্যবানদের” মত তারাও যদি ৫ বছর লুটেপুটে খেয়ে যেতে না পারে তবে আওয়ামী লীগ করে লাভ কি ? বিরোধী জোট বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কিত নির্বাচন করে গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখায় অবৈধ সরকার বলছে, এই অযুহাতে সরকার বলছে তাহলে বি,এন,পি জোট অবৈধ সরকারের সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছে কেন ? কথায় বলে বিয়ের আগে সন্তান জন্ম নিলে পরবর্তিতে তাকে মেনে নেওয়ার জন্য “জন্ম যখন হয়েই গেছে” বলে এটাকে যতই বাস্তবতা বলা হউক বা তাকে যতই শিক্ষ-দিক্ষা দিয়ে বড় করা হউক তার পরিচয় একটাই সে একজন জারজ সন্তান, তেমনি গনতান্ত্রিক ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের কোন শর্ত না মেনে যদি নির্বাচন হয়েই যায় তবে সেই নির্বাচিত সরকারের পরিচয়ও অবৈধ সরকারই হবে। তাছাড়া জোর করে যদি কেউ কারো জায়গা দখল করে নেয় তখন ঐ জায়গা দখলমুক্ত করতে অবৈধ দখলকারীর সাথেও আলোচনা বা ফয়সালা করতে হয়, যুদ্ধের সময় দুই প্রতিপক্ষও ফয়সালা বা মিমাংসার জন্য চুক্তি করতে একে অপরের সাথে আলোচনায় বসে। সুতরাং রাজনীতির ক্ষেত্রেও সমঝোতা বা মতবিরোধ দূর করতে এক পক্ষকে আর এক পক্ষের সাথে আলোচনায় বসতে হয় এবং এটা গনতন্ত্রেরর অন্যতম প্রধান শর্ত। কিন্তু ক্ষমতা ২০২১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখার নেশায় শেখ হাসিনা ও তার দল কোন কিছুতেই যুক্তি ও সংগত কারণকে মানতে চাচ্ছেনা। সমস্যাটা বিরোধী বি,এন,পি জোটের সাথে, এমন নয় যে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এর সমাধান হয়ে গেছে বা বি,এন,পি জোট ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনটাকে হজম করে নিয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বি,এন,পিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে বা ঐ নির্বাচনে বি,এন,পি অংশগ্রহন না করায় একতরফা ভোটারহীন, প্রার্থীহীন একটা নির্বাচন করে ক্ষমতা গায়ের জোরে ধরে রাখলে রাজনৈতিক সংকট বা সমস্যা বরং আরো বাড়ে, সুতরাং আলোচনাতো বি,এন,পি জোটের সাথেই করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থক গোষ্টির লোকজন একটা সোজা সরল কথা উচ্চারন করে বলে কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে তখন আওয়ামী লীগ তথা সরকার কি নির্বাচন না করে বসে থাকবে ? তাহলেত দেশে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। অথচ নির্বাচন ৫ জানুয়ারী না করলেও সাংবিধানিক সংকট হতনা, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে ২৪ জানুয়ারীর পরের ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন করা যেত, সংবিধানেই সে সুযোগ ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা পরাজিত হওয়ার ভয়ে বি,এন,পিকে নির্বাচনে আসতে দিবেনা বলেই কোন সমঝোতায় যেতে চায়নি। কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে তখন আওয়ামী লীগ তথা সরকার কি নির্বাচন না করে বসে থাকবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে এভাবে বিষয়টাকে সরলভাবে দেখার কোন সুযোগ নাই। বি,এন,পি কি কারণে নির্বাচনে আসেনি এ বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে গেলে চলবেনা, শেখ হাসিনার সরকার যদি তখন সকল দলের জন্য সমান সুযোগ ( লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড ) সৃষ্টি করে দেওয়ার পর বি,এন,পি বা বিরোধী জোট নির্বাচনে না আসত তবে এমন সহজ হিসাব করা যেত। তাছাড়া নির্বাচনে কি শুধু বি,এন,পিই আসেনি ? দেশের ৪২ টা নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী জোটের ১২টা দল ছাড়া আর একটা দলও ( বি,এন,পি জোট ছাড়াও ) ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি। এমনকি সরকারী জোটের প্রধান শরীক এরশাদের জাতীয় পার্টীও ঐ নির্বাচন শেষ সময় পর্যন্ত বয়কট করেছিল, কিন্তু এরশাদকে হাসপাতালে নিয়ে আটক করে রেখে তার স্ত্রী রওশান এরশাদকে বাগে এনে জাতীয় পার্টীর একাংশকে পটিয়ে এবং তাদেরকে উৎকুচ বা ঘুষ হিসেবে মন্ত্রীত্বও দেওয়া হবে বলে নির্বাচনে এনে তাদেরকে এখন গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগনকে এক অদ্ভূত সংসদীয় গনতন্ত্র উপহার দিয়েছে। বিরোধী জোটের দাবী ছিল একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, তাহলে তারা অংশগ্রহন করত। এই দাবী মেনে নেওয়ার অর্থ এই ছিলনা যে শেখ হাসিনার দল বা জোটকে বি,এন,পি জোট সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হত, এতে উভয়ের জন্যই একটা সমান ক্ষেত্র তৈরী হত। শেষ পর্যন্ত বিরোধী জোট শেখ হাসিনার ফর্মূলা অনুযায়ী সর্বদলীয় ( সংসদে যাদের আসন ছিল ) সরকার ব্যবস্থাও মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল যদি শেখ হাসিনা ঐ সরকারের প্রধান হিসাবে না থাকে। বিরোধী জোট দাবী করেনি যে ঐ তিন মাসের জন্য খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে। শেখ হাসিনার চাটুকারের দল বলে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হত, কত খোড়া যুক্তি ! বিকল্প হিসেবে ঐ তিন মাসের জন্য একজন সতন্ত্র সংসদ সদস্য বা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য কোন ব্যক্তি এমনকি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিও যদি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রধান হত বিরোধী জোট তাতেও রাজী ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে বি,এন,পি সরকার নির্বাচনের স্বার্থে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন সাহেবের কাছে কিভাবে ক্ষমতা ছেড়েছিল ? শেখ হাসিনাই তার প্রত্যক্ষ সমর্থক ছিল। কিন্তু বিগত ৫ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পরেও চরম ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মাত্র তিন মাসের জন্যও গদি ছাড়তে রাজী হয়নি। অথচ মূখে সে বার বারই বলছে দেশর জন্য সে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত আছে, কার্যত দেশের স্থিতিশীলতা তথা সবার অংশগ্রহনমূলক একটা শান্তিপূর্ন নির্বাচনের স্বার্থে সে তিন মাসের জন্যও গদির লোভ ত্যাগ করতে চায়নি। শেখ হাসিনাসহ এখন আওয়ামী ঘরনার অর্বাচিনরা প্রায়ই এও বলে যে খেলার মাঠে যদি কোন দল খেলতে না আসে তবে রেফারী একতরফা সিদ্ধান্ত দেয় অর্থাৎ যে দল অংশগ্রহন করে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। কথাটা ঠিক, কিন্তু খেলার মাঠে একজন দল নিরপেক্ষ রেফারী থাকে, যদি প্রতিদ্বন্দ্বি দুই দলের মধ্য থেকে এক দলের কেউ রেফারী থাকে তবে ঐ খেলা যেমন পক্ষপাতমুক্ত হয়না অন্য দলও সেই খেলায় অংশগ্রহন করেনা, এটাই হয়েছে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নির্বাচন কমিশন যদি সরকার অনুগত না হত, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সমস্ত প্রশাসন ও নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার যদি নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত করা হত তবে নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ রেফারীর ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের প্রভাবে প্রভাবিত ও পরিচালিত হয় বলেই নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য বাংলাদেশে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। মূখে যতই উন্নত গনতান্ত্রিক দেশের উদাহরন দেওয়া হউক না কেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গনতান্ত্রিক আচরন ও রীতিনীতি এখনও উন্নত দেশের সাথে তুলনা করার ন্যূনতম পর্যায়েও উন্নীত হয়নি এবং হবে বলেও মনে হয়না। বৃটেন আমেরিকাতে আজকের মত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে ২০০ বছর লাগলেও, বাংলাদেশে ১০০০ বছরেও তা হবেনা। কারণ প্রকৃত গনতন্ত্রের লেশমাত্রও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্যমান নাই বা বৃটেন আমেরিকা এমনকি পার্শবর্তি ভারতের মত উন্নত গনতন্ত্রে উন্নীত হওয়ার চেষ্টা বা চর্চা আমাদের দেশে হয়না, আমাদের এখানে চলে শুধু ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতায় থাকার ও যাওয়ার রাজনীতি। যে কারণে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান আমাদের দেশে গনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আলাপ-আলোচনা বা সংলাপের মাধ্যমে হয়না, রাজপথে সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হয় অথবা ক্ষমতসীন দল তাদের দলীয় অনুগত বিচারকদের দ্বারা আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যে কারণে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী ও তাদের সমর্থক শিক্ষক সাংবাদিক ও কথিত বুদ্ধিজীবি বা সুশীল সমাজের লোকজন এখন সবাই বলছে বিরোধী দল ( বি,এন,পি ) বা জোট যদি সরকারকে তাদের দাবী মানতে তথা মধ্যবর্তি নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে না পারে তবে সরকার নিজ থেকে কেন এই মূহুর্তে আর একটা নির্বাচন দিবে বা এ ব্যাপারে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসবে ? অর্থাৎ তাদের সুরও আওয়ামী লীগের মত অগনতান্ত্রিক অর্থাৎ বিরোধী দলকে দাবী আদায় বা রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হলে আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এটাই যদি গনতান্ত্রিক রাজনীতির ব্যাপারে সরকার বা তার দোষরদের অবস্থান হয় তবে সরকারকে বাধ্য করতে হলেতো বিরোধী দলের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে বা দেশের প্রশাসনকে অচল করে দিতে হবে। আর তা করতে হলেতো বিরোধী দলকে রাজপথে ব্যপক ধ্বংশাত্মক বা সহিংস আন্দোলন শুরু করতে হবে। কারণ সরকার আন্দোলন দমন করতে বা ঠেকাতে রাষ্ট্রের পুলিশ, র‌্যাব, বি,জি,বিসহ সরকারী দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রসহ জলকামান, গরম পানি, মরিচের গুড়া, সাউন্ড গ্র্যানেড, রাবার বুলেট ও আন্দোলন দমনের আরো অন্যান্য উপকরন নিয়ে বিরোধী দলের উপর বেপরোয়াভাবে চড়াও হবে ( যা ৫ জানুয়ারীর আগে করা হয়েছে )। সরকারকে বাধ্য করতে হলেতো বিরোধী দলকেও এমন অস্ত্রসস্ত্র ও শক্তি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে, কারণ বিরোধী দলের অহিংস ও শান্তিপূর্ন আন্দোলনকে সরকারতো আমলেই নেয়না উল্টো ঠাট্টা / মশকরা করে, তদুপরি এধরনের নরম আন্দোলন করতেও তাদেরকে কথিত নাশকতার আশংকার কথা বলে রাস্তায় নামতে দেয়না। তাহলে সরকার, আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী ও তাদের সমর্থক লোকজন কি চাচ্ছে দেশে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা বা যুদ্ধ শুরু হউক ? যদি সরকারকে বাধ্য করতে বিরোধী জোট দেশে আবারও ৫ জানুয়ারীর আগের মত আন্দোলন শুরু করে তখনতো আবার এরাই বলতে থাকবে আন্দোলনের নামে বিরোধী দল দেশে সহিংসতা চালাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি বা তাদের ভাষায় হরতাল অবরোধের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেনা, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছেনা। কথাটা যেমন সত্য তেমনি আওয়ামী লীগ সরকার ও তার সমর্থক গোষ্টি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে একটা প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন মনে করা সত্ত্বেও চায় আওয়ামী লীগই যাতে ক্ষমতা ধরে রাখে। এজন্য তারা শেখ হাসিনার সরকারকে দেশ ও জনগনের স্থিতিশীলতা ও শান্তির স্বার্থে গনতান্ত্রিক পন্থায় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী দলের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ না দিয়ে বা উৎসাহিত না করে বরং বিরোধী দলকে প্রতিনিয়ত উস্কানী দেওয়া হচ্ছে দাবী আদায়ের জন্য বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনের গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অনুগত এই মহল বার বার আরো যে কথাটা বলছে বিরোধী দলের সাথে জনগনের সম্পৃক্ততা নাই বলে তাদের আন্দোলন সফল হয়না। একথাটাও যেমন সত্য তেমনি সরকারকে বাধ্য করতে বিরোধী দলের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ, র‌্যাব, বি,জি,বি ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে সহিংস বা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনা বলেই কি বিরোধী দলের দাবীর সাথে জনগনের সম্পৃক্ততা নাই বুঝায় ? দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরস্ত্র সাধারন জনগন ( যারা বিরোধী দলের দাবীর সমর্থক ) তাদের আন্দোলন করার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কেন রাজপথে সরকারী বাহিনী ও সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলি খেয়ে প্রান দিবে ? ৫ জানুয়ারীর আগে এবং তারও আগে গত বছর ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দল ও তাদের সমর্থকরা সরকারী সশস্ত্র বাহিনীর মারমূখী ভূমিকা ভালভাবেই প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাছাড়া বিরোধী দলের দাবীর প্রতি জনগনের সমর্থন বা সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা প্রমান করার বহু গনতান্ত্রিক পন্থা রয়েছে, সরকার গনভোট দিয়েও তা যাচাই করে দেখতে পারে, সরকারকে বাধ্য করার মত রাজপথে সহিংস আন্দোলন করতে হবে কেন ? কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ গনতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা এবং গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বলেই সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগের পথ অনুসরন করে বিরোধী দলের দাবী আদায়ের আন্দোলন দমন করার কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। আর সরকারের এমন মনোভাব ও কাজকে সমর্থন ও উৎসাহিত করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের দালাল গোষ্টি। স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের যে অগনতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী চরিত্রের পরিচয় পেয়েছিল আজ দীর্ঘ ৪০ বছর পরেও বাংলাদেশের মানুষ দেখতে, বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারছে আওয়ামী লীগের ও তাদের দোষর, চামচা বা তাবেদার-চাটুকারদের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭২-৭৫ সময়ের মধ্যে এ ধরনের চাটুকারের দল মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকেও এমনভাবে সমর্থন ও কুপরামর্শ দিয়ে তাকে অগনতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু খেসারত দিতে হয় শাসক দলকেই, ক্ষমতার মোহে অন্ধ শেখ হাসিনার অওয়ামী লীগও এখন ইতিহাস ভুলে গেছে।
৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সবচেয়ে অগ্রহনযোগ্য দিক হল ৩০০ আসনের মধ্যে অর্দ্ধেকের বেশী ১৫৪ আসনের সদস্যই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে, দেশের ২৪টা টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন সূত্রের সচিত্র খবর অনুযায়ী ঐ নির্বাচনে ৫-১০% বেশী ভোটারের উপস্থিতি ছিলনা, কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ৩ দিন পর ব্যালট পেপার বই এর ছেড়া পাতার মুড়ি গুনে বলে দিয়েছে ৪০% ভোট পড়েছে, ব্যালট পেপারের হাজার হাজার পাতা বিভিন্ন কেন্দ্রে কারা ছিড়েছে দেশের মানুষ ৫ জানুয়ারী ভালভাবেই দেখেছে। আওয়ামী মহল থেকে বলা হয় বি,এন,পি জোট নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়ায় এবং ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছিল। বিরোধী জোটত তাদের দাবী অনুযায়ী নির্বাচন না হওয়ায় ঐ নির্বাচন বয়কট বা প্রতিহত করার চেষ্টা করবেই, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের সকল সশস্ত্র শক্তি ও দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়েও কি ভোটের দিন ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি ? দেশের ৪০টার বেশী কেন্দ্রে ১টা ভোটও পড়েনি, ঐ কেন্দ্রগুলোতে কি আওয়ামী লীগের ১ জন ভোটারও ছিলনা ? বি,এন,পি জোটের নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি কি সরকারের রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তির চেয়েও বেশী শক্তিশালী ছিল ? আসলে এমন একতরফা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে জনগনের কোন উৎসাহ বা আগ্রহ ছিলনা বলেই জনগন স্বতস্ফূর্ত হয়ে ভোট কেন্দ্রে যায়নি, কিন্তু অগনতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মনোভাব ও মানষিকতা পোষণ করে বলেই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এ সত্যটা মানতে বা উপলব্ধি করতে পারেনা। বরং উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ঐ বিতর্কিত নির্বচনকে বৈধ ও আইণসিদ্ধ বলে সার্টিফিকেট যোগাড় করে নিয়েছে। সংবিধানে বলা আছে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হবে, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তা হয় নাই, আরো বলা আছে অংশগ্রহনমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন নির্বাচন হতে হবে, তাও হয় নাই, তা হলে ঐ নির্বাচনটা গনতান্ত্রিক ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হল কিভাবে ? ন্যূনতম কত শতাংশ ভোট পড়লে বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কতজন সদস্য নির্বাচিত হলেও নির্বাচনকে বৈধ বলা যাবে সংবিধানে এই কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ নাই বলে এটাকে পুঁজি করে শসক দল মাত্র ৫-১০% ভোট পেয়ে এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসনে জয়লাভ করলেও ঐ নির্বাচনকে বৈধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন বলে চালিয়ে দিতে পারবে ? সংবিধানে যখন নির্বাচন সংক্রান্ত ঐ কথাগুলো লেখা হয়েছিল তখন হয়ত সংবিধান প্রনেতারা কল্পনা বা ধারনা করতে পারেন নাই যে বাংলাদেশে এ ধরনের নির্বাচনও হতে পারে, এটাই যদি সংবিধান অনুযায়ী ও উচ্চ আদালতের মতে বৈধ ও আইণসিদ্ধ নির্বাচন হয়ে থাকে তবে ভবিষ্যতে অন্য কোন শাসক দল বা আওয়ামী লীগ সরকার যদি ১% ভোট পেয়ে ৩০০ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে তবে তাকেও কি সংবিধান অনুযায়ী বৈধ ও অইণসিদ্ধ নির্বাচন বলা হবে ? তাহলে বাংলাদেশেত শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মার্কা গনতন্ত্র ও নির্বাচনই চালু হয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবী আদায় করে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ও তার দল বলেছিল জনগনের ভোটের অধিকার ফেরত দিয়েছে, কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই আওয়ামী লীগই আবার জনগনের ভোটের অধিকার হরন করে নিয়েছে। আওয়ামী মহল থেকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারীর নির্বাচনের উদাহরন দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে বি,এন,পি সরকারের সময় ১৫ ফেব্র“য়ারী যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০-২৫% এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল ৪৭ জন। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নাই, কারণ সে নির্বাচনটা হয়েছিল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে সব দলের সমঝোতা বা ঐক্যমত হওয়ার পর, দুই-তৃতিয়াংশ আসন সংখ্যা না হলে সংবিধানে তা সংযোজন করে সংশোধনী আনা যাবেনা, তাই বি,এন,পি একা নির্বাচন করে দুই-তৃতিয়াংশ আসন পাওয়ার পর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুচ্ছেদটা সংযোজিত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাশ করেছিল। কিন্তু ঐ নির্বাচনের পর বি,এন,পি সরকার সুর পাল্টায়নি, তারা তখন বলেনি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বা রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী জোটকে দমন করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাশ করিয়ে নির্বাচনের ১২ দিনের মাথায় তারা ( বি,এন,পি সরকার ) বিচারপতি শাহাবুদ্দীন সাহেবের কাছে ক্ষমতা দিয়ে ( তাও সবার মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ) পদত্যাগ করেছিল। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন পূর্ববর্তি বিরোধী দলের প্রবল সহিংস আন্দোলনের মূখে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য নেতারাও একবার নয় বহুবার বলতে বাধ্য হয়েছিল এ নির্বাচনটা শুধু নিয়ম রক্ষার বা সংবিধান রক্ষা করার নির্বাচন, এর পরেই সবার অংশগ্রহনমূলক আর একটা নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করা হবে। এই অংগীকার বা প্রতিশ্র“তিটা যদি বিরোধী দলের সাথে নির্বাচনের আগে আলাপ আলোচনা করে সমঝোতা বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেওয়া হত তবে বিরোধী দল আর নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন করতনা, আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক নীতি বা সততার অভাব আছে বলেই শেখ হাসিনার সরকার তখন কোন সমঝোতা না করে বরং বিরোধী দলের আন্দোলনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন বা দমন করার মধ্য দিয়ে গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চেয়েছে, কিন্তু তাতেও সফল হয়নি। এখন বলছে সব নির্বচনইতো নিয়ম রক্ষা বা সংবিধানের বাধ্যবাধকতার জন্যই করা হয়, তাই তখন এ কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনওতো নিয়ম রক্ষা বা সংবিধানের বাধ্যবাধকতার জন্যই করা হয়েছিল, তখনতো এমন কথা উচ্চারিত হয়নি বা নির্বাচনের পর আর একটা মধ্যবর্তি নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করার প্রতিশ্র“তি বা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে নাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে এমন কথা কেন বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগ এটাকে এখন কৌশল বল্লেও জনগন এটাকে আওয়ামী লীগের প্রতারনা ও ধোকাবাজি রাজনীতির অংশ হিসেবেই দেখছে। যদি তখন একটা সমঝোতার মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহনমূলক নির্বাচত করা হত তবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে এখন জাতীয় রাজনীতির ললাটে একটা কলংক হিসেবে মনে করা হতনা এবং এ নিয়ে দেশে বা দেশের বাইরে ( যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসত ) সরকারকে কোন প্রশ্নের বা আর একটা নির্বাচনের চাপ সহ্য করতে হতনা। যেহেতু ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনটা সবার অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিলনা এবং দেশের প্রধান বিরোধী দল বা জোট তাতে অংশগ্রহন করেনি এবং সেই ভোটারহীন একতরফা নির্বাচন ও পরবর্তিতে শেখ হাসিনার গায়ের জোরে গঠিত সরকারকেও মানতে সংগত কারণে বাধ্য নয় সুতরাং আন্দোলনে সফল হউক বা না হউক তাদের সামনে আর কোন বিকল্প না থাকলে ( সরকার সংলাপে রাজী না হলে ) বা তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে বিরোধী দলকে যদি তাদের নেতা-কর্মীকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় তবে তারা রাজপথকে আবারও উত্তপ্ত করতে জনজীবনকে দু:সহনীয় করে তুলতে যে কোন সময় আন্দোলন শুরু করতেই পারে। আর এজন্য শেখ হাসিনা, তার আওয়ামী লীগ এবং অগনতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসনকে সমর্থনকারী বর্তমান সরকারের দালাল ও তোষামদকারীরাই সবচেয়ে বেশী দায়ী হবে। সেজন্য সরকারের তোষামদকারী ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যারা তখন দেশ ও অর্থনীতি গেল গেল বলে বিরোধী দলকে হরতাল/অবরোধ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাতে জানাতে অস্থির হয়ে পড়বেন তাদের উচিত দলীয় আনুগত্যের উর্দ্ধে উঠে দেশে যাতে আবারও এমন আন্দোলন শুরু না হয় সেজন্য দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অগনতান্ত্রিক ও স্বৈরচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা করার চেষ্টা না করে বিরোধী দলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সংকট সমাধান করে দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য শেখ হাসিনার সরকারের উপর এখনই চাপ প্রয়োগ করা । বরং শেখ হাসিনা, তার দল ও সমর্থক গোষ্টির লোকজন এখন জোরালোভাবেই বলছে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর দেশ এখন বেশ ভালভাবে চলছে, দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে, জনগন খুব সুখে আছে, বিভিন্ন দেশী বিদেশী জরীপে নির্বাচন পরবর্তি বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। তাহলে এটাইতো শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কাছে সবচেয়ে মোক্ষম বা উত্তম সময় একটা গ্রহনযোগ্য ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন করে সংখ্যাগড়িষ্ঠ জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হয়ে এসে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বিঘেœ ও স্বদর্ভে দেশ পরিচালনা করা। বি,ন,পি-জামায়াত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবেনা এই অগনতান্ত্রিক ভাষা বা উক্তি প্রকাশ করার আর প্রয়োজন পড়বেনা, গনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী জনগন যদি নির্বাচনে বি,ন,পি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করে তবে তারা রাজনৈতিকভাবেই পরাজিত হয়ে যাবে, তখন তারা ৫ বছরের জন্য এমনিতেই চুপ হয়ে যাবে। দেশ, দেশের অর্থনীতি ও জনগন যেমন অনাকাঙ্খিত হরতাল-অবরোধসহ সহিংস আন্দোলনের যন্ত্রনা থেকে বাঁচবে তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে দেশী ও বিদেশী মহলের অপবাদ ও চাপ থেকে পরিত্রান পাবে। ঘন ঘন বিদেশ সফরের সময় বিশাল সফরসঙ্গি নিয়ে যেতে দেশের যে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা খরচ হচ্ছে সে তুলনায় অনেক কম টাকাতেই আর একটা মধ্যবর্তি নির্বাচন অনায়াসেই করা যায়। আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা যদি সত্যিই আওয়ামী লীগকে একটা ঐতিহ্যবাহী গনতান্ত্রিক দল হিসেবে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী ও শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তবে তাদের সামনে এটাই উপযুক্ত সময় ও সুযোগ।
লেখক : জাহিদ হাসান,
রিয়াদ, সউদী আরব।