মফিজ আলী : শ্রমিক আন্দোলনের দিকপাল

Mofiz-Aliঅনন্য আদিত্যঃ আগামী ১০ অক্টোবর এদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু ও প্রাণপ্রিয় নেতা মফিজ আলীর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছরের মত এ বছরও নিশ্চয়ই তাঁর সংগঠন, সংগ্রামী সাথীরা ও এলাকার জনগণ যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে তাঁকে স্মরণ করবে। জীবনের জয়গানে যারা মুখরিত করেছিলেন নিজেদের জীবন, জীবনকে বাজি ধরেছিলেন জীবনকে জয় করার জন্যে, জীবন মানেই যুদ্ধÑএই জীবন জয়ী মন্ত্রে যারা উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন, মফিজ আলী ছিলেন তাদেরই একজন। সামন্ত ভূ-স্বামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নিজের শ্রেণীচ্যুতি ঘটিয়ে আমৃত্যু শ্রমিক শ্রেণীর কাতারে দাঁড়িয়ে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী সংগ্রাম করে গেছেন। বৃহত্তর সিলেটের প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম পুরোধাপুরুষ মফিজ আলী ১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীসূর্য-ধোপাটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নানা রকম ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। ১৯৫৬ সালে পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে এমসি কলেজের ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বক্তব্য রাখার কারণে তৎকালীন অধ্যক্ষ সুলেমান চৌধুরী তাকে কলেজ হতে বহিস্কার করলে বি.এ শেষবর্ষের ছাত্র অবস্থায় তাঁর শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
মফিজ আলী চা-শ্রমিকদের মধ্যে যেমন ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন, তেমনি কৃষক আন্দোলনেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৩ সালে বালিশিরার কৃষকদের পাহাড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ১৯৬৭ সালে কুলাউড়ার লস্করপুরে অনুষ্টিত পূর্ব-পাকিস্তান কৃষক সমিতিরি প্রাদেশিক সম্মেলনে মফিজ আলী নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্ব-পাকিস্তান কৃষক সমিতির সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রতি মফিজ আলীর আস্থা ছিল অবিচল। ৬০-এর দশকে সংশোধনবাদী তিন শান্তির তত্ত্ব নিয়ে বিশ্ব কমিউনিষ্ট আন্দোলনে মহাবিতর্ক শুরু হলে আমাদের দেশে কমরেড আবদুল হক, কমরেড অজয় ভট্টাচার্য্য প্রমূখ নেতৃবৃন্দ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকা উর্দ্ধে তোলে ধরে মতাদর্শগত লড়াই চালান। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালে পার্টি বিভক্ত হয়ে গেলে মফিজ আলী মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি মাঠের কমী হিসেবে, জননেতা হিসেবে শোষিত নির্যাতিত শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেমন নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন তেমনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি ইংরেজি ডন, সংবাদ, ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক জনতা, লালবার্তা প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। তিনি গণতন্ত্রের নির্ভীক মূখপত্র সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করে গেছেন।
মফিজ আলী তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটা সময় নিজের পরিজনদের চিন্তা না করে সাধারণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি যতদিন সুস্থ সচল ছিলেন ততদিন এই সংগ্রামের পথে নিজেকে স্বক্রিয় রেখেছিলেন। মফিজ আলী যে এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সে এলাকার সবচেয়ে শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিগৃহিত জনগোষ্ঠী হলেন চা-শ্রমিকরা। চা-শ্রমিকদের শ্রম ঘাম এবং তাদের পুরো জীবনটাই মালিকরা প্রায় বিনামূল্যে কিনে নেয়। চা-শ্রমিকদের ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, মাদ্রাজ প্রভৃতি এলাকা থেকে নানা রকম প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এদেশে নিয়ে এসে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। চা-শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের বিপ্লবী ধারায় সংগঠিত করা ছিল মফিজ আলীর অনন্য সাধারণ উদ্যোগ। এ কাজে তাঁর অন্যতম সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন এডভোকেট মনিরউদ্দিন আহমেদ, চা-শ্রমিকনেতা শিবু প্রসাদ কৈরী, বলরাম নায়েক, সীতারাম বার্মা, রাধাকৃষাণ কৈরী প্রমূখ। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর ১৯৬৪ সালের ৫ এপ্রিল চা-শ্রমিক সংঘ গঠিত হয়, শুরু হয় চা-শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বাগানে বাগানে সভা, সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রাম। চা-শ্রমিক সংঘের উদ্যোগে মাসিক বেতন ১০৫ টাকা, দুই মাসের সমপরিমান উৎসব বোনাস, মাথাপিছু রেশন ৫ সের, বেকার শ্রমিকদের কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, পানীয় জলের সুব্যবস্থা, ইউনিয়ন করার অধিকারসহ ৯ দফা দাবিতে দূর্বার আন্দোলন মালিক পক্ষ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দালাল নেতৃত্বের ভিত কাপিয়ে তোলে। এর বিপরীতে মালিকপক্ষ ও দালালগোষ্ঠী সমন্বিত হয়ে শুরু করে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও আক্রমণ; মফিজ আলীর নামে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা। মালিকদের মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ১০ হাজার চা-শ্রমিক পায়ে হেটে মিছিল করে শমসেরনগর হতে মৌলভীবাজার গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বাধ্য হয়ে আদালত মফিজ আলীর অগ্রিম জামিন দেয়। সরকার ও মালিকগোষ্ঠির অব্যাহত ষড়যস্ত্র-চক্রান্তের কারণে এক সময় চা শ্রমিকদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন চা শ্রমিক সংঘ রেজিঃ নং ১২৫২ এর রেজিষ্ট্রেশন বেআইনীভাবে বাতিল করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় মালিকদের দালাল চা শ্রমিক ইউনিয়নের একচ্ছত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব। চা-শ্রমিকরা দালালদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়ে। কারণ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দালাল নেতৃত্ব শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় বেশি ব্যস্ত। যার কারণে চার পাঁচ জনের পরিবারের একজন চা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ৩০০ টাকা যেখানে প্রয়োজন সেখানে মহাজোট সরকারের পক্ষ থেকে কখনও ১৫০ টাকা, কখনও ১০০ টাকা এবং অতি সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ২০০ টাকা মজুরি কার্যকরের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও বর্তমানে একজন চা-শ্রমিক দৈনিক সর্বোচ্চ ৬৯ টাকা মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের এই উর্দ্ধগতির বাজারে অর্ধাহার-অনাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। ৬৯ টাকা মজুরি আদায়ও সম্ভব হয়েছে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে জরুরী অবস্থার মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে একযোগে ২২ টি বাগানে ধর্মঘটের ফলশ্রুতিতে। ২০০৮ সালে মজুরি বৃদ্ধিসহ ৭ দফা দাবিতে চা-শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সর্ববৃহৎ ধর্মঘটের ফলশ্রুতিতে প্রথমে ৩২.৫০ টাকা হতে এক দফায় ১৫.৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ৪৮ টাকা, তারপর ধাপে ধাপে ৫৫ টাকা, ৬২ টাকা ও সর্বশেষ গত বছর ৬৯ টাকা মজুরি কার্যকর করা হয়। এক্ষেত্রেও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চা শ্রমিক সংঘের নেতৃত্বে হাজার হাজার শ্রমিক মিছিল করে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মরকলিপি পেশ ও একই দাবিতে ২৩ মে ৬টি বাগানে ধর্মঘট করায় ৬৯ টাকা মজুরি আদায় সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সালের এই আন্দোলনের মাধ্যমেই পুণর্জাগরণ ঘটে মফিজ আলীর হাতে গড়া চা শ্রমিক সংঘের। তারপর থেকে চা-শ্রমিক সংঘের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাগানে চলতে থাকে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম, বিভিন্ন বাগানে চা-শ্রমিকদের কিছু কিছু স্থানীয় দাবিও আদায় হয়। এই আন্দোলনের প্রভাবে ২০১০ সালে কালাগুল চা বাগানের শ্রমিকরা ১৭ দিনের লাগাতার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে কিছু কিছু স্থানীয় দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এর ধারাবাহকতায় এবছর এপ্রিল মাসে কালাগুল বাগানের শ্রমিকরা ৮ দফা দাবিনামা ম্যানেজমেন্টের নিকট পেশ করলে ম্যানেজমেন্ট কিছু কিছু দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে অনুযায়ী দাবি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু জুন মাসে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর লক্ষ্যে ম্যানেজমেন্ট, শ্রম কর্মকর্তা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জোর পূর্বক সদস্য ফরম(ডি-ফরম) পুরণ করাতে চাইলে শ্রমিকরা চা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হতে অস্বীকৃতি জানায়। একই সাথে সদস্য ভর্ত্তির দায়িত্ব ইউনিয়নের নেতাদের হওয়ায় কালাগুল বাগানের শ্রমিকরা তাদের অতীতে প্রদেয় চাঁদার হিসেবসহ ইউনিয়নের কার্যক্রমের জবাবদিহিতার জন্য ইউনিয়নের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে বাগানে আহ্বান জানায়। ইউনিয়নের নেতারা বাগানে না এলেও ম্যানেজমেন্ট ষড়যন্ত্র-চক্রোন্তের নির্বাচনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে না পেরে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালায় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বাগানে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। এমনবস্থায় গত ১ জুলাই হতে কালাগুল বাগানের শ্রমিকদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩ মাস হতে কাজ করতে না পারায় মজুরি না পেয়ে শ্রমিকরা অনাহার-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ৩ আগষ্ট সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ৮ ও ৯ আগষ্ট সাংবাদিক সম্মেলন করে এবং ৭ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের গণস্বাক্ষরে মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করে বাগান চালু করার আহ্বান জানালেও অদ্যাবধি বাগান চালু কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু শ্রমিকদের ঈদ ও পূজার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে নানামূখী নিযৃাতন ও একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িত করে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে একদিকে শ্রমিকদের যেমন বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে তেমনি কালাগুল চা-বাগান তথা চা-শিল্পেরও অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তাই অনতিবিলম্বে মালিকপক্ষকে এই আত্মঘাতী পথ পরিহার করে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করে কালাগুল বাগান রক্ষা করতে হবে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টিকে কোন দিনও গুরুত্ব দেয়নি, তারা লেবার হাউসে বসে কি করে শ্রমিকদের মাসিক চাঁদা (প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা) লুটপাট করবে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। কিন্তু কোন দিনও তারা শ্রমিকদের নিকট চাঁদার হিসাব দেয়নি। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশের ৩৭ বছরে(২০০৮ পর্যন্ত) প্রতি দুই বছর অন্তর ১/২ টাকা বৃদ্ধি করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক সর্বোচ্চ মাত্র ৩২.৫০ টাকা মজুরি কার্যকর ছিল। চা শ্রমিক ইউনিয়নের উভয় পক্ষ অদ্যাবধি মজুরি বৃদ্ধিসহ শ্রমিকস্বার্থে কার্যকর কোন আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে না তোলায় দীর্ঘ ৩৭ বছরেও শ্রমিকদের সর্বোচ্চ মজুরি ছিল মাত্র ৩২.৫০ টাকা, যা প্রকারান্তরে মালিকদেরই স্বার্থ রক্ষা করেছে। ২০০৮ সালের ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের ফলে চা শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়। মজুরি বোর্ড যোগালী সর্দার ও প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মীকে মাসিক বেতনধারী, এক মাসের বেতনের সমপরিমান করে বছরে দুইটি উৎসব বোনাস, মাসে ২৬ কেজি চাল/আটা রেশন, ১ বিঘা পর্যন্ত ক্ষেতের জমির জন্য রেশন কর্তন বন্ধ, গ্র্যাচুয়েটি কার্যকর ও কোম্পানীর লভ্যাংশ ৫% শ্রমিকদের প্রদানসহ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা কার্যকরের সুপারিশ করে ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই খসড়া গেজেট প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ‘নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতাসীন ইউনিয়নের তৎকালীন নেতৃত্ব খসড়া গেজেটের সুপারিশকে বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে ২০০৯ সালের আগষ্ট মাসে অতীতের ন্যায় দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করেছে। দালালদের পুর্ণবাসিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রচলিত শ্রম আইন ও আইএলও কনভেনশন লঙ্ঘন করে মালিকপক্ষ, দালালনেতৃত্ব ও সরকার সমন্বিত হয়ে গত আগষ্ট মাসে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের পূর্বে তারা সকলেই শ্রমিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচনের পর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করবে। প্রথা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাস থেকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি কার্যকর হয়। শ্রমিকরাও মনে করেছিল আগষ্ট মাসে নির্বাচন হওয়ার পর নির্বাচিত কমিটি মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর তড়িঘড়ি করে লেবার হাউসের দখলদারিত্ব নিয়ে শ্রমিকদের নিকট হতে কোথাও ২০ টাকা, কোথাও ৩০ টাকা, আবার কোথাও বা ৪০ টাকা করে এক সাথে চাঁদা আদায় করা শুরু করলে আজ পর্যন্ত মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ‘টু’ শব্দটি করছে না। অথচ তারাই দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি করাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকের কাছে ভোট চেয়েছে। শ্রমিক স্বার্থ কখনোই তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি, তাদের লক্ষ্য লেবার হাউসে বসে কি করে শ্রমিকের চাঁদা আদায় করে নিজেদের আখের গোছাবে।
বাংলাদেশের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ৬৯ টাকা মজুরিতে কাজ করলেও পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কার চা শ্রমিকরা দৈনিক ৫৫০ রুপি(প্রায় ৩৩০ টাকা), ভারতের চা শ্রমিকরা দৈনিক ৯৫ রুপি(প্রায় ১২০ টাকা) মজুরি পাচ্ছেন। রেশন, চিকিৎসা, উৎসব বোনাসসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও আমাদের চেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের চা শ্রমিকরা অনেক বেশি পেয়ে থাকেন। বর্তমানে ভারতের চা শ্রমিকরা দৈনিক ২৮৫ রুপি (প্রায় ৩৫০ টাকা) মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। দুর্গাপূজার আগেও ভারতের শ্রমিকদের উৎসব বোনাস মজুরির শতকরা ২০ ভাগ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। মালনীছড়া রাবার শ্রমিক সংঘের শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন-সংগ্রাম ও ধর্মঘটের প্রক্রিয়ায় দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরি, সাপ্তাহিক ৫ কেজি রেশন, পাকা ঘর, শিক্ষা ভাতা ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই চা শ্রমিকদের দালালদের খপ্পর হতে মুক্ত হয়ে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পরিচালিত আপোসহীন, সৎ, সংগ্রামী, শ্রেণী সচেতন নেতৃত্বে পরিচালিত প্রয়াত মফিজ আলীর হাতে গড়া চা শ্রমিক সংঘ-এর পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।
মফিজ আলী জন্মেই প্রত্যক্ষ করেন ৩০’এর দশকের মহামন্দা, যার পরিনতি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর মৃত্যুর পূর্বে দেখে যান পুজিঁবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার অতি উৎপাদনজনিত অর্থনৈতিক মন্দা, যা থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বাজার ও প্রভাব বলয়ের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের প্রশ্নে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা মন্দা থেকে মহামন্দার দিকে ধাবিত হয়ে ইতিহাসের এক কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বাজার ও প্রভাব বলয় পুণঃবন্টনের প্রশ্নে আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়ে মুদ্রাযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ, আঞ্চলিকযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধ প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার অপতৎপরতা চলছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন প্রাধান্য থাকলেও এতদ্বাঞ্চলে সা¤্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের নেতৃত্বে সাংগাই সহযোগিতা সংস্থার (ঝঈঙ) শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় এতদ্বাঞ্চলে দালালদের প্রভু পরিবর্তনের দিকটি সামনে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতার পালাবদলে ইতিপূর্বেকার একই প্রভূর এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালালকে ক্ষমতায় আনার বদলে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর প্রভূ পরিবর্তনের দিকটি সামনে আসে। অন্যদিকে সংশোধনবাদী সিপিবি-বাসদসহ বাম নামধারী দলগুলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তোলে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে প্রকৃত পরিস্থিতি ও সাম্রাজ্যবাদকে আড়াল করে প্রচলিত রাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুন্ন রেখে ক্ষমতার স্বাদ পেতে তৎপর।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের ঢালাও লুটপাটের ফলশ্রুতিতে আরো ঘনীভূত সংকটের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নিত্যপ্রয়োজনী জিনিষপত্রের লাগামহীন অগ্নিমূল্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবহন তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা তথা ৫ টি মৌলিক প্রয়োজন ও সকল ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে। তার উপর বর্তমানে আবারও গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ এবং ডিজের, কেরোসিন ও সিএনজি’র মূল্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ জনগণকে দিশেহারা করে তুলেছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে কৃষক ফসল ফলালেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম মূল্য পেয়ে কৃষকরা লোকসানে দিশেহারা। একদিকে অবকাঠামোগত তীব্র সংকট অন্যদিকে রেন্টাল, কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎখাতে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশী লুটপাট, শেয়ার বাজার হতে ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশী, হলমার্ক-বিসমিল্লাহসহ নামে-বেনামী কোম্পানীর মাধ্যমে ব্যাংক-বীমা লুটপাট, ডেসটিনি-ইউনিপেটুর মত হায়হায় কোম্পানী লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়েছে। গ্যাস, সম্ভাব্য তেল, কয়লাসহ প্রাকৃতিক সম্পদ ঢালাও লুটপাটের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী নীতি-নির্দেশ কার্যকরী করে চলায় এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে শিল্পক্ষেত্রেও শ্রমিক-কর্মচারীদের সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। নয়াউপনিবেশিক আধা-সামন্ততান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে আমাদের এই রাষ্ট্র তথা সরকার সমাজের উৎপাদক শ্রেণী, শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষে না যেয়ে একচেটিয়া পুঁজি ও তার দালাল পুঁজিপতি শ্রেণীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে চলে, যার প্রতিফলন ঘটেছে শ্রম আইন সংশোধনী ২০১৩-তে। অতীত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও শ্রমিক বান্ধবের কথা বললেও, সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, আইএলও কনভেনশন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংগঠন যাতে গড়ে না উঠতে না পারে তার লক্ষ্যে শ্রম আইন প্রণয়ন করেছে। শ্রমিকদের বাচাঁর মতো ন্যূনতম মূল মজুরি ৮০০০ টাকার দাবি সরকার উপেক্ষা করে চলেছে। চা-রাবার, হোটেল, রিকশা, দর্জি, পরিবহন, দোকান-কর্মচারী, নির্মাণ, স’মিল, রাইসমিল, মুদ্রণ শ্রমিকসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা যেমন ন্যায্য মজুরি হতে বঞ্চিত তেমনি শ্রম আইনের যে সামন্যতম সুযোগ-সুবিধা আছে তা থেকেও বঞ্চিত। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার হোটেল শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরির গেজেট ঘোষণা করে, যা বাজার দরের তুলনায় নিতান্তই কম। এমন কি ২৬ এপ্রিল’১২ গেজেট বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেঁস্তোরা মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও মালিকরা আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে চলছেন। অথচ সরকারের ঘোষিত গেজেট ও আইন বাস্তবাস্তবায়নের দাবীতে আন্দোলন করলে শ্রমিকদের উপর নেমে আসে মামলা-হামলা, নির্যাতন। আজও মালিকদের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলার হোটেল শ্রমিক নেতৃবন্দকে। গত ২৯ এপ্রিল স’মিল শ্রমিকদের জন্য সরকার নি¤œতম মজুরির খসড়া সুপারিশ প্রকাশ করলেও নানা টালবাহানায় মজুরি চড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে না। এর আগেও স’মিল শ্রমিকদের মজুরির গেজেট প্রকাশ করেও স্থগিত করা হয়েছিল। রিকশা শ্রমিকরাও পাচ্ছেন না বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যায্য ভাড়া, তার উপর রিকশা শ্রমিকদের উপর শাররিক নির্যাতন নিত্য দিনের ঘটনা। শ্রমিকদের এই শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে হবে, দাবি আদায়ে শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেণী সচেতন নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবেÑ এটাই ছিল মফিজ আলীর শিক্ষা।
বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪২ বছরে কখনও রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনও সংসদীয় পদ্ধতি শাসিত, কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নামে নানা ধরনের শাসন ব্যবস্থার শিকার হয়েছে এ দেশের জনগণ। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কথা বলে যে সকল দল বা ব্যক্তি, গোষ্ঠি ক্ষমতাসীন হয়েছে তারা সকলেই সাম্রাজ্যবাদের দালাল শোষক শ্রেণীর রাজনৈতিক শক্তি। ফলে ক্ষমতায় দল বা ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। এ কারণে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণ তথা উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যাপক জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আজ প্রযোজন নয়াউপনিবেশিক আধা-সামন্ততান্ত্রিক এই স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন।
দীর্ঘ ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মফিজ আলী ৭ বার কারাবরণ করেন। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মেহনতি মানুষের পাশে থেকেছেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তির পথে সংগঠন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অতিবাহিত করেন। তিনি মারা গেলেও তাঁর সংগ্রামী জীবন পরবর্তী প্রজন্মেও কাছে অনুসরণীয়। তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন এবং তাঁর উত্তরসুরী অসংখ্য নেতাকর্মী রেখে গেছেন যারা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। একারণেই মফিজ আলী লিখতে পেরেছেন,“ এই উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক আমল থেকে আজকের দিনের নয়া ঔপনিবেশিক আমল পর্যন্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়নি। আজ হোক, কাল হোক ইতিহাসের গতিপথে এটা ঘটবেই। বিপ্লবের জন্য যাদের প্রাণের টান আছে এবং মনের বল আছে ইতিহাস কৃষক-শ্রমিকের এই সংগ্রামে তাদের টেনে আনবেই।”
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই জননেতা ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

লেখকঃ রাজনৈতিক কর্মী।
email: [email protected]
তারিখঃ ৯ অক্টোবর ২০১৪