সিলেটে থেকে ২০ কোটি টাকার চামড়া ভারতে পাচারের অভিযোগ

৬০ কোটি টাকার চামড়া ক্রয়

Animals-Skinনুরুল হক শিপুঃ সিলেট জেলায় ৮০ কোটি টাকার চামড়া কিনার টার্গেট ছিল সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তা আর এবার হলো না। টার্গেট ৮০ কোটি টাকা থাকলেও ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছেন ৬০ কোটি টাকার। ব্যবসায়ীদের ধারণা এ বছর প্রায় ২০ কোটি টাকার চামড়া দেশের বাহিরে পাচার করেছে মৌসুমী চামড়া বিক্রেতারা। আর ওই পরিমান টাকার চামড়া পার্শ্ববতী দেশ ভারতেই পাচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ৬০ হাজার চামড়া ক্রয় করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। ২০১৩ সালে তারা প্রায় ৫৫ হাজার চামড়া ক্রয় করেছিলেন। এ বছর এই সংখ্যা ৫ হাজার বাড়লেও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এবার ৮০ হাজার পশু কোরবানী হয়েছে। এ হিসেবে ২০ হাজার চামড়াই পাচার হয়েছে।
সূত্রমতে, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে সিলেটের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকসান গুণতে হতে পারে। কারণ হিসেবে জানাগেছে, এ বছর কোরবানীর ঈদের প্রায় ১ মাস আগে থেকে সিলেটে অবস্থান করেন অন্য জেলার পশু বিক্রেতারা। তারা ঈদের হাটে পশু বিক্রি করেছেন। তাদের অনেকেই যশোরের বর্ডার দিয়ে ভারত থেকে গরু আমদানি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাদের মাধ্যমেই যশোর বর্ডার দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার চামড়া পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিলেটের ‘শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির’ নেতৃবৃন্দের।
চামড়া কোনো ভাবেই বর্ডার দিয়ে পাচার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, চামড়া ঢাকায় গেছে। ঢাকায় যাওয়া অপরাধ না। তবে নগরী থেকে কোনো বর্ডার দিয়ে যাতে চামড়া পাচার না করা হয় সে জন্য আগে থেকেই মেট্রোপলিটন পুলিশ সচেতন ভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত চামড়া নগরী থেকে বর্ডার ক্রস করেনি। তবে ঢাকায় গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্য খামখেয়ালী ও অযৌক্তিক। এবার সিলেটের জন্য তারা প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন ৬০-৬৫ টাকা। খাসির চামড়া ২০-২৫ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিলেটে ওই দরে চামড়া কিনতে না পারায় লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত তারা গরুর চমড়া ক্রয় করেন ৮০-৯০ টাকা দরে। আর ছাগলের চামড়া কিনেন ৪০-৪৫ টাকা করে। এতে প্রায় ১৫-২০ টাকা বেশি দরে চামড়া কিনতে হয় বলে দাবি তাদের। এ অবস্থায় প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে কতো টাকা বিক্রি করবেন তাও জানানেই বলে মন্তব্য একাধিক ব্যবসায়ীর।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সূত্র জানায়, এ বছর কোরবানীর ঈদের আগে সমিতির পক্ষ থেকে ৮০-৯০ হাজার পিছ চামড়া কিনার টার্গেট করে সমিতিটি। ওই টার্গেট বাস্তবায়ন করতে সমিতির পক্ষ থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত চামড়া কিনা হয় ৬০-৬৫ কোটি টাকার। বাকি টাকার চামড়া পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্য সমির উদ্দিন।
তাদের মতে, শুধু ঈদের দিন সিলেট হতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পিস পশুর কাঁচা চামড়া সিলেটের বাইরে চলে যায়। এসব চামড়া পাচার হয়েছে বলে ধারণা তাদের। তাই তাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩০-৪০ হাজার পিস কম চামড়া সিলেটে সংগ্রহ হবে এ বছর।
এদিকে, ঈদের তিন দিন আগে প্রশাসন সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করে ঢাকায় পাঠানো যাবেনা বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে কোন চামড়া যাতে পাচার না হয় এ ব্যাপারেও কঠোর নজরদারীর আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে ঈদের দিনই ৩০-৪০ হাজার কাঁচা চামড়া সিলেট থেকে বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি প্রশাসনের দায়সারা দায়িত্ব পালনে এ বছর এমন হয়েছে।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ শামিম আহমদ জানান, কথা ছিল চামড়া প্রক্রিয়াজাত শেষে ঢাকায় পাঠানো। কিন্তু কাচা চামড়া ঢাকার বাহিরেও পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি তারাও টার্গেট মতো চামড়া পাননি।
সমিতির সদস্য সমির উদ্দিন বলেন, এবার প্রশাসন যতাযত সহযোগিতা করেনি চামড়া ব্যবসায়ীদের। যার ফলে চামড়া বাহিরে পাচার করা হয়েছে। সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।