একটি রোড এ্যাকসিডেন্ট এবং আমার তীব্র যন্ত্রণার কথা
শুভাশীষ চক্রবর্তী: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, সোমবার। একটি হরতালময় দিন। সকাল ৭.০০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে সকালের প্রতিদিনকার কাজকর্ম শেষ করে ৯.০০ টার দিকে অফিসের উদ্দেশে নবীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে শেরপুর ব্যাংকে যাবার জন্য সিএনজি-তে পেছনের ডানদিকের সিটে উঠে বসলাম। সিএনজি আউশকান্দি কিবরিয়া স্কয়ার পার হওয়ার পর সিএনজি পাম্প স্টেশনের কাছাকাছি হতেই আমাদের সিএনজি ড্রাইভার হামিম সামনের সিএনজি-কে ওভারটেইক করতে গিয়ে ব্যালান্স হারিয়ে রাস্তার উপর উল্টে পড়ে যায়। সাথে সাথে আশেপাশের মানুষজন আমাদের বাঁচানোর জন্য ছুটে আসে। সিএনজি-কে দাঁড় করানোর পর মানুষজন আমাকে টেনে ধরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। তীব্র ব্যাথায় আমি শোর চিৎকার করতে থাকি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার বাম হাত নাই। তখন আমি চিৎকার করে বললাম–আমার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে। আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান।
লোকজন আমাকে নিকটস্থ অরবিট হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর আমার স্ত্রী, ছোট কাকা হরেকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বেনু কাকা এবং আমার বন্ধু প্রণব যে কিনা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে অরবিট হাসপাতাল থেকে আমাকে নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার ভাই সুদীপ চক্রবর্তী, চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় —- উদগ্রীব হয়ে আমাকে ঢাকা নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু ঠিক সেই সময় আমার কোমরের নি¤œভাগ থেকে ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত রক্ত ঝরছিলো। ফলশ্রুতিতে সেই মুহুর্তে ঢাকা আসা সম্ভব হয় নাই।
অরবিট হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের ইমারজেন্সিতে এন্ট্রি নেওয়ার পর ৯ নং অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে পেয়িং বেডে ভর্তি হই। ২২/০৯/১৪ ইং এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে ধরা পড়ে হিউম্যারাস ফ্র্যাকচার– পজিশন ভালো। কিন্তু রাত ৯.০০ টায় ওটি-তে নিয়ে আমার হাত প্লাস্টার করতে
গিয়ে ডাক্তারের সহকারীরা আমার অল্প জোড়া লাগানো হাড় ভেঙ্গে ফেলে, এতে একটি হাড় আরেকটি হাড়ের উপর উঠে যায়। সেই অবস্থায় প্লাস্টারের মাধ্যমে ব্যান্ডেজ করা হয়। তখন-ই আমি ওনাদেরকে বলি যে, আমার হাতের ব্যান্ডেজ ঠিকমতো লাগানো হয় নাই। ব্যান্ডেজ-এর ভেতরে কটকট শব্দ হচ্ছিলো, কিন্তু ওরা আমাকে উল্টো ধমক দিয়ে বললো-আপনি ডাক্তার না আমরা ডাক্তার।
পুনরায় ২৭/০৯/১৪ ইং এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে ধরা পড়ে হিউম্যারাস ফ্র্যাকচার- পজিশন ভালো নয়। ২৮/০৯/১৪ ইং তারিখে ড: ফাত্তাহ স্যার নিজ হতে আবার প্লাস্টারের মাধ্যমে ব্যান্ডেজ করেন। তখন থেকে অবস্থা অতি অল্প অল্প করে ভালো হতে থাকে। কিন্তু ২২/০৯/১৪ ইং তারিখের চিকিৎসার পর আমি সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলি।
২৯/০৯/১৪ ইং তারিখে আমি, আমার স্ত্রী, ভাগ্নে এবং ছোটো মামাকে সাথে নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ থেকে ডিসচার্জ নিয়ে ঢাকা গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে ড: আব্দুল আউয়াল রিজভীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি হই। তারপর তাদের চিকিৎসায় আমি দ্রুত সুস্থ হতে থাকি। আগামী ১১/১০/১৪ ইং তারিখে ড: আব্দুল আউয়াল রিজভী স্যার বিদেশ থেকে ঢাকায় ফেরে দুপুর ১.০০ টায় সিদ্ধান্ত নেবেন অপারেশন লাগবে কি না ?
পরম করুণাময়ের কাছে আমার প্রার্থনা, জনতা ব্যাংকের সকল নির্বাহী-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রতিটি দিন যেন হয় আনন্দময়, অফিস আসা আর বাড়ি ফেরা হয় যেন নিরাপদময়। কোনো অবস্থাতেই আমার মতো দুর্ঘটনার শিকার জনতা পরিবারের কাউকেই যেন না হতে হয়। ঈশ্বরী পাটনী বহু বছর আগে পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছিল “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’’, আর আমি প্রার্থনা জানাচ্ছি “আমাদের সন্তানসম জনতা ব্যাংক যেন থাকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদারে’’।
শুভাশীষ চক্রবর্তী
প্রিন্সিপাল অফিসার ও ম্যানেজার
জনতা ব্যাংক, শেরপুর নতুন বাজার শাখা, সিলেট