`ঐ মিয়া, বন আগে নাকি বিদ্যুৎ?’

fileমালয়েশিয়ার হারানো বিমানের খোঁজে আমাদের সরকার বঙ্গোপসাগরে জাহাজ পাঠানোর ব্লাফ করেছিল, তা নিয়ে বাবু বলেন – আহ কি গর্ব! ঐ ছুটে যায় আমার দেশের জাহাজ! মালয়েশিয়ার জন্য। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তাই নিয়ে আগাই এতে মালয়েশিয়া আমাদের আরো শ্রমিক নেবে!
মালয়েশিয়া আর শ্রমিক নেয় নি। সেই বিমানও উদ্ধার হয়নি। আমাদের চোখের সামনে ডুবে গেছে পিনাক -৬। পদ্মা থেকে সেই লঞ্চ উদ্ধার হয়নি, মালয়েশিয়ার বিমান খুঁজতে যে তোড়জোড়, পিনাক খুঁজতে তাদের লোকই নেই! দোষিদের তো খবরই নেই।
মালদ্বিপে শত টন খাবার পানি নিয়ে সরকার জাহাজ পাঠায়, বাবু বলেন – ঐ ছুটে যায় আমার দেশের জাহাজ, মানবতা বুঝলা, মানবতা! আমাদের সামর্থ্যের মাঝে যা আছে তা নিয়ে আগাই।
রানা প্লাজার ধ্বংসের পর এদিক ওদিক হাত পাতার কথা মনে পড়ে গেল। দুইটা অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবেৃ.. প্লিজ , দশবোতল পানি লাগবে প্লিজৃ.. সরকারী সাহায্য ছাড়াই চলছিল উদ্ধারকাজ। সরকারী বাহিনীও হাত পেতেছিল তখন, আর জনগন দিয়ে যাচ্ছিল অকৃপনভাবেই। এবং দোষীদের এবারও খবর নেই। গেল পরশু একজন আসামী জামিন পেয়েছে। এবং রানা আছে রানার মতই।
রামপালে বিদ্যুত প্রকল্প শুরু হবার পরও অনেক বাবুর উদয় হলো – ঐ মিয়া, বন আগে নাকি বিদ্যুত? ঠিকই তো বিদ্যুত লাগবে আপনাদের। বাবুদের বোঝানো যায় নি, বিদ্যুত দরকারী হলেও সুন্দরবন ধ্বংস করে না।
সুন্দরবনে শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডোবার পর আহাজারির চেয়ে বেশি দরকারি – বি আইডব্লুটিএ এবং নৌ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা – যারা এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকায় ট্যাংকার/লঞ্চ চলার পারমিশন দিয়েছে। দরকার বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় ও এর মন্ত্রীর জবাবদিহিতারর, দরকার ট্যাংকার মালিককে জেলে পোরা। দরকার দুইদিনেও কেন ট্যাংকার উদ্ধারে সরকারী উদ্ধার কার্য শুরু হলো না – তার উত্তর আদায়। দরকার – তেল ছড়িয়ে যখন পড়ছে, তখন বসে বসে মিটিং করে তা তাকিয়ে দেখা বন্ধ করার। গ্রামবাসীর খালি হাতে তেল সরানো দেখে নিশ্চিন্ত হবার চেয়ে দরকার তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দূর করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
নইলে কাঁদতে কাঁদতে ফেসবুকে সময় পার হতেই থাকবে আর বরাবরের মতই দেখা যাবে, উদয় হয়েছে কোন বাবুর – আহারে বাঘটা আহারে গিরগিটিটা বেচে থাকলে রামপালের বিদ্যুত দেখে গর্বিত হিসাবে শান্তি পেত রে!! আর দোষী ব্যক্তি দূরে বসে ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা খেলছে কোথাও।
পুনশ্চঃ
কয়েকদিন আগে প্রেসক্লাবের সামনে জ্যামে বসে আছি। পাশের রিকশাওয়ালা দেখি হা করে বিলবোর্ড গিলছে। তার দৃষ্টি অনুসরন করে সামনে তাকিয়ে দেখি, হিন্দি রোর-টাইগারস অফ সুন্দরবন ছবির বিলবোর্ড। সকল নায়িকা কাপড় খুলে ছুটছে। সেইদিকেই রিকশাওয়ালার দৃষ্টি।
কি দেখিস জিজ্ঞেস করলাম।
ভাই এইটা কিসের ছবি – রিকশাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞেস করে উল্টো!!
আমি বললাম, সুন্দরবনের ছবি। এরা মনে হয় মৌয়ালি।
রিকশাওয়ালা আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো, এমন আধা ল্যাংটা মাইয়া মৌয়ালি, লগে মিশিনগানওয়ালা ব্যাডা মৌয়ালি কখনো তো দেখিনাই!
তো, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির বিধান না করতে পারলে এদের লোভে সুন্দরবন হবে বিলুপ্ত, আমাদের হিন্দি সিনেমার মাধ্যমেই সুন্দরবন চিনতে হবে এবং রাস্তায় হা করে হিন্দি সিনেমার সুন্দরবনের আইটেম মৌয়ালি দেখতে হবে। – তথ্যসূত্র আমাদেরসময়