কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত

শিক্ষার সার্বিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অভিভাবক ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নিয়ে মতবিনিময় সভা

PIC1কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজে বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ায় উদ্বিঘœ হয়ে উঠেছেন কলেজের শিক্ষকমন্ডলী, ছাত্র/ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে কলেজ গভর্নিং বডির উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কলেজ মিলনায়তনে অভিভাবক, শিক্ষকবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নিং বডির সদস্য ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক সাংসদ আব্দুল কাহির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কলেজের প্রভাষক ফয়সল উদ্দিনের পরিচালনায় সভার শুরুতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, বৃহত্তর সিলেটের বেসরকারী কলেজগুলোর মধ্যে লেখাপড়া ও ফলাফলের দিক থেকে কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠের গৌরব অর্জন করলেও তা আজ ম্লান হওয়ার উপক্রম। সম্প্রতি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে গুটিকয়েক সন্ত্রাসী ও বহিরাগতরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা সাধারণ শিক্ষাথীদের জিম্মি করে ফেলছে। শিক্ষকরা নিরাপদে ক্লাস পর্যন্ত নিতে পারছেন না। তাদেরকে সন্ত্রাসী ও বহিরাগতরা অপমানিত ও লাঞ্চিত করেছে। এ অবস্থা বিরাজ করলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চরম ভাবে ব্যাহত হবে। এমতাবস্থায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে কলেজে যে তান্ডব চলছে এতে করে তারা তাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েছেন। অভিভাবকরা ক্যাম্পাসে সবধরণের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবী এবং যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করছে তারা যে কোন দলের হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কলেজের সার্বিক শিক্ষাকার্যক্রম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে কর্তৃপক্ষ যে ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তার সাথে একাত্মতা পোষণ করে সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কলেজ গভর্নিং বডির নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৯০ সালে একটি পরিত্যক্ত ঘরে কানাইঘাট কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল।এলাকাবাসী ও শিক্ষকমন্ডলী কঠোর পরিশ্রমের কারণে আজ এ কলেজ ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ১৫ শতাধিক শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছেন। ফলাফলের দিক থেকে সিলেটের মধ্যে বেসরকারী কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। এ বছর এইচ.এস.সি পরীক্ষায় তিনটি এ প্লাসসহ ৯৭% শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ অর্জন আমাদের সবাইকে ধরে রাখতে হবে। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ ছিল। তা বর্তমানেও বলবৎ রয়েছে। তারপরও ছাত্র রাজনীতির নামে কলেজ ক্যাম্পাসে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে তাদের বিরুদ্ধে সকলের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। এ সময় টেবিল চাপড়িয়ে ও হাত তুলে কলেজের শত শত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানান।। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, গভর্নিং বডির সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম মামুন, আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও গভর্নিং বডির সদস্য রফিক আহমদ, আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক পৌর কাউন্সিলার ফখর উদ্দিন শামীম, বিএনপি নেতা এমএ লতিফ, জাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলা উদ্দিন মামুন, জামায়াতের আমীর মাওঃ আব্দুল করিম, গভর্নিং বডির সদস্য সাংবাদিক এম,এ হান্নান, আব্দুন নূর, অভিভাবকদের মধ্যে আব্দুল হেকিম (বিএ), মখলিছুর রহমান, কলেজের সহকারী অধ্যাপক লোকমান হোসেন, হাবিব আহমদ, ফরিদ আহমদ, সুব্রত কুমার বর্ধন প্রমুখ।