‘‘পল্লী আধাঁরে একটি রবি” : মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মৃণাল চৌধুরী

বর্ষা মৌসুমের পড়ন্ত বিকেলে আজ সিলেট সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে গুণী , জ্ঞানী সাহিত্য রস সঞ্জীবিত বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচেছ ” পল্লী আঁধারে একটি রবি ” নামীয় পুস্তিকা খানির প্রকাশনা অনুষ্ঠান। সম্পাদনায় আখলাক হোসেন এবং সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলাধীন লামাকজীর পরগণা বাজারস্ত আকিল পুর ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমীর পরিচালক স্নেহ ভাজন সুমন বিপ্লব। সুমন বিপÍবের সাহিত্য , সংস্কৃতি চর্চাতে অবগাহন ও একনিষ্টতা সম্পর্কে অতীতে অনেক লিখেছি , বলেছি। পুস্তিকাখানা লিখা হয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার পল্লী অঞ্চলের জয়নগর ( নোয়াপাড়া) গ্রামের ১৯৬২ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ কারী একজন শিক্ষক , কবি , সাহিত্যিককে নিয়ে-যার নাম হচেছ মিজানুর রহমান মিজান। যতদুর জানা যায় , এ গুণী ব্যক্তির সাথে আমার পরিচিতি পর্ব হয়ে উঠেনি , সুমন বিপ্লবের সনির্বন্ধ অনুরোধে ও এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে শারীরিক ও আনুসঙ্গিক প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্ত্বে ও অনভিজ্ঞতার মাঝে দু’টো কথা লিখতে নৈতিক ভাবে সম্মত হলাম। আমার ন্যায় একজন বোকার দৃষ্টিপাত এবং লেখনী শক্তির যাচেছ তাই অবস্তাতে হালে পানি পেলেই একটু স্বস্থি খুজে পাব। এ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী গুণী , জ্ঞানী মহলের কাছে এ আশা রেখেই পুস্তিকাখানির ওপর সীমিত ফোকাস করা হচেছ।
আমাদের বৃহত্তম সিলেট অঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যন্ত পল্লী গ্রামে সুস্থ্য সাহিত্য সংস্কৃতি সেবী , গুলে জ্ঞানে মহীয়ান প্রকৃত অর্থে দানবীর সমাজ সেবী নিভৃতচারী গণের গৌরব জনক অবদান যুগ যুগ ব্যাপী মর্যাদা প্রাপ্তির দাবীদার। তৃণমুল পর্যায়ে পুরোদমে পক্ষপাতহীন ভাবে তাদের গৌরব গাঁথা মহান ভুমিকা অন্বেষণে গবেষণা মুলক কর্মকান্ডে এদেশের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে আহবান জানাই। যাক এ বেলা ঐদিকে আর বলতে চাচিছনা।
কবি , সাহিত্যিক মিজানুর রহমান মিজান ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত স্থানীয় কান্দিগ্রাম প্রাইমারী স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ভর্তি হন উত্তর বিশ্বনাথ হাই স্কুলে এবং এস এস সি পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। মদন মোহন কলেজ থেকে ’৭৯ খ্রীষ্টাব্দে এইচ এস সি ও ’৮১ খ্রীষ্টাব্দে বি কম ডিগ্রী অর্জন করেন। একই সাথে তিনি তেলিকুনা মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা করেন। ’৮০ সালে পঠিত উত্তর বিশ্বনাথ হাই স্কুলে তিনি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ’৮৩ সালে এল এল বিতে ভর্তি হয়ে প্রিলিমিনারী পরিক্ষার দু’দিন পূর্বে সৌদি আরব চলে যান। ’৮০-৮৩ সালে মিজানুর রহমান মিজান তৎকালীন সাপ্তাহিক সিলেট কণ্ঠ এবং জালালাবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতায় নিয়োজিত থাকেন।
তাঁর পিতা ছিলেন বাংলার আদি সংস্কৃতির রুপকার বাউল শিল্পী চাঁন মিয়া। একটি ফুলের অন্বেষা গ্রন্থে চাঁন মিয়ার বাউল জীবন সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। এ গুণী ব্যক্তির সন্তান মিজানুর রহমান মিজান এর সুস্থ্য , চিন্তা চেতনার ফসল হচেছ ” নবীজির দেশে ষোল বসন্ত ” ( ভ্রমণ সংক্রান্ত) , কবিতার বই সভ্যতার কান্না , উপন্যাস ” এমন তো কথা ছিল না ” কবিতার বই ” ভবের ফাঁদে ”। তাঁর প্রবন্ধ বই ” সময়ের কলাম ” প্রকাশের জন্য কাজকর্ম চলছে।
কবি মিজানুর রহমান মিজান এর ” নবীজির দেশে ষোল বসন্ত ” তাঁর সৌদি আরব অবস্তান কালীন সুদীর্ঘ ১৬ বছরের বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এ পুস্তকখানা এবং সভ্যতা ও সুস্থ্য মননশীলতার ছদ্মাবরণে সীমাহীন , লজ্জাহীন , লাগামহীন দুষ্ট চক্রের অপতৎপরতায় সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে লিখিত গ্রন্থ ” সভ্যতার কান্না ” অনেক পক্ষপাতহীন জ্ঞানী কবি সাহিত্যি দের রাড়ারে ধরা পড়েছে। হাওড়া ভারত এর দৃপ্তকণ্ঠ সম্পাদক শিপ্রা গাইন , উত্তর চবিবশ পরগণা ভারত এর কনি সম্পাদক মনিন্দ্র দে ভারত এর রাজ কুমার দাস , ঢাকা আরাম বাগ এর ফেরারী কৌশিক , দৈনিক আজকের দেশ এর সাব এডিটর আশরাফ আলী , ঢাকা শ্যামলী থেকে বশিরুজ্জামান বশির , সম্পাদক আনোয়ারা আব্দুর রশিদ লুলু , ঢাকা থেকে ধুমকেতু সম্পাদক , সাপ্তাহিক ” এখন ” ঢাকা থেকে প্রকাশিত এইচ এম হেলালের লেখা , মাসিক সিলেট বাজার , বিশ্বনাথ থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সৃজন , অনাবিল সায়ীদ , বিশ্বনাথ ডাইজেষ্ট সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জুবায়ের , উত্তর বিশ্বনাথ হাই স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিন ” অন্বেষা” আমতৈল মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার রায়হানুদ্দীন , সম্পাদক মাসিক বিশ্বনাথ দর্পণ মো: রহমত আলী , ফজলুর রহমান , আল-আমীন যুব সংঘ রাজা গঞ্জ বাজার , মাগুরার মিলকী , কুমিল্লার হালিমা আক্তার , বরিশালের ইশরাত , লালমনিরহাট কায়সারুল ইসলাম , চানপুর সিলেটের নেছার আহমদ , জেদ্দা থেকে আছাদুর রহমান , আজাদুর রহমান , কবির আহমদ , নজমুল হক , বাগের হাট থেকে শেখ ইকবাল হোসেন সবুজ , খুলনার রনি আহমদ প্রমুখ কবি , সাহিত্যিকদের লেখনীতে বিভিন্ন আঙ্গিকে মিজানুর রহমান মিজানকে প্রসংশিত করা হয়েছে। কবি আখলাক হোসেন এর সুখ পাখি নিবন্ধটিতে তাঁর সহপাঠি , ঘনিষ্ট বন্ধু , ” পল্লী আঁধারে একটি রবি ” পুস্তিকাটির মুল নায়ক তথা মধ্যমণি কবি , শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজানের দাম্পত্য জীবনের মর্মস্পর্শী ট্রাজেডি পর্বের করুণ দিকটা পরিস্ফুট হয়েছে। আখলাক হোসেন এর শব্দ চয়ন , বাক্য বিন্যাস , বিষয়টির স্বচছ প্রকাশ আমাকে করেছে আবেগাপ্লুত। তিনি লিখেছেন , তাঁর (মিজানুর রহমান মিজান) ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য জীবনের যে টুকু হতাশা আর বঞ্চনার করুণ কাহিনী আমি শুনেছি তাতে মনে হয় স্বামী এবং পিতা হিসেবে যেটুকু স্বপ্ন সাধ ওর মনে আজন্ম লালিত ছিল তার পুরোটাই মানুষটির সাথে প্রতারণা আর বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। কিন্তু কেন ? এমন তো হবার কথা নয়! ” স্ত্রী , সন্তান থেকে সুখ ,শান্তি প্রাপ্তির পরিবর্তে কয়লার আগুনের মত নিত্য অন্তরাত্মার দহন এর অনেক দৃষ্টান্ত প্রতি নিয়ত স্বচক্ষে দৃশ্যমান। নারী , শিশু নির্যাতন নিয়ে আমরা অনেক বলি , লিখি। কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের করুণ ঘটনাবলীর প্রতি দৃষ্টিপাত সময়ের দাবী নয় কি ? ভেবে দেখুন বিদগ্ধ মহল। আমার মন্তব্য এক্ষেত্রে নি®প্রয়োজন বলে মনে করি। শিক্ষক আখলাক হোসেনকে অফুরন্ত ধন্যবাদ। শিক্ষক জয়নুল আবেদীন , ছালেক আহমদ শায়েস্তা , শামছুল ইসলাম , মাওলানা মো: আব্দুল জলিল , মিনতী আচার্য , কয়েছ আলী , রাহেনা ইকবাল , রাহেনা হাফিজ , জামাল আহমদ , কবি , প্রবন্ধকার গোলাম রববানী চৌধুরী , ময়মনসিংহের নজরুল নাজির , নারায়ন গঞ্জের জালাল উদ্দিন নলুয়া , ফুলচন্ডির সমর কুমার দাস , সাউথ ইষ্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফুর রহমান ছাদ মিয়া , কবি , সাহিত্যিক মুহিবুর রহমান কিরন , প্রিন্সিপাল মাও: আবু তাহের মোহাম্মদ হোসাইন , প্রফেসার আলী আহমদ , গীতিকার সরোয়ার হোসেন চেরাগ , প্রফেসার নাজমুল ইসলাম আনসারী , বিজন চন্দ্র দাস , রুজি , লাইলী , লাকী , শিউলী , হেপী আচার্য , মুসাফির সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন , শিল্পী সিদ্দিকুর রহমান , শিক্ষার্থী শরিফ উদ্দিন , জসিম উদ্দিন , গীতিকার আলী আজমান , শিল্পী নুর মামুন এবং সংশ্লিষ্ট গুণী , জ্ঞানীদের অটোগ্রাফ , কবিতা , মনের কথা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গিতে স্থান পেয়েছে পুস্তিকাটিতে। সবার ভুমিকাই প্রশংর্সাহ। ফবঃবৎসরহধঃরড়হ রং শবু ঃড় ংঁপপবংং ডিটারমিনেশন ইজ কি টু সাকসেস- শুভেচছা জানাই অধ্যাপক আলী আহমদকে। ইংরেজী কবিতা ও গদ্যে বানান ও বাক্য বিন্যাসে আরো যতœবান থাকা বাঞ্চনীয়। পল্লী আঁধারে প্রচার বিমুখ প্রতিভাদীপ্ত তরুণ কিশোর-কিশোরী , যুবক-যুবতী ,,প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া তথা আবালবৃদ্ধবণিতাকে বিকশিত করা হোক সুস্থ্য চিন্তা ধারার আলোকে। তাই হচেছ আজকের দুরন্ত আশা প্রত্যাশা। মহান পিতামাতার গৌরবোজ্জল বংশানুক্রমিক ধারার বালু কণাসম মানবিক ও নৈতিক আদর্শের হারকা অনুসরণ , মাঝে মধ্যে পরিতৃপ্তিদায়ক। এতে খুজে পাই সমাজ সভ্যতার ধবংস যজ্ঞের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে একটু খানি প্রশান্তি। বিশেষ স্থান দখল ও ফটোসেশনে ধাক্কাধাক্কি নহে। কিংবা পত্রিকার পাতায় কেউকেটা হিসেবে প্রকাশ নহে। চাই সর্বক্ষেত্রে সুস্থ্য চিন্তা চেতনার বিকাশ ও যথাযথ মুল্যায়ন , আরো চাই প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতির করাল গ্রাস মুক্ত সমাজ ব্যবস্তাÑ বাকচাতুরী নয় প্রয়োজন দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং তা বাস্তবায়নের এখনই সময়। আসুন এখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনালেখ্য শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করিÑ
” মহাবিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত ,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল
আকাশে বাতাসে ধবনিবে না
অত্যাচারীর খড়গকৃপাণ ভীম রণ ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।”
সঁংঃ ভরমযঃ ঃড় ঃযব ভরহরংয-এ মহান আদর্শকে আন্তরিক ভাবে লালন করে প্রতিটি সেক্টরে অন্যায় ও লাগামহীন দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু বাজি রেখে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন। এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেন না। নিজ হীনস্বার্থ হাসিলের দুষ্ট অভিপ্রায়ে বিভিন্ন কুটকৌশলে ও ছদ্মাবরণে অন্যের ক্ষুদ্র ক্রুটি-বিচ্যুতিকে জন সমক্ষে বা সরকারী পর্যায়ে অতিরিক্ত লাগিয়ে বাজিয়ে প্রকাশে পটু , দেহের প্রতিটি শিরায়-উপশিরায় প্রবাহিত বিষাক্ত রক্তের অধিকারী দুর্নীতিবাজদের বিষ দাঁত উপড়িয়ে ফেলানোর এখনই সময়। আপনার আমার সবার ঐকান্তিক শুভ প্রয়াস ফলপ্রসু হোক। সুস্থ পরিবেশ পেলে আবারো দেথা হবে। সবাই ভাল থাকুন। সবার প্রতি অনাবিল শুভেচছা।
লেখক মৃণাল চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক , জেনারেল সেক্রেটারী , বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন , সিলেট।
তারিখ ০৩/০৮/ ০৭ খ্রী:
সিলেট সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তন।