নিয়ম রক্ষার খাতিরেই ইলিয়াস পরিবারের ঈদ : আর বায়না নেই সন্তানদের

Elias Ali famalyসুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার পরিবার শুধু নিয়ম রক্ষার খাতিরেই ইলিয়াসের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে ঈদ উদযাপন করতে যায়। এমনটি জানিয়েছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনা। এ পরিবারের সদস্যরা জানান, ঈদকে ঘিরে তাদের মনে এখন আর কোনো আনন্দ-অনুভূতি নেই।
ইলিয়াস আলীকে ঘিরেই তাদের ঈদের সব আনন্দ, যা এখন কেবলই স্মৃতি। ইলিয়াস আলীর পথ চেয়ে তার স্ত্রী-সন্তানেরা এ নিয়ে পাঁচটি ঈদ কাটিয়েছেন। কিন্তু অসহনীয় এ প্রতীক্ষার অবসান কবে হবে, তা জানে না ইলিয়াসের পরিবার। দুই বছর আগেও এ পরিবারের সদস্যদের কাছে ঈদ ছিল রঙিন। আজ যা বর্ণহীন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় ২৭ মাস হতে চলল। আপনজন ছাড়া ঈদ যে কতটা নিরানন্দের তা ইলিয়াস পরিবারকে দেখলেই বোঝা যায়।
জানা যায়, এবারও ঈদ করতে বিশ্বনাথে যাবেন তারা। বর্তমানে ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরার একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ে স্নাতক পড়ছেন। ছোট ছেলে লাবিব নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান শাখায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর আদরের একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাওয়াল পড়ছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে। জানতে চাইলে লাবিব বলেন, ‘বাবাকে ছাড়া ঈদের আনন্দ এখন আর অনুভব করতে পারি না। আমাদের কাছে ঈদ আনন্দের অর্থই ছিল বাবার সঙ্গে গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া। নামাজ শেষে কোলাকুলি করা। ঈদে আমাদের বাড়িতে সালামির রেওয়াজ না থাকলেও প্রতি ঈদেই বাবা আমাদের খুশি হয়ে ঈদের বখশিশ দিতেন। জানি না, এগুলো আর কখনো হবে কি না!’
লাবিব আরও বলেন, ‘২০-২২ রোজার দিকে বাবা আমাদের নিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল বা গুলশানের শপিং মলগুলোয় ঈদের কেনাকাটা করতে যেতেন। কখনো আমাদের পছন্দে আবার কখনো নিজের পছন্দে পোশাক কিনে দিতেন।’ এদিকে প্রিয় বাবার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই নিশ্চুপ ও শান্ত হয়ে পড়েছে ইলিয়াসকন্যা সাইয়ারা। গত রোজার ঈদেও সাইয়ারার বিশ্বাস ছিল তার বাবা ফিরে আসবেন। হয়তো সে বিশ্বাস এ ঈদেও ছোট মেয়েটির মধ্যে কাজ করছে।
ইলিয়াস আলীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভাইদের সঙ্গে বাবাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে নানান স্মৃতিচারণা করলেও নিজের ভিতর চাপা দুঃখ সে কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। এমনকি মায়ের সামনেও খুব সাবধানে বাবার প্রসঙ্গ তোলে ছোট সাইয়ারা। ঘরের বাইরে স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও খুব একটা যেতে পছন্দ করে না সে। মাঝেমধ্যে ছবি আঁকতে পছন্দ করে। আর ডায়েরিতে বাবাকে নিয়ে সাইয়ারা লেখালেখি করে। এমনটাই জানিয়েছেন সাইয়ারার ভাই।
কথা হলে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘আমরা এখনো নেতিবাচক কিছু পাইনি। তাই তার (ইলিয়াস আলী) ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিইনি। সত্যি বলতে কী, আমাদের এখন আর ঈদ বলে কিছু নেই। শুধু শাশুড়িকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই নিয়ম করে ঈদে বিশ্বনাথে যাওয়া হয়। সেখানে খুব সীমিতভাবে কিছু দুস্থ পরিবারের মাঝে জাকাতের কাপড় বণ্টন করি।’ লুনা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকবে না। তাই আমারাও কোনোরকমে জীবন পার করছি।’
লুনা আরও জানান, বাবার অনুপস্থিতিতে আবরার, লাবিব ও সাইয়ারা এখন ঈদের জন্য আর পোশাক কিনে দেওয়ার বায়না করে না। তার পরও তিনি টুকটাক কিছু কিনে দিয়েছেন সন্তানদের।
এদিকে সন্তানের নিখোঁজ হওয়ার খবরের পর ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবিও বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার সময় যতই বাড়ছে ততই তার বনানীর বাসায় নেতা-কর্মী ও পরিচিতদের খোঁজখবর নেওয়ার আগ্রহ কমছে। এখন খুব কাছের চার-পাঁচ জন ছাড়া এ পরিবারের সদস্যরা কেমন আছেন তা জানতে কেউ আসেন না। -বাংলাদেশ প্রতিদিন।