বালাম ছেঁড়া নিয়ে তোলপাড় : ৯ দিন ব্যাপি রেজিস্টারী অফিসে তালা
সুরমা টাইমসঃ বালাম বইয়ের পৃষ্টা ছেঁড়া ও সূচি পরিবর্তন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে সিলেট রেজিষ্ট্রারী অফিসে। এ ঘটনায় গত ৯ দিন ধরে অফিস বন্ধ ছিলো। নকল নবিশরা রেজিষ্ট্রারী অফিসের রেকর্ড রুমে না যাওয়ার আশ্বাসে আজ বৃহস্পতিবার অফিস খুললেও কোন ধরণের কার্যক্রম হয়নি। এতে করে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। গত ৯ জুলাই কয়েকজন নকল নবিশ জোরপূর্বক রেকর্ড রুমে ঢুকে অবস্থান করছিলো। এ সময় সেখানে যান সিলেট সদরের সাব রেজিস্ট্রার আবু তালেব মিয়া। তিনি গিয়ে রেকর্ড রুমে তালা ঝুলিয়ে চাবি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন।
জানা যায়, অফিসের কর্মচারীরা সম্প্রতি পরপর দুটি আবেদনে বালাম ছেঁড়ার চক্রদের তালিকা প্রকাশ করে ইতিমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।
সাব রেজিষ্ট্রারী অফিসের রেকর্ড রুমের পিয়নরা বালাম বই ছেড়া ও সুচি পরিবর্তনের জন্য দায়ী করেছেন নকল নবিশ মোতাছির মোল্লা, তপন কান্তি দে, আবু ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটদের। ওরা সিলেটের চিহিৃত ভুমিখোকোদের হয়ে কাজ করে এখন কোটিপতি বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে, এ পরিস্থিতিতে প্রতিবাদী পিয়নদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দেন নকল নবিশরা। সিলেট রেজিস্ট্রারী অফিসে রয়েছে জেলার রেকর্ডরুম। এই রেকর্ড রুমে কেবলমাত্র সরকারী দায়িত্বরতরা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করা নিষেধ। কিন্তু সিলেটের রেকর্ড রুমটি ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বাইরে রাজনৈতিক ক্ষমতাধর এবং ভুমিখেকো চক্রের শক্তির বল খাটিয়ে রেকর্ড রুমটি দখলে নেয় কতিপয় নকল নবিশরা। তারা অবাধে যাতায়াত করে রেকর্ড রুমে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেকর্ডরুমটি অরক্ষিত থাকায় তিন রেকর্ডের শতাধিক বইয়ের বালাম নেই। সূচি পরবর্তন করে দেওয়া হয়ে অনেকগুলোর। আর নকল নবিশরা দলবেধে ঢুকে এসব অপকর্ম করলেও রেকর্ড রুমের স্টোর কিপার ভুলেও তাতে প্রতিবাদ করেন না। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সিলেটের জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে অফিসের কর্মচারীরা আবেদন জানিয়ে পত্র দেন।
অফিস কর্মচারী আব্দুল হামিদ, মিজানুর রহমান মিজু, মাহমুদ আলী, জুয়েল মাহমুদ, সুকেশ চন্দ্র দত্ত, বাবুল আহমদ, আবদুল লতিফ সুমন, নবজিত গোপ ৭ জুলাই আবেদন জানালেও জেলা রেজিস্ট্রার কোনো উদ্যোগ নেননি।
রেকর্ডরুমের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, গত ৯ জুলাই নকল নবিশ শাহ আলম, রুবেল, শামসুদ্দিন ও শাওন জোরপূর্বক ঢুকে অবস্থান করছিলো। এ সময় সেখানে যান সিলেট সদরের সাব রেজিস্ট্রার আবু তালেব মিয়া। তিনি গিয়ে রেকর্ড রুমে তালা ঝুলিয়ে চাবি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন।
এদিকে, বাইরে তালা দিলেও ভেতরে আটকা থাকা চার নকল নবিশ অন্য পথে বাইরে এসে গোলমাল শুরু করেন। এ নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের ভবনের সামনে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনার পর রেকর্ড রুমের কর্মচারীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাব রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন দেন।
কর্মচারীরা জানিয়েছেন, সিলেটে নকল নবিশ রয়েছেন প্রায় পৌনে ৩ শতাধিক। কিন্তু গুটি কয়েক নকল নবিশ ভুমি খেকোদের সঙ্গে আতাঁত করায় সকলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে, সাব রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া আবেদনে বালামের পাতা ছেড়া, দাগ-খতিয়ান পরিবর্তনের জন্য নকল নবিশ আবু ইব্রাহিম, তপন কুমার দে, মো. শাহাব উদ্দিন, মতছির আলী, উজ্জল, সিদ্দিকুর রহমান রুবেল, বাবর মিয়া, শাহ আলম, সামছুদ্দিন, রাজু তালকদার, মোতাহার হোসেন ও শাওনকে দায়ী করেন। আবেদনে তারা বলেন, এরা নকল নবিশ হলেও রেকর্ড রুমে অবাধে যাতায়াত করে। বাধা দিলে তারা প্রাণে মারার হুমকি দেন। কাউকে কাউকে গুম করে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ক্রমাগত হুমকি ও ধমকিতে তটস্থ অফিস কর্মচারীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দিচ্ছে না। এই অবস্থায় জেলা রেজিস্ট্রার মকবুল হোসেন ভুইয়া অফিস কর্মচারীদের নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেন।
ওদিকে, নকল নবিশরা অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া আবেদনে নকল নবিশরা উল্লেখ করেন, বালামের পৃষ্টা ছেড়া সহ নানা অনৈতিক কাছে অফিস সংশ্লিষ্টরাই জড়িত। অফিসের পিয়ন ও উমেদারদের সম্বন্বয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে। তারা মোহরার মৃদুল কান্তি দে, আব্দুল হামিদ সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগে তারা জানান, অফিস কর্মচারীদের অভিযোগ দেখে তারা হতবাক হয়েছে।
নকল নবিশদের পক্ষে আবু ইব্রাহিম, মো, মতছির আলী, মো, সাইদ মিয়া, বনফুল দে, ভবতোষ দত্ত সহ শতাধিক নকল নবিশ আবেদন দেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল সিলেটের সাব রেজিস্ট্রার আবু তালেব মিয়া উভয় পক্ষকে নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, এখন থেকে অফিস সংশ্লিষ্ট ছাড়া আর কেউ রেকর্ড রুমে রুমে ঢুকতে পারবে না। আর বালাম ছেড়া, সূচি পরিবর্তন অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে যাতে আর না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেট সদ সাব রেজিস্ট্রারী অফিসের দলিল লেখকরা জানিয়েছেন, গত ২৯ শে জুন নকল নবিশ মোরাদ রেকর্ড কিপার প্রনয় ঘোষকে মারধোর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করে দলিল লেখকরা দুই দিন কর্ম বিরতি পালন করেন।
সিলেট সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মাহমুদ আলী, সাধারন সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান সায়েক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইউসূফ আহমদ জানিয়েছেন, অবৈধভাবে নকল নবিশ নিয়োগ, রেকর্ড রুমকে সংরক্ষিত রাখা নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক আবেদন জানানো হলেও জেলা রেজিস্ট্রার সেটি আমলে নেননি।