জিল্লু হত্যা : ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম : অভিযোগ মিজান-জিল্লুর দিকে
`হত্যা মিশনে মিজান-জিল্লুর গ্রুপের ১২ ক্যাডার’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সিলেট মহানগর ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিল্লু হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। শুক্রবার রাতে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় তাৎক্ষনিক বের হওয়া বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার শোক র্যালি, রোববার সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও রোববার নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল।
মিছিলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর ও জেলা ছাদ্রদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রদল নেতা জিল্লুরের খুনীদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে খুনীদের মদদদাতাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিহত করার আহবান জানানো হয়।
হত্যা মিশনে মিজান-জিল্লুর গ্রুপের ১২ ক্যাডার: দলীয় কর্মীদের হাতে ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক ওরফে কালা জিল্লু (৩২) খুনের নেপথ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এরই জের ধরে তাকে রাম দা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজ দলের ক্যাডাররা। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৮ টার দিকে পাঠানটুলাস্থ ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল কাদির রাহি ও জামাল আহমদ ওরফে কালা জামালের বাসায় আগুন দিয়েছে নিহতের সহকর্মী ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এসময় তারা নগরীর পাঠানটুলা ও সুবিদবাজার এলাকায় ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর করে। জিল্লুর গ্রুপের নেতা জামাল আহমদ ওরফে কালা জামালের সুবিদবাজার এলাকার নুরানী ৪৩/৫ বাসায় ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে বাসার বারিন্দায় রাখা দু’টি মোটর সাইকেল ও একটি বাই সাইকেল আগুনে পুড়ে যায়। পরে বনকলা পাড়াস্থ ছাত্রদল নেতা এমাদের বাসায় কয়েক রাউন্ড গুলি করে ভাঙচুর করে ছাত্রদল কর্মীরা।
নিহত জিল্লুর সহকর্মীরা দাবি করেছেন, ছাত্রদলের বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান- মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি জিয়াউল আরেফিন গণি জিল্লুর গ্রুপের ক্যাডাররা তাকে কুপিয়ে খুন করেছে। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একটি টহল দল ৪টি রাম দা উদ্ধার করে। এসময় সায়েম আহমদ (৩০) ও ফরিদ আহমদকে (২০) আটক করে পুলিশ। খুনের ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মহানগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আটককৃত সায়েম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সেওরা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ও নগরীর সুবিদবাজার ৪২/৪ নুরানী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এবং ফরিদ আহমদ (২০) নুরানী ৪২/১৫ বাসার ইয়াকুব আলী ছেলে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত জিল্লুর সঙ্গে থাকা ছাত্রদলকর্মী ভুলন কান্তি তালুকদারের দাবী জিল্লুল হক ওরফে কালা জিল্লু (৩২) হত্যাকান্ডে অংশ নেয় ছাত্রদল মিজান-জিল্লুর গ্রুপের ১২জন কর্মী-ক্যাডার। তিনি বলেন, তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল থামিয়ে ছাত্রদল কর্মী জামাল ওরফে কালা জামাল, মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি কাজি মেরাজ, ছাত্রদল নেতা ইমাদ আহমদ, গাজি লিটন, দেওয়ান আরাফাত চৌধুরী জাকির, ইমাদ উদ্দিন, সালেহ আহমদ, নেছার আলম, ওদুদ মিয়া, কাওসার, মফিজ আহমদ, পিচ্ছি পলাশ, সুমন ওরফে কাউয়া সুমন, সায়েম আহমদ ও ফরিদ আহমদসহ ছাত্রদল ১০/১২ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা রামদা ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে কোপাতে থাকে জিল্লুকে। এসময় দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করেন।
হত্যাকান্ডে জড়িত সবাই বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি জিয়াউল আরেফিন গণি জিল্লুর গ্রুপের ক্যাডার বলেও দাবি করেন ছাত্রদলকর্মী ভুলন কান্তি তালুকদার। জিলুর লাশ দেখে প্রত্যজক্ষদর্শীরা জানান আঘাতের স্থানগুলোর মাংস আলগ হয়ে গেছে। শরীরের ৯টি স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে করা হচ্ছে-হত্যার জন্যই তার উপর হামলা করা হয়। নিহত জিল্লুল হক জিলু মহানগর ছাত্রদল নেতা ও ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি ছাতক উপজেলার পালপুর গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে। বর্তমানে জিলুর পরিবার মদিনা মার্কেটে বসবাস করছেন। জিলুরা ৪ ভাই ও দুই বোন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। না গেছে, নিহত জিল্লুর এক সময় সিলেট ছাত্রদলের মিজান (বর্তমানে মাহবুব-জিল্লুর) গ্রুপের রাজনীতি করতেন। সম্প্রতি তিনি ওই গ্রুপ ত্যাগ করে ছাত্রদলের মিরাবাজার গ্রুপে যোগ দেন। গত ৪ মে সুবিদবাজার এলাকায় তাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মী আনোয়ার হোসেন রাজুকে কুপিয়ে আহত করার জন্য জিলু ও তার সহকর্মীদের দায়ি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে রাজুর উপর হামলা ও গ্রুপ ত্যাগ করার কারণে গতকাল তাকে খুন করা হয়।