নূর হোসেনকে না ফেরাতে জোর তদবির
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যামামলার প্রধান আসামি কলকাতায় গ্রেপ্তার নূর হোসেনকে না ফেরাতে জোর লবিং তদবির শুরু হয়েছে। দেশে ফিরিয়ে আনলে অনেক গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে এই ভয়ে অনেক প্রভাবশালী নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিপক্ষে নেমেছেন। সে ফেরত এলে অনেক গডফাদারের মুখোশ উন্মোচন হবে, অনেকের গোপন তথ্য প্রকাশ করে দেবেন- এ চিন্তায় এমনটা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সরকারের ঊর্ধ্বতনরা। গডফাদারদের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলা হয়েছে, সেভেন মার্ডারের মূল আসামি শনাক্ত হয়ে গেছে। নূর হোসেনকে এখন ফেরত এনে কি লাভ? এতে বরং দুর্গন্ধ বেশি ছড়াবে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত থেকে নূর হোসেনকে না ফেরানোর তদবিরের বিষয়টি জেনেছে। নূর হোসেনের বিষয়ে চিঠিপত্র চালাচালিতে দেরি করতেও এ দুই মন্ত্রণালয়ে তদবির হচ্ছে। এমন তদবিরের মধ্যেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
ইতিমধ্যে নূর হোসেনকে ফেরত আনার চিঠি ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মানবজমিনকে জানিয়েছে, নূর হোসেনকে ফেরত না আনতে জোর কদমে তদবির শুরু হয়েছে। তবে সরকার তাকে যে কোন মূল্যে ফিরিয়ে আনবেই। ওই অনুযায়ী আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। ওদিকে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে প্রয়োজনে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি। এই কমিটির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে গত সোমবার সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ একটি ‘অনুরোধপত্র’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধপত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানা গেছে। তার বিষয়ে এর আগে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছিল।
এছাড়া, চিঠিতে বন্দিবিনিময় চুক্তির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নূর হোসেনকে ফেরত প্রদান সংক্রান্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নোট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন নূর হোসেনকে ফেরতের বিষয়ে ভারতের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, নূর হোসেনকে ফেরত পাওয়ার নোট ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের উত্তরের দিকে চেয়ে আছি।
এর আগে গত সোমবার বিকালে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। নূর হোসেনের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে টাইম টু টাইম যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানালেন, কোন চুক্তি অনুযায়ী আসামি বা বন্দিকে অন্য দেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী, অভিযোগপত্র, ওয়ারেন্ট, কোন আইনে গ্রেপ্তার, তার ব্যাখ্যাসংবলিত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট সরকারকে পাঠানোর নিয়ম। প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আমরা দেরি না করে যে সব কাগজপত্র আছে, তা দিয়েই অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের তথ্যসূত্র হিসেবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসামি ফেরত আনার বিষয়টি জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ফিরিয়ে আনার মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। এর আগে গত বছরের ৭ই অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দ-প্রাপ্ত আসামি বিনিময়ের সুযোগ রেখে এ চুক্তি করা হয়।
এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যে বন্দিবিনিময় করতে পারবে। তবে এখন পর্যন্ত এ সব চুক্তির আওতায় কোন আসামি বা বন্দিকে ফেরত আনা হয়নি। ওদিকে গত শনিবার রাতে ভারতের কলকাতা পুলিশ নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কলকাতার দমদম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিমানবন্দরের পাশে কৈখালী এলাকার ইন্দ্রপ্রস্থ আবাসন থেকে একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২৭শে মে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। ফ্রান্সভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি ২৭শে মে বিকালে তাদের ওয়ানটেড পারসনের রেড ওয়ারেন্ট পাতায় নূর হোসেনের নাম সংযুক্ত করে। যদিও রেড ওয়ারেন্টভুক্ত করতে গত ২২শে মে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরে পুলিশ সদর দপ্তর রেড ওয়ারেন্টের জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়।
ওদিকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হলে তাকে দেশেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে যদি তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা না হয় তবে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তা আছে। প্রয়োজন মনে করলে আমরা নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতে যাওয়ার অনুমতি চাইবো।