সবার উদ্বেগের কারণেই স্বামীকে দ্রুত ফিরে পেয়েছি
কোনো অপহরণকেই সাধারণ ঘটনা বলব না। সব অপহরণই ঘৃণ্য। এই ঘটনার পর খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রীয় সমর্থন পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই। বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া, এইচ এম এরশাদ, রওশন এরশাদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের সবার উদ্বেগের কারণেই স্বামীকে দ্রুত ফিরে পেয়েছি।’
স্বামী এ বি সিদ্দিককে ফিরে পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের বাসায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে রিজওয়ানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এত দিন উপলব্ধির চেষ্টা করতাম অন্যের বিষয়। কিন্তু এবার দুঃখটা নিজে বুঝেছি। অন্য অপহরণের ঘটনার বিচার হলে এই ঘটনা ঘটত না। আমি বলব, এ রকম ঘৃন্য ঘটনা এখনই শেষ হোক।’
দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কৃতজ্ঞ বললে সাধারণভাবে বলা হবে। আমি দেশবাসীর কাছে সাংঘাতিকভাবে ঋণী। গণমাধ্যম আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাকে ও আমার পরিবারকে যে ঋণের জালে আবদ্ধ করেছেন, তা আমরা শোধ করতে পারব না।’
‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা ছাড়া আমার স্বামীকে পেতাম না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ,’ যোগ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, রহস্য উন্মোচিত হোক। ঘটনাটি কেন ঘটেছে। সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না। অপহৃত থাকা অবস্থায় তার স্বামী বারবার টাকা আদায়ের কথা শুনছেন অপহরণকারীদের মুখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ মোবাইল ফোন নম্বর চায়নি মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করার জন্য। ফলে এর মধ্যে একটা রহস্য রয়েছে। এই রহস্য উন্মোচিত হোক। ঘৃণ্য এ ঘটনার জন্য কারা দায়ী, এটা জানতে চাই। কারণ এর সঙ্গে প্রত্যেকটা নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত।’
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানান সরকারের প্রতি। পৃথক এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, ‘ভয় পেয়ে বেলার কার্যক্রম গুটিয়ে দেব, এমনটা কখনোই হবে না। প্রশ্নই নেই। আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আমার কাজে নিরাপত্তা দেবে। এটা একটা কৌশল। এভাবে আমাকে বিরত রাখা। হয়তো আমি গুছিয়ে উঠতে সময় নেব। কিন্তু সেটা (কৌশল) কখনোই সফল হতে দেব না।’
সংবাদ সম্মেলনে এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি বদল করা হয় একবার। আনুমানিক তিন ঘণ্টা পর। ফেরি পার হই দুবার। যে বাসায় রাখা হয় সেখানে ভাই পরিচয়ে একজন আসেন রাত ১০টার দিকে। পরের দিন সকালে নাশতা দেন ওরা। দুপুরে ভাত দেন। রাতেও খাই। পরের রাতেও ভাই পরিচয়ের ওই লোকটি আসেন। ওই ভাই আমাকে বলেন, তোকে মেরে ফেললে আমার লস। বাঁচিয়ে রাখলে টাকা পাব। এরপর আমাকে গাড়িতে তোলা হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে গাড়িতে করে মিরপুর আনসার ক্যাম্পের সামনে আমাকে নামিয়ে দেয় তারা। সঙ্গে ৩০০ টাকাও দেয়। সেখান থেকে রিকশায় কাজীপাড়ায় যাই। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসার উদ্দেশে রওনা হই।
অপহরণের পর থেকে মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সব সময় তার চোখ বাঁধা ছিল। ফলে তিনি শুনেছেন। দেখতে পাননি কিছুই বলে বলে জানান এ বি সিদ্দিক। বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দেলপাড়া এলাকার একটি পেট্রোলপাম্পের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় এ বি সিদ্দিককে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় তাকে একটি সিএনজি-চালিত অটোরিকশায় পাওয়া যায়। এর আগে অপহরণকারীরা মিরপুর আনসার ক্যাম্পের সামনে ফেলে রেখে যায় তাকে। সেখান থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত রিকশায় এসে ওই অটোরিকশায় করে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ফিরছিলেন এ বি সিদ্দিক।
এ বি সিদ্দিককে ফিরে পাওয়ার পর পুলিশ শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় কর্মস্থল হামিদ ফ্যাশনে। তিনি এই কারখানার একজন পরিচালক। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঘটনাস্থলে, যেখান থেকে তাকে বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে অপহরণ করা হয়।